বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনকালে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা কী ছিল? অসহযােগ আন্দোলনে নারীসমাজের যােগদানের প্রকৃতিকে তুমি কীভাবে চিহ্নিত করবে?

প্রশ্ন – বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনকালে সরলাদেবী চৌধুরানির ভূমিকা কী ছিল? অসহযােগ আন্দোলনে নারীসমাজের যােগদানের প্রকৃতিকে তুমি কীভাবে চিহ্নিত করবে? ৩ + ৫ = ৮ | Class 10

উত্তর:

প্রথম অংশ : বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনে সরলাদেবী চৌধুরানি : সরলাদেবী চৌধুরানি বঙ্গভঙ্গের আগে ও বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলনের সময়ে নারীজাগরণ ও জাতিজাগরণের ক্ষেত্রে ছিলেন এক উল্লেখযােগ্য ব্যক্তিত্ব। তার কৃতিত্বের বিভিন্ন দিকগুলি হল—

১) প্রতাপাদিত্য উৎসব : বঙ্গভঙ্গ বাস্তবায়নের পর তিনি ১ বৈশাখ তারিখে প্রতাপাদিত্য উৎসব’-এর প্রচলন করেন। মােগল শাসন-বিরােধী বাঙালি বীর প্রতাপাদিত্যের জীবনী পাঠ, কুস্তি ও তলােয়ার, বক্সিং ও লাঠি চালনা ছিল এই উৎসবের অঙ্গ।  

২) জাতীয়তার আদর্শ প্রচার : বঙ্গভঙ্গের আগেই ‘ভারতী’ নামক পত্রিকায় তাঁর লেখনীর মাধ্যমে জাতীয়তার আদর্শ প্রচারের পাশাপাশি তিনি ইংরেজদের হাতে নিগৃহীত ভারতীয়দের তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানানাের ঘটনাও তুলে ধরেন। 

৩) নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা : ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেশনকালে (১৯১০ খ্রি.) তিনি একটি নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলন আহ্বান করেন। এই সম্মেলনের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডল’ নামক নারী সংগঠন। . 

দ্বিতীয় অংশ, অসহযােগ আন্দোলনে নারীসমাজ : অসহযােগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দিকগুলি হল— 

১) বয়কট ও স্বদেশি : মহাত্মা গান্ধি প্রাথমিকভাবে নারীদের সীমিত কর্মসূচিতে অর্থাৎ বিদেশি দ্রব্য বয়কট ও স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণের জন্য যােগ দিতে আহ্বান জানালে। তার আহ্বানে ভারতের হাজার হাজার নারী যােগদান করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরােজিনী। নাইডু, কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখর নেতৃত্বে নারীরা পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করেন। 

২) বিক্ষোভ কর্মসূচি : ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর-এ ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ বা ইংল্যান্ডের যুবরাজ ভারত সফরে এলে।বােম্বাই ও কলকাতা শহরে নারী বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস নেতা চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী ও তার বােন উমিলা সেবা প্রকাশ্য রাজপথে যুবরাজ বিরােধী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলে তাদের জেলবন্দি করা হয়। 

৩) গঠনমূলক কর্মসূচি : শহরের বেশ কয়েকজন নেত্রী গ্রামে গিয়ে অসহযােগ আন্দোলনকে সফল করার জন্য প্রচার চালান। এ ছাড়া বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচি, যেমন—চরকায় সুতাে কাটা ও কাপড় বােনার জন্য উৎসাহিত করা হয়। 

৪) নারী সংগঠন : অসহযােগ আন্দোলনের পূর্বেই সরােজিনী। নাইডুর নেতৃত্বে ভারতীয় মহিলা সমিতি (১৯১৭ খ্রি.) গড়ে উঠেছিল। অনুরূপভাবে অসহযােগ আন্দোলনকালে কলকাতায় কর্মমন্দির’, বাসন্তী দেবীর প্রতিষ্ঠিত ‘নারী’ ও (১৯২১ খ্রি.) নারী-সত্যাগ্রহ সমিতির মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা সভাসমিতি, পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করে।

মূল্যায়ন : অসহযােগ আন্দোলনের কয়েকটি সীমাবদ্ধতা ছিল, যেমন— প্রথমত, নারীর অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনে মুসলমান নারীদের যােগদান ছিল অত্যন্ত অল্প। তবে অসহযােগ আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে গঠনমূলক। কাজের প্রসার ঘটে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment