বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | Bonbhojoner Bapar Question Answer | Class 8 | Wbbse

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর লেখা বনভোজনের ব্যাপার গল্প রয়েছে। গল্পের শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

বনভোজনের ব্যাপার

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়


হাতে কলমে

১.১ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কোন বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা ?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের টেনিদা চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা। 

১.২ তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম, ‘শিলালিপি’ ও ‘লালমাটি’। 

২.১ বনভোজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে টেনিদা, হাবুল, প্যালা ও ক্যাবলার মধ্যে বনভোজনের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল।

২.২ বনভোজনের জায়গা কোথায় ঠিক হয়েছিল?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে, বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটি স্টেশন পরে ক্যাবলার মামার বাগানবাড়িতে বনভোজনের আয়োজন হয়েছিল।

২.৩ বনভোজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে?
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে, শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে চেপে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পর নামতে হবে। তারপর পায়ে হেঁটে প্ৰায় মাইল খানেক গেলে পৌঁছনো যাবে ক্যাবলার মামার বাগানবাড়ি অর্থাৎ বনভোজনের জায়গায় ।

২.৪ রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব কে নিয়েছিল?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব নিয়েছিল প্যালা।

২.৫ বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী সাবাড় করেছিল বাঁদরের দল।

২.৬ কোন খাবারের কারণে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হলো?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে বনভোজনের খাবার নানা কারণে হাতছাড়া হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পাকা জলপাই খাওয়ার কারণে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হল।

৩. নীচের শব্দগুলির সন্ধিবিচ্ছেদ করো :

মোগলাই, রান্না, বৃষ্টি, পরীক্ষা, আবিষ্কার

উত্তর:-
মোগলাই = মোগল + আই
রান্না = রাঁধ + না
বৃষ্টি = বৃষ্ + তি
পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা
আবিষ্কার = আবিঃ + কার

৪. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো :

বিচ্ছিরি, প্ল্যান-ট্যান, লিস্টি, ভদ্দর, ইস্টুপিড

উত্তর:-
বিশ্রী > বিচ্ছিরি (সমীভবন)
প্ল্যান > ট্যান (অনুকার শব্দ)
লিস্ট > লিস্টি (অন্ত্যস্বরাগম)
ভদ্র > ভদ্দর (পরাগত সমীভবন)
স্টুপিড > ইস্টুপিড (আদিস্বরাগম)

৫.১ আর সে গাট্টা, ঠাট্টার জিনিস নয়— জুতসই লাগলে স্রেফ গালপাট্টা উড়ে যাবে।
উত্তর:-
এই বাক্যে ‘ট্টা’ ধ্বনিটি একাধিকবার বাক্যে প্রযুক্ত হয়েছে। একে বৃত্তানুপ্রাস অলংকার বলে, যার প্রয়োগ এখানে লক্ষণীয় I

৫.২ দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা।
উত্তর:-
‘দ্রাক্ষাফল’ ও ‘অতিশয়’ শব্দদুটি তৎসম শব্দ। আবার খাট্টা শব্দটি হিন্দি শব্দ। অর্থাৎ একই বাক্যের মধ্যে তৎসম ও হিন্দি শব্দের সহাবস্থানের ফলে এখানে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে।

৫.৩ আহা— হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন ?
উত্তর:-
উদ্ধৃত বাক্যের ‘চৈইত্যা’ ও ‘যাইত্যাছ’ শব্দবন্ধে অপিনিহিতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এই ধরনের বাক্য বঙ্গালি উপভাষায় বেশি প্রযুক্ত হতে দেখা যায়।

৫.৪ এক চড়ে গালের বোম্বা উড়িয়ে দেব।
উত্তর:-
‘বোম্বা’ শব্দের আক্ষরিক কোনো অর্থ নেই। এটাকে ছেলেছোকড়াদের ভাষা বা রোয়াকের ভাষা বলা যেতে পারে। অন্যদের ওপর টেনিদার কর্তৃত্ব প্রকাশের জন্য শব্দটি যথাযথ।

৬. ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো :

বনভোজন, দলপতি, বেরসিক, দ্রাক্ষাফল, রেলগাড়ি

উত্তর:-
বনভোজন = বনে ভোজন-অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস।
দলপতি = দলের পতি-সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
বেরসিক = বে (নয়) রসিক- না তৎপুরুষ সমাস।
দ্রাক্ষাফল = দ্রাক্ষা নামক ফল–মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস ।
রেলগাড়ি = রেল বাহিত গাড়ি—মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।

৭.১ লাফিয়ে উঠে টেনিদা বাগানের দিকে ছুটল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর:-
লাফিয়ে উঠে টেনিদা যেদিকে ছুটল সেদিকে বাগান।

৭.২ চোখের পলকে বানরগুলো গাছের মাথায়। (জটিল বাক্যে)
উত্তর:-
যখন চোখের পলক পড়ল তখন বানরগুলো গাছের মাথায় ৷

৭.৩ দুপুরবেলায় আসিস। বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে। (একটি সরল বাক্যে)
উত্তর:-
বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে দুপুরবেলা আসিস।

৭.৪ ইচ্ছে হয় নিজে বের করে নাও। (জটিল বাক্যে)
উত্তর:- যদি ইচ্ছে হয়, তবে নিজে বের করে নাও।

৭.৫ টেনিদা আর বলতে দিলে না। গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল। (একটি সরল বাক্যে)
উত্তর:-
টেনিদা আর বলতে না দিয়ে গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল।

৮. নীচের শব্দগুলির সমার্থক প্রবচনগুলি খুঁজে বের করো এবং তা দিয়ে বাক্যরচনা করো:

চুরি, নষ্ট হওয়া, পালানো, গোলমাল করে ফেলা, লোভ দেওয়া, চুপ থাকা

উত্তর:-
চুরি (হাত সাফাই করা) = রমেশ দিদিমার ঘর থেকে আমের আচার হাতসাফাই করেছিল।
নষ্ট হওয়া (বারোটা বাজা) = রামু খিচুড়ির বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল।
পালানো (হাওয়া হওয়া) = আম চুরি করে ধরা পড়ার ভয়ে অনিক নিমেষে হাওয়া হয়ে গেল।
গোলমাল করে ফেলা (তালগোল পাকানো) = প্রিয়াঙ্কা টিভি দেখতে দেখতে অঙ্ক করতে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে।
লোভ দেওয়া (নজর দেওয়া) = অপরের সম্পত্তিতে নজর দেওয়া ভালো নয়।
চুপ থাকা (মুখে কুলুপ আঁটা) = মার খাওয়ার ভয়ে রাতুল স্যারের সামনে মুখে কুলুপ এটে রইল।

কলম্বাস, লেডিকেনি, বিরিয়ানি, ইউরেকা

উত্তর:-

কলম্বাস : ক্রিস্টোফার কলম্বাস ইতালির জেনোয়া নগরে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি ছিলেন বিখ্যাত ইউরোপীয় নাবিক। কলম্বাস ভারতবর্ষ ও তার নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জের বর্ণনা পেয়ে সেই দ্বীপগুলিতে যাওয়ার সংকল্প নেন। কলম্বাস কিউবা আবিষ্কার করেন। তবে আমেরিকায় নামার পর কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি ভারতে পৌঁছেছেন।

লেডিকেনি : লেডিকেনি বা লেডি কেনি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের একটি জনপ্রিয় ভারতীয় মিষ্টি। এটি একটি হালকা ভাজা লালচে-বাদামী গোলাকার মিষ্টি যা ছানা এবং ময়দা দিয়ে তৈরি এবং চিনির তরল রসের মধ্যে ভেজানো থাকে। ১৮৫৬-৬২ সালের মধ্যে ভারতে গভর্নর-জেনারেল চার্লস ক্যানিংয়ের স্ত্রী লেডি ক্যানিংয়ের নামে নামকরণ করা হয় মিষ্টির এবং সকলের কাছে মিষ্টিটি লেডিকেনি নামে পরিচিত হয়।

বিরিয়ানি : বিরিয়ানি বা বিরানি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে প্রচলিত এক বিশেষ প্রকারের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি, গরম মশলা এবং মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাধ্যমে উৎপত্তি লাভ করে। এটি সাধারনত বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশিত হয়।

ইউরেকা : শব্দটি গ্রিক ‘heureka’ থেকে এসেছে। যার অর্থ—“আমি খুঁজে পেয়েছি। ইংরেজিতে I have found it. সাধারণত কোনো বিশেষ কিছু হঠাৎ আবিষ্কৃত হলে, আমরা এই শব্দটি প্রয়োগ করে থাকি। আর্কিমিডিস একবার একটি চৌবাচ্চায় নামার সঙ্গে সঙ্গে তার কিছুটা জল উপচে পড়ে যায়, তিনি বুঝতে পারেন শরীরের আয়তনের সমপরিমাণ জল চৌবাচ্চা থেকে অপসারিত হয়েছে। তখন তিনি ‘ইউরেকা’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন, যার অর্থ হল ‘পেয়েছি। পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শব্দভাণ্ডারে এই শব্দটি বহুলভাবে প্রচলিত হয়।

১০.১ বনভোজনের প্রথম তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল? তা বাতিল হলো কেন ?
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে বনভোজনের জন্য প্রথমে যে তালিকাটি তৈরি হয়েছিল তাতে ছিল বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, কোপ্তা, দু রকমের কাবাব ও মাছের চপ।

প্রথম তালিকার খাবারগুলো তৈরি করতে গেলে বাবুর্চি, চাকর, একটা মোটর লরি, আর দুশো টাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু চারজন মিলে চাঁদা উঠেছিল মাত্র দশ টাকা ছ – আনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রথম তালিকাটি বাদ দেওয়া হয়।

১০.২ বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল এবং কে কী কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল?
উত্তর:- নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় ছিল খিচুড়ি, আলুভাজা, পোনা মাছের কালিয়া, আমের আচার, রসগোল্লা, লেডিকেনি ও রাজহাঁসের ডিমের ডালনা। রাজহাঁসের ডিম জোগাড়ের দায়িত্ব ছিল প্যালার উপর। ক্যাবলাকে আলু ভাজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পোনা মাছের কালিয়া রাঁধার দায়িত্বে ছিল প্যালা। দিদিমার ঘর থেকে আমের আচার চুরি করে নিয়ে আসার কথা ছিল হাবুলের। রসগোল্লা ও লেডিকেনি ধারে ম্যানেজ করা হবে এমনটা ঠিক হয়েছিল।

১০.৩ প্যালার রাজহাঁসের ডিম আনার ঘটনাটির বর্ণনা দাও।
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনতে গিয়েছিল ভন্টাদের বাড়ি। পাড়ায় ভন্টাদের বাড়িতে গোটাকয়েক রাজহাঁস ছিল। একারণে দু-আনার পাঁঠার ঘুগনি আর ডজনখানেক ফুলুরি খাইয়ে ভন্টাকে হাত করে প্যালা। তবে শর্ত ছিল প্যালাকে নিজের হাতে ডিম বের করে নিতে হবে। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা মতো ভন্টার বাবা ও মেজদা অফিসে গেলে দুপুরবেলা ভন্টাদের বাড়ি যায় প্যালা। উঠোনে কাঠের বাক্সের ভিতরে সার সার খুপরি। দুটো রাজহাঁস সেখানে ডিমে তা দিচ্ছিল। প্যালা ডিমের জন্য বাক্সের ভিতরে হাত ঢোকাতেই রাজহাঁস দিল তার হাতে কামড়ে। যন্ত্রনায় প্যালা চিৎকার করে উঠলে ভন্টার মা সেখানে চলে আসে প্যালা চোঁচা দৌড় লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এরফলে প্যালা আর রাজহাঁসের ডিম জোগাড় করতে না পেরে গোটাকয়েক মাদ্রাজি ডিম কেনে বনভোজনের জন্য।

১০.৪ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের কী কী বিপদ ঘটেছিল ?
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে ট্রেন থেকে নেমে প্রায় মাইলখানেক হেঁটে গেলে ক্যাবলার মামার বাগানবাড়ি। সেখানেই হবে বনভোজন। তবে আগের রাত্রে বৃষ্টি হওয়ায় এবং রাস্তা কাঁচা এঁটেল মাটির হওয়ায় তা খুবই পিচ্ছিল ছিল। একারণে তিন পা যেতে -যেতেই হাবুল আছাড় খেল ও তার হাতের ডিমের পুঁটলি কুঁকড়ে গিয়ে হলুদ রস পড়তে লাগল। এর পরেপরেই প্যালা ও টেনিদার মাটিতে পড়ে গিয়ে কাদামাখা অবস্থা হল এবং আমের আচার, রসগোল্লারা মাটিতে লুটোপুটি খেল। অবশিষ্ট রইল শুধু চাল-ডালের পুঁটলিটি ও পোনামাছগুলি।

১০.৫ ‘মাছের কালিয়ার তিনটি বেজে গেল’— মাছের কালিয়া সম্পর্কে এ রকম বলার কারণ কী?
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে প্রশ্নে উদ্ধৃত মাছের কালিয়া রাধার দায়িত্ব ছিল প্যালার। টেনিদা লিস্ট বের করে প্যালাকে সর্বপ্রথম মাছের কালিয়া রাঁধার নির্দেশ দেয়। ক্যাবলার মা মাছ কেটে লবণ ও অন্যান্য জিনিস মাখিয়ে দিয়েছিলেন। প্যালা কড়াইতে তেল চাপিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা তেলে মাছ ঢেলে দেওয়ায় কড়াই ফেনায় পরিপূর্ণ হয়ে অতগুলি মাছ একসঙ্গে তালগোল পাকিয়ে যায়। মাছের কালিয়া পরিণত হয় মাছের হালুয়াতে। আসলে কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ায় মাছের এই অবস্থা হয়েছিল। এই জন্যই ক্যাবলা ডিম, আমের আচার ও রসগোল্লার পরিণতির সঙ্গে তুলনা করে মাছের কালিয়ার সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছিল।

১১.১ এই গল্পটির নাম ‘বনভোজন’ না হয়ে ‘বনভোজনের ব্যাপার’ হলো কেন?
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত বনভোজনের ব্যাপার গল্পে দেখা যায় টেনিদা ও তার তিনসঙ্গী বনভোজনের পরিকল্পনা করেছে। বনভোজন হল সবাই মিলেমিশে একজোট হয়ে পরিচিত গন্ডির একটু বাইরে বেরিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা ও আনন্দ করা। এখানে এসবই হয়েছিল চাঁদা দেওয়া থেকে শুরু করে খাবারের তালিকা প্রস্তুত, সবাইকে বিভিন্ন কাজের ভার দেওয়া, এমনকি ট্রেনে চেপে পরিচিত গণ্ডির বাইরে যাওয়া। কিন্তু এরপর যা ঘটলো তা বলার নয়, একে একে সমস্ত খাবার নষ্ট হল। শেষ পর্যন্ত বনের টক টক মিষ্টি মিষ্টি ফল খেয়ে খিদে মেটাতে হয় তাদের। অর্থাৎ গল্পটিতে শুধু বনভোজনের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, বনভোজনে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু বনভোজন সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত তা পরিণত হয়েছে ফলভোজনে। তবে ফলভোজন বনভোজনের ব্যর্থতা বোঝালেও ‘বনভোজন’ শব্দটির গুরুত্ব কমেনি। তাই লেখক গল্পটির নামকরণ ‘বনভোজন’ না করে ‘বনভোজনের ব্যাপার’ করায় তা যথার্থ এবং সার্থক হয়ে উঠেছে।

১১.২ এই গল্পে ক’টি চরিত্রের সঙ্গে তোমার দেখা হলো? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলোচনা করো।
উত্তর:-
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভোজনের ব্যাপার’ গল্পে মোট পাঁচটি চরিত্রের দেখা মেলে। যথা টেনিদা, প্যালা, হাবুল, ক্যাবলা ও ভন্টা।

টেনিদা:- টেনিদা চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি। টেনিদা দলের লিডার। সে খেতে ভালোবাসে। খাবারের নাম শুনলেই তার জিভে জল আসে। নিজে হাতে কাজ না করে সে অন্যদের নির্দেশ দিতে ও মুখ চালাতেই বেশি পছন্দ করে।

প্যালা:- প্যালা গল্পের কথক। সে পেট খারাপের রুগি। ফলে হিঞ্চে সেদ্ধ, গাঁদাল পাতা আর শিঙিমাছের ঝোল প্রভৃতি মশলা ছাড়া খাবারই তার প্রধান খাদ্য। টেনিদা এ নিয়ে তাকে খোঁটা দেয় এবং তাতে সে বিব্রত বোধ করে।

হাবুল:- হাবুল সেন ঢাকার বাঙাল। তার কথাবার্তায় পূর্ববঙ্গের ভাষার টান। টেনিদাকে নিয়ে সে প্রায়ই ঠাট্টা করে।

ক্যাবলা:- ক্যাবলা টেনিদার দলের বুদ্ধিমান সদস্য। যথেষ্ট রসবোধ আছে তার। যখন একটার পর একটা খাবার নষ্ট হয়ে চলেছে, তখন বারোটা, একটা, দুটো, তিনটে বেজে গেল বলে ঘোষণা করেছে সে।

ভন্টা:- ভন্টা টেনিদাদের দলের সদস্য নয়। আলোচ্য গল্পে তার ভূমিকা কম । অত্যন্ত ধড়িবাজ ছেলে ভন্টা। রাজহাঁসের ডিমের সন্ধান দেওয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে পাঁঠার ঘুগনি আর ফুলুরি খেয়েও কাজের কাজ সে তো করেইনি, বরং প্যালাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

১১.৩ এ গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছ লেখো।
উত্তর:- নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় রচিত টেনিদার গল্প-উপন্যাসগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল হাস্যরস। টেনিদার মুখে বকাঝকা, উপমা, তিনজনকে খোঁটা দেওয়া সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে মজার উপাদান। হাবুলের বাঙাল ভাষা আর ক্যাবলার মুখে হিন্দি শব্দ গল্পের ভাষাকে আরো বেশি মজাদার করে তুলেছে। এছাড়াও গল্পের ভাষার মধ্যে নানারকম ছোট ছোট মজা লুকিয়ে আছে।

যেমন টেনিদা হাবুল সেনের ব্যবহার করা ‘পোলাপান’ শব্দটাকে লুফে নিয়ে বলে, ‘পোলাপান! এই গাড়লগুলোকে জলপান করলে তবে রাগ যায়!’ এখানে ‘পোলাপান’ ও ‘জলপান’ শব্দ দুটি নিয়ে মজা তৈরি করেছেন লেখক । আবার ক্যাবলা যখন বলে ‘খাট্টা’ তখন তার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যঙ্গের সুরে টেনিদা বলে “খাট্টা! বেশি পাঁঠামি করবি তো চাঁট্টা বসিয়ে দেবো।” এছাড়াও পাঞ্জাব মেলের স্পিডে পালানো, আছাড় খাওয়ার বর্ণনা, একটার পর একটা খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া আর সে বিষয়ে ক্যাবলার ঘোষণা- সবমিলিয়ে শুধু ভাষার ব্যবহারের কৌশলেই এই এক অদ্ভুত হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়।

১১.৪ শীতকালে পিকনিক নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো/ গল্প লেখো।

উত্তর:-

প্রিয় বন্ধু, মিঠুন

মুকুন্দবাগ, মুর্শিদাবাদ
তারিখ ২৯/৭/২৩ 

আজই তোর একটি চিঠি পেয়েছি। তোরা সবাই ভালো আছিস জেনে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। তোর চিঠিতে তুই আমার পিকনিকের কথা জানতে চেয়েছিস। আমি তোকে আমার পিকনিকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বর্ণনা করছি।

২রা জানুয়ারী আমি আমার অন্য ছয় বন্ধুর সাথে বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত মুকুটমণিপুরে একটি পিকনিকে যোগ দিয়েছিলাম। আমরা সকাল ৭.৩০ টায় একটি গাড়িতে করে কংসাবতী নদীর তীরে পৌঁছেছিলাম। আমাদের সাথে রান্নার সমস্ত উপকরণ নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের রাঁধুনি রান্না করা শুরু করেছিল এবং আমরা ক্যারম, তাস, ভলিবল ইত্যাদি খেয়েছিলাম। আমদের মধ্যে কেউ কেউ নদীতে সাঁতার কেটেছিল। তারপর ওখানে সমস্ত দর্শনযোগ্য স্থানগুলি, যেমন ডিয়ারপার্ক, গোড়াবাড়ি, অতুল্য ঘোষের বাগান ইত্যাদি দেখতে বেড়িয়েছিলাম। পিকনিকে আমরা অনেক সুস্বাদু খাবার খেয়েছি। আমি আমার বন্ধুদের সাথে অনেক উপভোগ করেছি। সন্ধ্যায় আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। তুই যদি আমাদের সাথে উপস্থিত থাকতিস, এটি একটি দুর্দান্ত আনন্দের হতো।

এখানে আর নয়। আমার সাথে দেখা হলে আমি তোকে আরও বলব। তোর প্রতি ভালবাসা এবং তোর বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি আমার চিঠিটি শেষ করছি।

মিঠুন বসাক
গ্রাম + পোঃ – প্রসাদপুর
জেলা – মুর্শিদাবাদ

ইতি
তোর বন্ধু, আশিস

১১.৫ টেনিদা-র মতো আরো কয়েকটি ‘দাদা’ চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর:- বাংলা সাহিত্যে টেনিদার মতো আরও যে সমস্ত ‘দাদা’ চরিত্র দেখতে পাওয়া যায় সেগুলি হল,-

ফেলুদা:- প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। তাঁর সঙ্গী হলেন তোপসে ও জটায়ু ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলি। রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে মগজাস্ত্র বা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিই ছিল ফেলুদার প্রধান হাতিয়ার।

ঘনাদা:- ঘনাদা বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৪৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। ঘনাদার প্রকৃত নাম ঘনশ্যাম দাস। ঘনাদার বক্তব্য অনুযায়ী ইউরোপিয়ান লোকেরা তাকে ‘ডস’ নামে চেনে। ঘনাদা তার মেসের প্রতিবেশী চার যুবককে নিজের জীবনের নানা অভিযান সম্পর্কে গল্প মুখে মুখে শোনান ।

বাঁটুলদা:-বাঁটুল দি গ্রেট বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কমিকস শিল্পী নারায়ন দেবনাথের সৃষ্ট একটি কাল্পনিক কমিকস চরিত্র। ইংরেজি কার্টুন চরিত্র ডেসপারেট ড্যান-এর আদলে তৈরি বাঁটুলের কমিকস গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে (১৯৬৫ থেকে) প্রকাশিত হয়ে আসছে শুকতারা পত্রিকায়। বাঁটুলদাকে বাঙালির সুপার হিরো বলা যায়।

আরো পড়ুন

বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse

অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse

বনভোজনের ব্যাপার প্রশ্ন উত্তর | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | Bonbhojoner Bapar Question Answer | Class 8 | Wbbse

চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর | দ্বিজেন্দ্রলাল রায় | Chandragupta Question Answer | Class 8 | Wbbse

সবুজ জামা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Sobuj Jama Question Answer | Class 8 | Wbbse

পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse

চিঠি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Chithi Class 8 Question Answer | Wbbse

একটি চড়ুই পাখি কবিতার প্রশ্ন উত্তর | তারাপদ রায় | Ekti Chorui Pakhi Kobita Question Answer | Class 8 | Wbbse

পথচলতি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় | Class 8 Bengali Pathchalti Question Answer | Wbbse

গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর | জগদীশচন্দ্র বসু | Class 8 Bengali Gacher Kotha Question Answer | WBBSE

ছন্নছাড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত | Class 8 Bengali Channachara Question Answer | Wbbse

পল্লীসমাজ প্রশ্ন উত্তর Class 8 | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | Pallisamaj Question Answer | Wbbse

নাটোরের কথা প্রশ্ন উত্তর | অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Natorer Kotha Class 8 Question Answer | Wbbse

স্বাধীনতা ল্যাংস্টন হিউজ প্রশ্ন উত্তর | Swadhinata Class 8 Question Answer | Wbbse

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment