উদাহরণ-সহ নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের আলােচনা করাে।

উদাহরণ-সহ নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের আলােচনা করাে। Class 12 | Bengali | 8 Marks

উত্তর

নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচন

তর্কবিদ্যায় বচনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা হয়েছে। সম্বন্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে বচনকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে — [1] নিরপেক্ষ বচন (categorical proposition) এবং [2] সাপেক্ষ বচন (conditional proposition) উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিধেয়ের সম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই বচনের এরূপ শ্রেণিকরণ বা বিভাগ করা হয়েছে। বিষয়টিকে তাই এইভাবে উল্লেখ করা যায়

নিরপেক্ষ বচন (Categorical Proposition)

যে বচনে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের সম্বন্ধ কোনাে শর্তের ওপর নির্ভর করে না, তাকেই বলে নিরপেক্ষ বচন। নিরপেক্ষ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ হল—নিঃ + অপেক্ষ = নিরপেক্ষ। “নিঃ’ শব্দের অর্থ হল ‘নাই’, আর অপেক্ষ শব্দের অর্থ হল শর্ত। সুতরাং, শব্দগত বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নিরপেক্ষ বচনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধটিও কোনাে শর্ত ছাড়াই উল্লেখিত হয়। এরূপ বচনে কোনাে শর্ত ছাড়াই তাই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিধেয়তে স্বাভাবিকভাবে কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করে নেওয়া হয়।

উদাহরণ

1. রাম হয় সৎ

2. রাম নয় অসৎ

ব্যাখ্যা

এই দুটি উদাহরণের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, (1) নং উদাহরণে উদ্দেশ্য তথা রাম সম্পর্কে বিধেয় তথা সৎ বিষয়টিকে কোনাে শর্ত ছাড়াই স্বাভাবিকভাবেই স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আবার (2) নং । উদাহরণটিতে উদ্দেশ্য তথা রাম সম্পর্কে বিধেয় তথা অসৎ শব্দটিকে কোনাে শর্ত ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং এই দুটি বচনই নিরপেক্ষ বচন রূপে গণ্য |

সাপেক্ষ বচন (Conditional Proposition)

তর্কবিদ্যায় নিরপেক্ষ বচনের বিপরীতে সাপেক্ষ বচনের উল্লেখ করা হয়েছে। যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধ কোনাে শর্তের ওপর নির্ভর করে, সেই বচনকেই বলা হয় সাপেক্ষ বচন | সাপেক্ষ শব্দটির শব্দগত বিশ্লেষণ হল—স + অপেক্ষ = সাপেক্ষ।‘স’ শব্দটির অর্থ হল সহ বা যুক্ত আর অপেক্ষ শব্দটির অর্থ হল শর্ত অর্থাৎ, যে বচন শর্তযুক্ত তাকেই বলা হয় সাপেক্ষ বচন। এরূপ বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধটি তাই একটি শর্তের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। কোনাে শর্ত ছাড়া উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সম্বন্ধটিকে তাই এখানে কোনােভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না।

উদাহরণ

1. যদি বৃষ্টি পড়ে তবে মাটি ভেজে। 

2. হয় অমৃতা কলকাতা যাবে অথবা দিল্লি যাবে।

ব্যাখ্যা

এই দুটি উদাহরণের মধ্যে (1) নং উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, মাটি ভেজা নামক বিষয়টি বৃষ্টি পড়া নামক শর্তের ওপর নির্ভরশীল। আবার (2) নং উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, অমৃতার কলকাতা যাওয়া এবং দিল্লি যাওয়ার বিষয় দুটিও শর্তাধীন। অর্থাৎ, কলকাতা যাওয়া নির্ভর করে দিল্লি না যাওয়ার ওপর, আবার দিল্লি যাওয়া নির্ভর করে কলকাতা না যাওয়ার ওপর। সুতরাং এই দুটি বচনই সাপেক্ষ বচনরূপে গণ্য।

তর্কবিদ্যায় সাপেক্ষ ও নিরপেক্ষ চনের গুরুত্ব

তকবিদ্যার মূল কাজ হল যুক্তি নিয়ে আলােচনা করা। এই যুক্তি গঠিত হয়। নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ—এই উভয় প্রকার বচন দিয়েই। শুধুমাত্র নিরপেক্ষ বচন 

দিয়েও যুক্তি গঠিত হতে পারে, আবার শুধুমাত্র সাপেক্ষ বচন দিয়েও যুক্তি গঠিত হতে পারে। আবার নিরপেক্ষ এবং সাপেক্ষ—এই উভয় প্রকার বচন দিয়েও যুক্তি গড়ে উঠতে পারে৷ বচনগুলির প্রকৃতির ওপরই যুক্তির প্রকৃতি নিণীত হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, তর্কবিদ্যায় যুক্তি গঠনের ক্ষেত্রে সাপেক্ষ ও নিরপেক্ষ—উভয় প্রকার বচনেরই এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “উদাহরণ-সহ নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের আলােচনা করাে।”

Leave a Comment