বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার নীতি গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে

বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার নীতি গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে

উত্তর : 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার নীতি : 

বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসকল নীতি মেনে চলা হয়, সেগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল —

[1] স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন : বিদ্যালয়ের পরিকাঠামাে অনুযায়ী যেসকল সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের জন্য পরিকল্পিত হয়, তার সবগুলিই সকল শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণযােগ্য হয় না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী আপন পছন্দ অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনাে বিশেষ কার্যাবলি বেছে নিতে পারে।

[2] সময়তালিকাতে অন্তর্ভুক্তকরণ : আধুনিক ধারণা অনুযায়ী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পাঠক্রমিক কার্যাবলিরই অংশ। এগুলি শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তাই বিদ্যালয়ের সময়তালিকাতে এগুলি গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। বিদ্যালয়ের সময়তালিকার বাইরে এগুলিকে পৃথকভাবে সংগঠিত করলে, এর গুরুত্ব হ্রাস পাবে এবং এর আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।

[3] উপযুক্ত গুরুত্ব প্রদানের ব্যবস্থা : বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করতে গিয়ে পাঠক্রমিক কার্যাবলিকে অবহেলা করা চলবে না। অর্থাৎ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে সঠিক গুরুত্বদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অতিমাত্রায় গুরুত্ব প্রদানের প্রয়ােজন নেই।

[4] যােগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার ওপর দায়িত্ব অর্পণ : বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা সব ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনায় দক্ষ নন। তাই আগ্রহী এবং পারদর্শী শিক্ষক-শিক্ষিকার ওপর নির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ করা দরকার। 

[5] পারদর্শীদের মর্যাদাদানের ব্যবস্থা : বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠিত করার সময় অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশেষ পারদর্শিতা বা ব্যুৎপত্তি লক্ষ করা যায়। ওই সমস্ত শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত মর্যাদাদানের ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে তারা ওই বিষয়ে আরও উৎসাহিত হবে। 

[6] শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা : বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার সময় শিক্ষার্থীরা যাতে সুশৃঙ্খলভাবে কাজে যােগদান করে এবং তা সম্পাদন করে, সে-বিষয়টিও সঠিকভাবে দেখা দরকার। 

[7] বাধ্যতামূলক করার ওপর গুরুত্ব প্রদান: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আগ্রহ ও চাহিদা অনুযায়ী কোনাে-না-কোনাে কার্যে শিক্ষার্থী যাতে অংশ নেয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

[8] সমাজের প্রয়ােজনের প্রতি দৃষ্টিদান : বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি যাতে আঞ্চলিক প্রয়ােজনের বা সমাজের প্রয়ােজনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, সে-বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। 

[9] কার্যাবলির মূল্যায়নের ব্যবস্থা : বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করলেই চলবে না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিভাগের কাজে কতখানি দক্ষতা বা পারদর্শিতা অর্জন করছে, তার জন্য যথাযথ মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তােলা দরকার। মূল্যায়নের ব্যবস্থা না-থাকলে এর উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হবে। 

[10] অভিভাবক-অভিভাবিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থা : বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি এবং ওই কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার বিষয় সম্পর্কে প্রত্যেক অভিভাবক-অভিভাবিকাকে অবহিত করে তুলতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে অভিভাবক-অভিভাবিকা যুক্ত হলে ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক বিকাশ আরও ভালােভাবে ত্বরান্বিত হবে। 

[11] অন্যান্য নীতি : (i) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত যে-কোনাে কাজ শুরু করলে, তা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কোনােভাবেই বিরত থাকা চলবে না বা ওই কাজকে বাতিল করা যাবে না। (ii) সহজ ও সরল কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে জটিল ও কঠিন কর্মসূচির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। (iii) জাতিধর্মনির্বিশেষে সকল ছাত্রছাত্রী যাতে কোনাে-না-কোনাে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযােগ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment