টীকা লেখাে: কাকতালীয় দোষ। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলােচনা করাে।

টীকা লেখাে: কাকতালীয় দোষ। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলােচনা করাে। Class 12 | Education (আরোহমূলক দোষ) | 8 Marks

উত্তর:-

কাকতালীয় দোষ

কাকতালীয় দোষ সম্পর্কে আলােচনা করতে গেলে কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়ােজন। কারণের গুণগত লক্ষণে বলা হয়েছে যে, কারণ হল শর্তহীন, অপরিবর্তনীয় অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা | অর্থাৎ, কার্যের যে-কোনাে অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনাকেই কারণ বলা যায় না। কোনাে কার্যের ঠিক আগের ঘটনাটি অনেক সময় আকস্মিকও হতে পারে | আর ঘটনাটি যদি আকস্মিক হয় তবে তা কখনােই শর্তহীন ও অপরিবর্তনীয় রূপে গণ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে কার্যের ঠিক আগের ওই ঘটনাটিকে যদি কার্যটির কারণ বলে ধরা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় কাকতালীয় CHIA (fallacy of post hoc ergo propter hoc) |

কাকতালীয় দোষের হেতু

কাকতালীয় দোষটির উদ্ভব হয়েছে এভাবেই যে, তাল গাছের ওপর দিয়ে কাক উড়ে যাওয়ায় তালটি মাটিতে পড়ে গেল। সেকারণেই কাক উড়ে যাওয়াকে তাল পড়ার কারণ বলে মনে করা হয়েছে | সাধারণত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অবাস্তব কল্পনাই হল এই দোষের মূলভিত্তি | আবার, অনেক সময় দেখা যায় যে, ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়ােগের ফলেও এই ধরনের দোষের উদ্ভব হয়। ব্যতিরেকী পদ্ধতি যদি পরীক্ষণের ওপর নির্ভর না করে পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল হয়, তখন তার অপপ্রয়ােগে অনেক সময় এই ধরনের দোষ ঘটে থাকে।

উদাহরণ

মাদুলি ধারণ করার পরই তার রােগ সারল। সুতরাং, মাদুলি ধারণই হল তার রােগ সারার কারণ। আরােহযুক্তিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকারে উপস্থাপিত করলে পাই,

উদাহরণ

পূর্ববর্তী ঘটনাঅনুবতী ঘটনা
মাদুলি ধারণ হয়নিরােগ সারেনি
মাদুলি ধারণ হয়েছেরােগ সেরেছে
.:. মাদুলি ধারণ রােগ সারার কারণ

ব্যাখ্যা

এখানে এই আরােহযুক্তিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকারে সাজিয়ে পর্যবেক্ষণের সাহায্যে মাদুলি ধারণ ও রােগ সারার মধ্যে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মাদুলি ধারণ কখনােই রােগ সারার প্রকৃত কারণ নয়। যদিও মাদুলি ধারণ রােগ সারার পূর্ববর্তী ঘটনারূপে গণ্য, তবু তা নেহাতই এক আকস্মিক ঘটনা| এরূপ ঘটনাটি তাই নিয়ত ও শর্তান্তরহীন নয়| এ হল আমাদের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারপ্রসূত চিন্তামাত্র| এক্ষেত্রে তাই কাকতালীয় দোষ-এর উদ্ভব হয়েছে।

ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমুলক দোষের প্রকার

পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের অক্ষমতা বা অসুস্থতার কারণে কোনাে বস্তুকে ঠিক সেই বস্তুরূপে পর্যবেক্ষণ না করে। অন্য বস্তুরূপে পর্যবেক্ষণ করে থাকি। যেমন—আমরা অনেক সময়ই কোনাে ছায়াকে কায়ারূপে, দড়িকে সাপরূপে এবং চলন্ত ট্রেনে গাছপালা প্রভৃতিকে ছুটন্তরূপে দেখে থাকি|এরূপ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনাে অনুমান গঠন করা হয় তবে সেই অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের দোষের নাম হল ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ। এই ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়[1] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of individual mal-observation) এবং [2] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of universal mal-observation)। এই দুধরনের দোষের বিষয় দুটিকে উদাহরণসহ নীচে উল্লেখ করা হল । 

[1] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ ; অনুমান গঠন করতে গিয়ে যদি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাকে ব্যক্তিবিশেষ ভুল হিসেবে দেখে, তবে সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ। এখানে। পর্যবেক্ষণগত ভুলটি হল কোনাে একজন ব্যক্তির, সার্বিকভাবে কোনাে ভ্রান্তি নয়। যেমন—দূরের কোনাে গাছের কাণ্ডকে দেখে মানুষ মনে করা, কোনাে মহিলাকে দেখে পুরুষ মনে করা ইত্যাদি।

[2] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ ; কোনাে ঘটনার পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনাে ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্তি না হয়ে যদি তা কোনাে সার্বিক নীতির ফলে ভ্রান্তি হয়, তবে সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় সার্বিক ভ্রান্তি পর্যবেক্ষণ। এখানে ব্যক্তিবিশেষের কোনাে ভূমিকা থাকে না। এখানে থাকে সঠিক কোনাে নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, জলপূর্ণ কাচের পাত্রে ডােবানাে কোনাে লাঠিকে বাঁকা দেখার ভ্রান্তি, সমউচ্চতাসম্পন্ন পরপর বাড়িগুলিকে ক্রমান্বয়ে বেশি উচ্চতাসম্পন্নরুপে দেখার ভ্রান্তি ইত্যাদি।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment