সৈয়দ মুজতবা আলি – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা সৈয়দ মুজতবা আলি – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ

সৈয়দ মুজতবা আলি

বাংলা সাহিত্যে নিজস্ব রচনাশৈলী এবং বক্তব্যের মাধ্যমে যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন লেখক নিজেদের স্বতন্ত্র জায়গা অধিকার করতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে সৈয়দ মুজতবা আলি অন্যতম।

সৈয়দ মুজতবা আলির জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত বাংলাদেশের শ্রীহট্ট জেলার করিমগঞ্জে। তাঁর পিতার নাম ছিল সৈয়দ সিকান্দার আলি। সিলেট গভর্নমেন্ট স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের প্রথম পর্ব কাটে। বিশ্বভারতী থেকে তিনি স্নাতক হন এবং আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি আফগানিস্তানের কাবুল সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ফরাসি ও ইংরেজির অধ্যাপনা শুরু করেন। কিন্তু রাজনৈতিক গণ্ডগোলের জন্য তিনি আফগানিস্তান ত্যাগ করে জার্মানিতে যান। সেখানে বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি বরোদার কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে সৈয়দ মুজতবা আলি Indian Council for Cultural Relations-এর সেক্রেটারি হন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে কর্মরত ছিলেন। তারপরে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সৈয়দ মুজতবা আলি স্থায়ীভাবে সেখানে চলে যান। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।

আফগানিস্তানে যাত্রার কাহিনি নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলির লেখা ‘পথে প্রবাসে’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভ্রমণকাহিনি। এ ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ পঞ্চতন্ত্র (১ম ও ২য়), চাচাকাহিনী, ময়ূরকণ্ঠী, অবিশ্বাস্য, জলে-ডাঙায়, ধূপছায়া, দ্বন্দ্ব-মধুর, শবনম, ভবঘুরে ও অন্যান্য, বহু বিচিত্রা, রাজা-উজীর, মুসাফির, গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন।

সৈয়দ মুজতবা আলি তাঁর সাহিত্যে গদ্যরচনার এক নিজস্ব ধরনের জন্ম দিয়েছিলেন। বহুভাষাবিদ এই লেখক ১৬টি ভাষা জানতেন এবং লেখক বাংলা গদ্যে অনায়াসে মিশিয়ে দিয়েছিলেন সংস্কৃত, আরবি, ফারসি শব্দকে। গুরুগম্ভীর বিষয়ের মধ্যে হালকা মেজাজ, লঘু কৌতুকের অনবদ্য মিশেল ঘটিয়েছেন এই লেখক। এই মজলিশি ধরন সৈয়দ মুজতবা আলির একেবারে নিজস্ব। সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় সৈয়দ মুজতবা আলির রচনারীতি সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন— “প্রসাদগুণ বিশিষ্ট, সত্যকার হাস্যরসোজ্জ্বল, লঘু শৈলীর অথবা ভাবগম্ভীর চলতি বাংলা ভাষায় তিনি যে অসাধারণ দখল তাঁর লেখায় দেখিয়েছেন, সেটি তাঁর মনের স্বাভাবিক শক্তির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্নেহ ও প্রসাদ উভয়ের গঙ্গা-যমুনা মিলনের ফল।”

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment