Bengali Bangla Prabandha Rachana আমার প্রিয় খেলোয়াড় প্রবন্ধ রচনা | Class 10 | Class 12 | Amar Priyo Kheloyar Bangla Rachana

আমার প্রিয় খেলোয়াড় প্রবন্ধ রচনা | Class 10 | Class 12 | Amar Priyo Kheloyar Bangla Rachana

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, তোমাদের সুবিধার্থে আমার প্রিয় খেলোয়াড় নিয়ে প্রবন্ধ রচনা এখানে লিখে দেওয়া হল। সুন্দর ভাবে পয়েন্ট করে রচনাটি লেখা হয়েছে, আশা করি সবার ভালো লাগবে। ধন্যবাদ

🔹সূচনা :

সাহিত্য ও খেলার জগতে এমন কিছু চরিত্র থাকে, যারা শুধুমাত্র কাহিনীতে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের জীবনে অনুপ্রেরণা সঞ্চার করে। মতি নন্দীর কালজয়ী উপন্যাস ‘কোনি’-এর প্রধান চরিত্র কোনি তেমনই এক অনুপ্রেরণাদায়ী ‘খেলোয়াড়। খেলার জগতে তার পরিচিতি একজন সাঁতারু হিসেবে, কিন্তু তার জীবনযুদ্ধ তাকে একজন আদর্শ সংগ্রামী চরিত্রে পরিণত করেছে।

🔹সাধারণ থেকে অসাধারণ :

কোনি ছিল কলকাতার বস্তির এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। জীবনে তার ছিল কেবল বঞ্চনা আর ক্ষুধা। কিন্তু তার মধ্যে ছিল ইস্পাত কঠিন মনোবল এবং সাঁতারের প্রতি গভীর ভালোবাসা। তার এই সুপ্ত প্রতিভাকে আবিষ্কার করেন দরিদ্র কিন্তু স্বপ্নাতুর সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিদদা (ক্ষিদ্দা)।

🔹ক্ষিদদার শিষ্যত্ব ও কঠোর প্রশিক্ষণ :

ক্ষিদদা কোনির মধ্যে লুকিয়ে থাকা চ্যাম্পিয়নকে দেখতে পেয়েছিলেন। শুরু হয় তার কঠোর এবং নির্মম প্রশিক্ষণ। “ফাইট কোনি, ফাইট!” — ক্ষিদদার এই মন্ত্রটি ছিল কোনির জীবনের পাথেয়। প্রতিকূল পরিস্থিতি, ক্ষুধা, সমাজের উপেক্ষা, এমনকি ক্লাব কর্তৃপক্ষের ষড়যন্ত্র—কোনো কিছুই তার পথ আটকাতে পারেনি। ক্ষিদদার অটল বিশ্বাস এবং কোনির অবিচল নিষ্ঠা এই অসম্ভব যাত্রাকে সম্ভব করে তুলেছিল।

🔹জীবন-যুদ্ধ ও খেলার ময়দান :

কোনির উপন্যাসে তার জীবন ছিল কেবলই এক অবিরাম সংগ্রাম। উত্তর কলকাতার বস্তির স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার ঘরে দিনের পর দিন তার কাটত, যেখানে দুবেলা পেট ভরে ভাত জোগাড় করাই ছিল এক বিরাট যুদ্ধ। ছেঁড়া পোশাক আর অপুষ্টি তার নিত্যসঙ্গী, আর চারিদিকে শুধু অভাবের কষাঘাত। সেই গুমোট পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে সে ছুটত গঙ্গার ঘাটে, কিন্তু দারিদ্র্যের ছাপ তার চোখে-মুখে, তার শরীরের দুর্বলতায় স্পষ্ট।

➤ ক্ষিদে আর বঞ্চনার যন্ত্রণা নিয়ে বড় হওয়া সেই মেয়েটির চোখে ছিল এক অসম্ভব জেদ— সাঁতার কেটে সে যেন এই দুঃসহ জীবনটাকেই অতিক্রম করতে চেয়েছিল। জলের মধ্যে সে হয়তো ক্ষণিকের জন্য ভুলে যেত তার ক্ষুধার্ত পেটের জ্বালা, তার ভাই-বোনের জন্য কিছু করতে না পারার অসহায়তা। তার স্বপ্নগুলো ছিল আকাশছোঁয়া, কিন্তু বাস্তবতা ছিল বস্তির নোংরা গলির মতোই সংকীর্ণ ও কঠিন। দারিদ্র্যের বিষাক্ত ছোবল তার প্রতিভাকে বারবার গ্রাস করতে চেয়েছিল, তবুও সে হার মানেনি।কোনির কাছে সাঁতার কেবল একটি খেলা ছিল না; এটি ছিল তার জীবনের যুদ্ধ। প্রতিটি প্রতিযোগিতায় সে তার দারিদ্র্য, অপমান এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তার জয় কেবল স্বর্ণপদক জয় নয়, এটি ছিল সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে, প্রতিভা কোনো পরিচয়ের ধার ধারে না। জল যেমন বাঁধ মানে না, তেমনই কোনির প্রতিভা কোনো বাধা মানেনি।

🔹কোনির আদর্শ :

কোনি আমাদের শেখায় —
অদম্য জেদ: হার না মানার মানসিকতা।
আত্মবিশ্বাস: নিজের ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখা।
গুরু-শিষ্য সম্পর্ক: ক্ষিদদার প্রতি তার শ্রদ্ধা এবং তার শেখানো মূল্যবোধ
সংগ্রাম: প্রতিকূলতাকে জয় করার সাহস।

🔹উপসংহার :

কোনি চরিত্রটি দেখায় যে, একজন সত্যিকারের খেলোয়াড় শুধু মাঠে বা জলে দক্ষতা দেখায় না, সে তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করে যে ইচ্ছেশক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। “ফাইট কোনি, ফাইট!” মন্ত্রটি শুধু সাঁতারের জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি সংগ্রামের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই কোনি শুধুমাত্র একজন প্রিয় সাঁতারু নয়, সে আমাদের কাছে এক প্রিয় অনুপ্রেরণা এবং আদর্শ খেলোয়াড়।

আরো পড়ুন

তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় উপন্যাস – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় ঋতু – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment