প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 8 এর চন্দ্রগুপ্ত নাটকের প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের অষ্টম শ্রেনীর পাঠ্যবইতে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর লেখা চন্দ্রগুপ্ত নাটক রয়েছে। নাটকের শেষে যে সব প্রশ্ন গুলি রয়েছে তার সমাধান আমরা এখানে করে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
চন্দ্রগুপ্ত
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
হাতে কলমে
১.১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা দুটি নাটকের নাম, ‘সাজাহান’ ও ‘প্রতাপসিংহ’।
২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখো:
২.১ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করো।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল সিন্ধু নদের তীর ও সময়কাল সন্ধ্যা।
২.২ নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘হেলেন’ চরিত্রের পরিচয় দাও।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘হেলেন’ হলেন, গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার শাহের সেনাপতি সেলুসের কন্যা।
২.৩ ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ।’ – উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা ভারতীয় রাজা পুরু।
২.৪ ‘জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই’ – বক্তা কীভাবে এই কীর্তি রেখে যেতে চান ?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার দিগ্’বিজয়ের মাধ্যমে কীর্তি রেখে যেতে চান।
২.৫ ‘সম্রাট, আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না।’- বক্তাকে ‘বন্দি’ করার প্রসঙ্গ এসেছে কেন ?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক শিবিরে প্রবেশ করে গ্রিক সেনাপতি সেলুকাসের কাছ থেকে যুদ্ধের কৌশল শিখে নিচ্ছিলেন। এই কার্যকলাপের জন্য সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর আখ্যা দিলে তাঁকে বন্দি করার প্রসঙ্গ এসেছে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:
৩.১ ‘কী বিচিত্র এই দেশ!” — বক্তার চোখে এই দেশের বৈচিত্র্য কীভাবে ধরা পড়েছে?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে গ্রিক দেশ থেকে আসা সেকেন্দার ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য দেখে বিস্মিত হন। বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দেশে দিনের প্রচন্ড সূর্যের তেজ যেন গাঢ় নীল আকাশকে পুড়িয়ে দেয়। আবার রাত্রে চাঁদের স্নিগ্ধ শুভ্র জ্যোৎস্না যেন আকাশকে স্নান করিয়ে দেয়। বর্ষাকালে ঘন কালো মেঘরাশি গুরুগম্ভীর গর্জনে দৈত্যসৈন্যের মতো আকাশ ছেয়ে ফেলে। এই ভূখন্ডের একদিকে হিমালয়ের আকাশচুম্বী বরফের চূড়া শান্তভাবে বিরাজ করছে। অন্যদিকে এদেশের নদনদী কুলকুল শব্দে উদ্দামভাবে ছুটে চলেছে। আবার এই ভূখন্ডেরই অপরদিকে মরুভূমি তার তপ্ত বালুরাশির রুক্ষতা নিয়ে অবস্থান করছে।
৩.২ ভাবলাম ‘এ একটা জাতি বটে!’ — বক্তা কে? তাঁর এমন ভাবনার কারণ কী ?
উত্তর:-
বক্তা:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নামক নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা সেকেন্দার শাহ।
এমন ভাবনার কারণ:- গ্রিক সম্রাট দিগ্’বিজয়ী বীর সেকেন্দার শাহ এর সাথে ভারতের পুরুরাজের যুদ্ধ বাঁধলে যুদ্ধে পুরুরাজ পরাজিত হয়। যুদ্ধে পরাজিত পুরুরাজকে সেকেন্দার শাহ এর কাছে আনা হলে সেকেন্দার প্রশ্ন করে, তাঁর থেকে পুরুরাজ কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন। এর উত্তরে পুরুরাজ বলেন, তিনি সেকেন্দারের থেকে রাজার প্রতি রাজার যেমন আচরণ তেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন। এই উত্তরের মধ্য দিয়ে পুরুরাজের আভিজাত্য, আত্মসম্মান, শৌর্য ও সাহসিকতা প্রকাশিত হয়েছিল। তাতেই গ্রিক সম্রাট চমকিত হন এবং ভারতবাসীকে আলাদাভাবে চেনেন।
৩.৩ ‘এ দিগ্বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট?”- – এ প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট কী জানালেন ?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট সেকেন্দার জানান দিগ্’বিজয় সম্পূর্ণ করতে হলে নতুন গ্রিক সৈন্যের প্রয়োজন। সুদূর মাসিডন থেকে রাজ্য, জনপদ তৃণসম পায়ের নিচে পিষে। ঝড়ের বেগে শত্রুপক্ষকে ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দিয়ে। নিয়তির মতো দুর্বার, হত্যার মতো করাল, দুর্ভিক্ষের মতো নিষ্ঠুর হয়ে অর্ধেক এশিয়া জয় করে তিনি অবশেষে বাধা পেয়েছেন শতদ্রু নদীর তীরে। সেকেন্দার শাহের অপ্রতিরোধ্য সৈন্যদল পুরুরাজের সঙ্গে যুদ্ধে ক্লান্ত ও অবসন্ন। পুরুরাজের সঙ্গে যুদ্ধে জিতলেও সেকেন্দার উপলব্ধি করেছিলেন ভারতবর্ষের শৌর্যবান ও বীর রাজাদের সঙ্গে লড়াই করে দিগ্’বিজয় সম্পূর্ণ করতে গেলে তাঁর নতুন সৈন্যের প্রয়োজন।
৩.৪ ‘ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই।’ – বক্তা কে? কোন সত্য সে উচ্চারণ করেছে?
উত্তর:-
বক্তা:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রগুপ্ত।
কোন সত্য:- চন্দ্রগুপ্তকে আন্টিগোনস গুপ্তচর ভেবে সেকেন্দারের সামনে নিয়ে আসেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সে শিবিরের পাশে বসে শুকনো তালপাতায় কীসব যেন লিখছিল। সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তের কাছ থেকে সত্য জানতে চাইলে চন্দ্রগুপ্ত জানান, তিনি গ্রিক সেনাপতি সেলুকাসের কাছ থেকে একমাসের বেশি সময় ধরে গ্রিক সম্রাটের বাহিনী চালনা, ব্যূহ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম এইসব শিখেছেন। গ্রিক সৈন্য কাল চলে যাবে শুনে চন্দ্রগুপ্ত এতদিনে যা শিখেছেন তা শুকনো তালপাতায় লিখে নিচ্ছিলেন।
৩.৫ ‘আমার ইচ্ছা হলো যে দেখে আসি….’ – বক্তার মনে কোন ইচ্ছে জেগে উঠেছিল? তার পরিণতিই বা কী হয়েছিল?
উত্তর:-
কোন ইচ্ছা জেগেছিল? :- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মগধের রাজপুত্র। তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাকে নির্বাসিত করায় তিনি প্রতিশোধের উপায় খুঁজছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত যখন শুনলেন সুদূর মাসিডন থেকে অর্ধেক এশিয়া জয় করার পর সেকেন্দার শাহ পুরুকেও পরাজিত করেছেন। তখন চন্দ্রগুপ্তের মনে সেকেন্দারের এই পরাক্রমের রহস্য, যুদ্ধ জয়ের কৌশল জানার ইচ্ছা জেগে উঠেছিল।
পরিণতি:- চন্দ্রগুপ্ত তাঁর হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের অভিপ্রায়ে সেনাপতি সেলুকাসের কাছে গ্রিক সম্রাটের যুদ্ধজয়ের কৌশল শিখে নিচ্ছিলেন। সেই কৌশলগুলি তালপাতায় লিখে নেওয়ার সময় চন্দ্রগুপ্ত ধরা পড়ে যান। তবে শেষ পর্যন্ত সেকেন্দার শাহ চন্দ্রগুপ্তের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দুর্জয় দিগ্’বিজয়ী হওয়ার আশীর্বাদ দেন।
৪. নীচের উদ্ধৃত অংশগুলির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলোচনা করো :
৪.১ ‘এ শৌর্য পরাজয় করে আনন্দ আছে।’
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে কোনো এক সন্ধ্যায় সিন্ধুনদের তীরে দাঁড়িয়ে রাজা পুরুর ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতার বর্ণনা প্রসঙ্গে সেকেন্দার শাহ আলোচ্য উক্তিটি করেন।
তাৎপর্য:- মাসিডন থেকে দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে অর্ধেক এশিয়া জয় করে সেকেন্দার এসেছে ভারতভূমিতে। এই জয়ের পথে কোথাও তাঁকে কোনো প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। দুর্বল শত্রুকে পরাস্ত করে সেকেন্দারের বীর হৃদয় তৃপ্ত হয়নি। তাই ভারতে এসে বীর প্রতিপক্ষ পুরুকে পরাজিত করে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।
৪.২ ‘সম্রাট মহানুভব’।
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে সেকেন্দার শাহ পুরুর সাহসিকতা ও বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে হৃত রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গেই সেলুকস গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার শাহের উদ্দেশ্যে এই উক্তিটি করেছিলেন।
তাৎপর্য:- অর্ধেক এশিয়া জয় করে সেকেন্দার শাহ প্রথম বাধা পান শতদ্রু নদের তীরে পুরুরাজের কাছে। সেকেন্দার পুরুকে পরাজিত করে তাকে বন্দি করে জিজ্ঞাসা করেন যে, পুরু তাঁর কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করে । প্রত্যুত্তরে পুরুরাজ বলেন, “রাজার প্রতি রাজার আচরণ”। এই নির্ভীক উত্তরে মুগ্ধ হয়ে সেকেন্দার শাহ পুরুরাজের সম্মান রক্ষার্থে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। সেলুকসের ঘটনাটি শুনে মনে হয় সেকেন্দার শাহের মহানুভবতাই পুরুরাজকে তাঁর রাজ্যে ফিরিয়ে দিতে অনুপ্রাণিত করেছে।
৪.৩ ‘বাধা পেলাম প্রথম সেই শতদ্রুতীরে।
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে সেনাপতি সেলুকসের কাছে নিজের বিজয় অভিযানের প্রথম প্রতিরোধ প্রসঙ্গে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার শাহ উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য:- সুদূর মাসিডন থেকে রাজ্য, জনপদ তৃণসম পায়ের নিচে পিষে। ঝড়ের বেগে ‘শত্রুপক্ষকে ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দিয়ে। নিয়তির মতো দুর্বার, হত্যার মতো করাল, দুর্ভিক্ষের মতো নিষ্ঠুর হয়ে অর্ধেক এশিয়া জয় করে তিনি অবশেষে বাধা পেয়েছেন শতদ্রু নদীর তীরে। সেকেন্দার শাহের অপ্রতিরোধ্য সৈন্যদল পুরুরাজের সঙ্গে যুদ্ধে ক্লান্ত ও অবসন্ন। পুরুরাজের সঙ্গে যুদ্ধে জিতলেও সেকেন্দার উপলব্ধি করেছিলেন ভারতবর্ষের শৌর্যবান ও বীর রাজাদের সঙ্গে লড়াই করে দিগ্’বিজয় সম্পূর্ণ করতে গেলে তাঁর নতুন সৈন্যের প্রয়োজন।
৪.৪ ‘আমি তারই প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।’
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাঁকে রাজ্য থেকে নির্বাসিত করে রাজসিংহাসনের দখল নেয়। এরই প্রতিশোধ নেওয়ার প্রসঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত উপরোক্ত উক্তিটি করেছিলেন।
তাৎপর্য:- হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে মাসখানেক ধরে বাহিনী চালনা, ব্যূহ রচনা, সামরিক নিয়ম প্রভৃতি শিখছিলেন। সেগুলি শুকনো তালপাতায় লিখে নেওয়ার সময় তিনি আন্টিগোনসের কাছে ধরা পড়ে যান। এরপর সম্রাট সেকেন্দারের সামনে আনা হলে চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পারিবারিক বিরোধ ও হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার কথা ব্যক্ত করেন।
৪.৫ ‘যাও বীর! মুক্ত তুমি।’
উত্তর:-
প্রসঙ্গ:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্ত যখন বীরত্বের সঙ্গে ‘সেকেন্দারকে জানান যে হত্যা না করে তাঁকে বন্দি করা যাবে না। তখন সেকেন্দার আলোচ্য উক্তিটি করে।
তাৎপর্য:- আন্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর হিসেবে বন্দি করে আনলেও চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব সেকেন্দারকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি বুঝতে পারেন যে চন্দ্রগুপ্ত কোনো সাধারণ মানুষ নন। তিনি বীর, তিনি শাসক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাই অযথা বন্দি করে নিজের গৌরব লাঘব করতে চাননি। একারণে চন্দ্রগুপ্তকে তিনি মুক্ত করে দেন।
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৫.১ নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় দাও।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন ঐতিহাসিক নাটক রচনায় সিদ্ধহস্ত। তাঁর নাটক আজও সকলের কাছে জনপ্রিয়। এহেন প্রতিভাবান নাট্যকারের লেখা ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকটি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। পাঠ্য ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশটি সেই নাটকের অংশ। নাটকটিতে চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব ও উদ্যমের জয় ঘোষিত হয়েছে। এই নাটকে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রের সমাবেশ ঘটায় একে ঐতিহাসিক নাটক বলা হয়ে থাকে।
এখানে উপস্থিত রয়েছে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার, গ্রিক সেনাধ্যক্ষ সেলুকস, তাঁর কন্যা হেলেন, আন্টিগোনস, চন্দ্রগুপ্ত প্রমুখ ঐতিহাসিক চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে মগধের রাজা চন্দ্রগুপ্তের পিতা মহাপদ্মনন্দ, বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ, রাজা পুরু প্রভৃতি ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রসঙ্গ।
নানা ঐতিহাসিক ঘটনার কথাও এই নাটকে উল্লিখিত হয়েছে। যেমন, সেকেন্দারের ভারত আক্রমণ, সেকেন্দারের সাথে পুরুর যুদ্ধ ও পুরুর আত্মমর্যাদা প্রকাশের কথা, চন্দ্রগুপ্তকে বঞ্চিত করে নন্দ কীভাবে সিংহাসন অধিকার করে সেইসব প্রসঙ্গ।
পরিশেষে তাই বলা যায় প্রচলিত ইতিহাসের কোনো ঘটনা বা চরিত্রকে নাট্যকার বিকৃত না করে দক্ষ লেখনীর স্পর্শে নাটকটিতে ঐতিহাসিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। যা সত্যিই অনন্য ও অসাধারণ।
৫.২ নাট্যাংশে ‘সেকেন্দার’ ও ‘সেলুকস’-এর পরিচয় দাও। সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:-
সেকেন্দার ও সেলুকাসের পরিচয় :- নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘সেকেন্দার’ হলেন গ্রিক সম্রাট এবং ‘সেলুকস’ হলেন তাঁর সেনাপতি।
ভারত প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ:- গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির অতুলনীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপটি সুন্দরভাবে ধরা দিয়েছে। সেকেন্দার ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে বলেছেন, দিনের বেলা তীব্র রৌদ্র, রাতে স্নিগ্ধ চাঁদের আলো, বর্ষাকালে ঘন মেঘের গর্জন, তুষারবৃত হিমালয়ের স্থিরতা, নদনদীর উদ্দাম, মরুভূমির রুক্ষতার কথা। এদেশের কোথাও সুউচ্চ তালগাছের বন, বিরাট বটগাছের স্নেহ ছায়া, পাহাড়ের মতো উন্মত্ত হাতির গতিশীলতা, কোথাও বিরাট সিংওয়ালা হরিণ দেখা যায়। সেকেন্দার এসবকিছুর বর্ণনাই মুগ্ধচিত্তে সেলুকস ও তাঁর কন্যা হেলেনকে শুনিয়েছেন। তিনি ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক রূপকে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যেন মনে হয় ভারতবর্ষ তাঁর নিজের দেশ ম্যাসিডোনিয়া ।
৫.৩ ‘চমকিত হলাম।’ ‘ – কার কথায় বক্তা চমকিত হয়েছিলেন? তাঁর চমকিত হওয়ার কারণ কী?
উত্তর:-
কার কথায় চমকিত হলেন ?:- নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার ভারতীয় রাজা পুরুর কথা শুনে চমকিত হয়েছিলেন।
চমকিত হওয়ার কারণ :- পরাজিত ও বন্দি পুরুরাজের কাছে সেকেন্দার জানতে চান তিনি তাঁর কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন। উত্তরে পুরুরাজা তাকে বলেন, রাজার প্রতি রাজার যেমন আচরণ, তিনি তেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন।
এই উক্তির মধ্য দিয়ে পুরুরাজের চরিত্রের যে শৌর্য, সাহসিকতা, ব্যাক্তিত্ব ও আত্মসম্মানের প্রকাশ ঘটেছে, তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারকে চমকিত করে।
৫.৪ ‘সম্রাট মহানুভব।’ -বক্তা কে? সম্রাটের ‘মহানুভবতা’-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায় ?
উত্তর:-
বক্তা কে?:-দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা গ্রিক সেনাপতি সেলুকস ।
মহানুভবতার পরিচয় :- পরাজিত ও বন্দি ভারতীয় রাজা পুরুর কাছে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার যখন জানতে চান, তিনি তাঁর কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন। তখন পুরুরাজ নির্ভীক ও অবিচলিত কণ্ঠে উত্তর দেন রাজার প্রতি রাজার যেমন আচরণ তেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন। পুরুরাজের এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে সেলুকস সেই মুহূর্তে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন প্রকৃত বীরের প্রতি একজন বীর যোদ্ধার শ্রদ্ধাবোধ ফুটে উঠেছে। সেকেন্দারের এই আচরণের মধ্যেই সেনাপতি সেলুকস মহানুভবতার পরিচয় পেয়েছেন।
৫.৫ ইতিহাসের নানান অনুষঙ্গ কীভাবে নাট্যকলেবরে বিধৃত রয়েছে তা ঘটনাধারা বিশ্লেষণ করে আলোচনা করো।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশটি কল্পনিক কিন্তু ইতিহাস আশ্রয় করে নির্মিত। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আলোচ্য নাটকে ফুটে উঠেছে নানা ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি। যেমন, –
এখানে উপস্থিত রয়েছে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার, গ্রিক সেনাধ্যক্ষ সেলুকস, তাঁর কন্যা হেলেন, আন্টিগোনস, চন্দ্রগুপ্ত প্রমুখ ঐতিহাসিক চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে মগধের রাজা চন্দ্রগুপ্তের পিতা মহাপদ্মনন্দ, বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ, রাজা পুরু প্রভৃতি ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রসঙ্গ।
নানা ঐতিহাসিক ঘটনার কথাও এই নাটকে উল্লিখিত হয়েছে। যেমন, সেকেন্দারের ভারত আক্রমণ, সেকেন্দারের সাথে পুরুর যুদ্ধ ও পুরুর আত্মমর্যাদা প্রকাশের কথা, চন্দ্রগুপ্তকে বঞ্চিত করে নন্দ কীভাবে সিংহাসন অধিকার করে সেইসব প্রসঙ্গ।
সেলুকসের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সাক্ষাৎ ও তাঁর কাছে চন্দ্রগুপ্তের রণকৌশল শিক্ষার বিষয়টির মধ্যে ও ইতিহাসের কোনো বিকৃতি ঘটেনি। এভাবেই ইতিহাসের নানান খণ্ডচিত্র নাট্যকলেবরে বিধৃত হয়েছে।
৫.৬ ‘গুপ্তচর।’ – কাকে ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে? সে কি প্রকৃতই গুপ্তচর?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রকৃতপক্ষে মগধের রাজা মহাপদ্মনন্দের পুত্র। তিনি বৈমাত্রেয় ভাই ধননন্দ কর্তৃক বিতাড়িত হয়েছিল। একারণে তিনি নিজ ভাইয়ের প্রতি প্রতিশোধ নিয়ে সিংহাসন দখল করার উদ্দেশ্যে গোপনে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে বাহিনী চালনা, বৃহ্য রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম প্রভৃতি মাসাবধি কাল ধরে শিখছিলেন। সেকেন্দারের সাথে যুদ্ধ বা তাঁর ক্ষতিসাধন চন্দ্রগুপ্তের উদ্দেশ্য ছিল না। তাই তাকে গুপ্তচর বলা চলে না।
৫.৭ ‘সেকেন্দার একবার সেলুকসের প্রতি চাহিলেন….’ – তাঁর এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ কী?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে সেকেন্দার সেলুকসের প্রতি এভাবে দৃষ্টিপাত করলেন কারণ সেকেন্দার আগেই ভারতবাসীকে বীর, শৌর্যবান, তেজস্বী বলে উল্লেখ করেছেন। এখন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তাঁকে জানান যে প্রকৃত ভারতবাসী সত্যবাদী। সে এখনও অবধি মিথ্যা বলতে শেখেনি। অর্থাৎ ভারতবাসীর যেসব গুণরাশি সেকেন্দারকে মুগ্ধ করেছিল তার মধ্যে অপর একটি গুণ ভারতবাসীর সত্যবাদিতা তথা সততা। সেকেন্দারের এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ, তিনি সেলুকসকে বোঝাতে চাইলেন ভারতবাসী সম্বন্ধে তিনি যা বলেছেন তা সবই সত্য। ভারতবাসীর গুণ ভারতবাসীর সহায়।
৫.৮ চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসের কীরূপ সম্বন্ধের পরিচয় নাট্যাংশে মেলে?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে সেলুকস ছিলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি। আর চন্দ্রগুপ্ত ছিল মগধের রাজা মহাপদ্মনন্দের পুত্র। যে বৈমাত্রেয় ভাই ধননন্দ কর্তৃক বিতাড়িত হয়। তার প্রতিশোধ নিতে চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসের কাছ থেকে বাহিনী চালনা, বৃহৎ রচনা প্রণালী, সামরিক নিয়ম প্রভৃতি শিখছিলেন।
যদিও চন্দ্রগুপ্তের আসল অভিপ্রায় সেলুকস জানত না তবুও তার কথাবার্তার মিষ্টতা সেলুকসকে আকৃষ্ট করায়, তিনি সরলভাবে গ্রিক সামরিক প্রথা চন্দ্রগুপ্তের সাথে আলোচনা করতেন। তবে চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসকে শিক্ষাগুরু হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন যার পরিচয় মেলে আন্টিগোনসের সেলুকসের প্রতি নিক্ষেপ করা তরবারি চন্দ্রগুপ্তের নিবারণের মাধ্যমে। তাই বলা যায় আলোচ্য নাট্যাংশে সেলুকসের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের গুরু – শিষ্য সম্পর্ক।
৫.৯ ‘তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।’ · কার উক্তি? সে কী লিখে নিচ্ছিল? তাঁর এই লিখে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী ?
উত্তর:-
কার উক্তি? :- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা চন্দ্রগুপ্ত।
কী লিখে নিচ্ছিল? :- চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে যেসমস্ত যুদ্ধবিদ্যা শিখেছিলেন তা লিখে রাখছিলেন।
উদ্দেশ্যে :- চন্দ্ৰগুপ্ত প্রকৃতপক্ষে মগধের রাজা মহাপদ্মনন্দের পুত্র। তিনি বৈমাত্রেয় ভাই দ্বারা বিতাড়িত কিন্তু একদিন তিনি মগধ উদ্ধার করে সিংহাসন লাভ করবেন এই আশা তাঁর আছে। তাই সেলুকসের কাছে যে বিদ্যা শিখেছেন তা যাতে ভুলে না জান তাই তিনি লিখে রাখছিলেন।
৫.১০ আন্টিগোনস নাটকের এই দৃশ্যে সেলুকসকে ‘বিশ্বাসঘাতক’বলেছে। তোমার কি সেলুকসকে সত্যিই ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে মনে হয়? যুক্তিসহ আলোচনা করো।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে আন্টিগোনস সেলুকাসকে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিলেও সেলুকসকে আমার বিশ্বাসঘাতক মনে হয় না। চন্দ্রগুপ্তকে দেখে এবং তাঁর ব্যবহার ও কথাবার্তায় সেলুকসের মনে কখনোই সন্দেহ বা বিদ্বেষভাব জেগে ওঠেনি। স্বভাবতই তিনি তাকে শত্রু বলেও মনে করেননি। সে কারণেই রণকৌশলের শিক্ষা দিতেও তিনি দ্বিধা করেননি। আর চন্দ্রগুপ্তের কথাতেই স্পষ্ট যে, গ্রিক বাহিনীর ক্ষতিসাধন করা বা গ্রিক সেনাদলকে আক্রমণ করার কোনো উদ্দেশ্যেই তাঁর ছিল না। তাই সেলুকসকে কখনোই বিশ্বাসঘাতক বলা যায় না।
৫.১১ ‘নিরস্ত হও।’– কে এই নির্দেশ দিয়েছেন? কোন পরিস্থিতিতে তিনি এমন নির্দেশ দানে বাধ্য হলেন ?
উত্তর:-
কার নির্দেশ ? :- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত নির্দেশ দিয়েছেন সেকেন্দার। তিনি আন্টিগোনসকে এই নির্দেশ দিয়েছেন ।
কোন পরিস্থিতি? :- আন্টিগোনস সেলুকসকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করে তাকে আক্রমণ করেন, চন্দ্রগুপ্ত তখন সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন। তখন আন্টিগোনস তাকে আক্রমণ করলে চন্দ্রগুপ্ত সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করেন। সেই মুহূর্তে সম্রাট তাদের নিরস্ত্র হতে বলেন।
৫.১২ ‘আন্টিগোনস লজ্জায় শির অবনত করিলেন। – তাঁর এহেন লজ্জিত হওয়ার কারণ কী?
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশে সামরিক প্রথা ও পারস্পরিক সৌজন্যে ভুলে আন্টিগোনস গ্রিক সেনাধ্যক্ষ সেলুকসকে বারংবার বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দেন। উত্তেজিত সেলুকস তরবারি বের করলে আন্টিগোনস অধিকতর দ্রুততার সঙ্গে সেলুকসের মাথা লক্ষ করে তরবারি নিক্ষেপ করেন। সম্রাট সেকেন্দারের সামনে এমন আচরন ঔদ্ধত্য ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। প্ৰথমে তাকে নিরস্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে এবং তারপর তার নাম ধরে সম্বোধন করে সম্রাট সেকেন্দার তাকে শাসন করছেন তা বুঝতে পেরে আন্টিগোনস লজ্জায় মাথা নিচু করেন। এছাড়াও সামান্য একজন রাজকুমার চন্দ্রগুপ্ত তার মতো বহু যুদ্ধ জেতা অভিজ্ঞ সৈনিকের তরবারি প্রতিহত করেছে এটাও তার লজ্জার কারণ ছিল।
৫.১৩ নাট্যাংশ অবলম্বনে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় দাও।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত চন্দ্রগুপ্ত নাটকে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায় । এক সন্ধ্যায় সিন্ধু নদের তীরে দাঁড়িয়ে সেনাপতি সেলুকসের সঙ্গে সম্রাটের কথাবার্তায় তার মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। তার অনুভূতি থেকে বোঝা যায় তিনি ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে আসেননি, শুধুমাত্র দিগ্বিজয়ের আকর্ষণ এই ভারতে ছুটে এসেছেন। এদেশের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি তিনি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। রাজ্য বিজয়ের পথে পুরুরাজের কাছ থেকে তিনি বাধা পেলেও তার প্রতি যে ব্যবহার তিনি করেছেন তা একজন যথার্থ বীরের পক্ষে সম্ভব। সৈন্য সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে দেশে ফিরে যেতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে তার মনের আক্ষেপ স্পষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাস্তব বুদ্ধি ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সেলুকস ও আন্টিগোনসের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া জটিল পরিস্থিতি ও ঠান্ডা মাথায় সামলান । এর মধ্য দিয়েই তার ধীর-স্থির চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। চন্দ্র গুপ্তের পরিচয় পেয়ে তাকে মুক্ত করে দেওয়ার মধ্যেও গ্রীক সম্রাটের উদারতা এবং যুক্তিশীল মনের পরিচয় পাওয়া যায়।
৫.১৪ চন্দ্রগুপ্তের প্রতি সেকেন্দারের কীরূপ মনোভাবের পরিচয় নাট্যদৃশ্যে ফুটে উঠেছে, তা উভয়ের সংলাপের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত চন্দ্রগুপ্ত নাট্যাংশে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের কথাবার্তার মধ্যদিয়ে চন্দ্রগুপ্তের প্রতি সেকেন্দারের মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। আন্টিগোনস চন্দ্রগুপ্ত কে সম্রাট সেকেন্দারের কাছে গুপ্তচর হিসেবে উপস্থিত করলেও তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেকেন্দার তার প্রকৃত পরিচয় জানতে চান । চন্দ্রগুপ্তের চরিত্রের স্পষ্টবাদিতা, সততা, বীরত্ব, শিক্ষালাভের একান্ত ইচ্ছা তাকে আকৃষ্ট করে। চন্দ্রগুপ্তকে আন্টিগোনস আক্রমণ করলে সম্রাট তাকে নিরস্ত করেন এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশের জন্য আন্টিগোনসকে সাম্রাজ্য থেকে নির্বাসিত করেন। শেষে সম্রাট সেকেন্দার শত্রুর গুপ্তচর হিসেবে চন্দ্রগুপ্ত কে আটক করতে চাইলে চন্দ্রগুপ্ত তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, গ্রিক সম্রাটকে আগে বীর ভাবলেও সামনাসামনি হওয়ার পর তাকে কাপুরুষ মনে হচ্ছে । তিনি এরপর আরও বলেন, –
“সম্রাট আমায় বধ না করে বন্দী করতে পারবেন না ।
-এই সাহসিকতায় চমৎকৃত গ্রিক সম্রাট তাকে জানান যে, তিনি শুধুমাত্র তাকে পরীক্ষা করছিলেন। চন্দ্রগুপ্তকে নিজ রাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে সম্রাট তাঁকে আশীর্বাদ করেন, “তুমি হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করবে । তুমি দুর্জয় দিগ্বিজয়ী হবে।” এর মধ্য দিয়ে তার উদার মনের পরিচয় মেলে।
৬. নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ পদ খুঁজে নিয়ে সন্ধিবিচ্ছেদ করো :
৬.১. আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।
উত্তর:- নির্বাক = নিঃ + বাক
৬.২ বিশাল নদ-নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দাম বেগে ছুটেছে।
উত্তর:- উচ্ছ্বাসে = উৎ + শ্বাসে, উদ্দাম = উৎ + দাম
৬.৩ সে নির্ভীক নিষ্কম্পত্তরে উত্তর দিলো, ‘রাজার প্রতি রাজার আচরণ।
উত্তর:- নির্ভীক = নিঃ + ভীক
৬.৪ ‘আমি এসেছি শৌখিন দিগবিজয়ে।
উত্তর:- দিগবিজয়ে = দিক্ + বিজয়ে
৬.৫. তুমি হৃতরাজ্য উদ্ধার করবে।
উত্তর:- উদ্ধার = উদ্ + হার
৭. ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো
দৈত্যসৈন্য, নদনদী, স্নেহছায়া, অসম্পূর্ণ, বিজয়বার্তা, অভ্রভেদী।
উত্তর:-
দৈত্যসৈন্য – দৈত্যদের সৈন্য (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।) – যে দৈত্য সেই সৈন্য (কর্মধারয় সমাস) ।
নদনদী – নদ ও নদী (দ্বন্দ্ব সমাস)
স্নেহছায়া – স্নেহ রূপ ছায়া (রূপক কর্মধারয় সমাস)।
অসম্পূর্ণ – নয় সম্পূর্ণ (না তৎপুরুষ সমাস)।
বিজয়বার্তা – বিজয়ের বার্তা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)।
অভ্রভেদী – অভ্রকে ভেদ করে যে (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)।
৮. ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো :
৮১. হেলেন সেলুকসের হস্ত ধরিয়া তাঁহার পার্শ্বে দণ্ডায়মানা।
উত্তর:- ঘটমান বর্তমান
৮.২ এই মরুভুমি স্বেচ্ছাচারের মতো তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা করছে।
উত্তর:- ঘটমান বর্তমান
৮.৩ চমকিত হলাম।
উত্তর:- সাধারণ অতীত
৮.৪ আমার শিবিরে তুমি গুপ্তচর হয়ে প্রবেশ করেছ।
উত্তর:- পুরাঘটিত বর্তমান
৮.৫. নির্ভয়ে তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও।
উত্তর:- বর্তমান অনুজ্ঞা
৯. নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দগুলির কারক-বিভক্তি নির্দেশ করো :
৯.১ কী বিচিত্র এই দেশ!
উত্তর:- কর্মকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯.২ আমি বিস্মিত আতঙ্কে চেয়ে থাকি।
উত্তর:- অপাদান কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১.৩. মদমত্ত মাতঙ্গা জামপর্বতসম মন্থর গতিতে চলেছে।
উত্তর:- কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯.৪ বাধা পেলাম প্রথম-সেই শতদ্রুতীরে।
উত্তর:- অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৯.৫ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।
উত্তর:- অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১০. নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করো :
স্থিরভাবে, নিষ্কম্পস্বরে, বিজয়বাহিনী, চন্দ্রগুপ্ত, আর্যকুলরবি
উত্তর:-
স্থিরভাবে = স্থির্ – ভা – বে (রুদ্ধ – মুক্ত – মুক্ত)
নিষ্কম্পস্বরে = নিষ্ – কম্ – প – স্ব – রে (রুদ্ধ – রুদ্ধ – মুক্ত – মুক্ত – মুক্ত)
বিজয়বাহিনী = বি – জয়্ – বা – হি – নী (মুক্ত – রুদ্ধ – মুক্ত – মুক্ত – মুক্ত)
চন্দ্রগুপ্ত = চন্ – দ্র – গুপ্ – ত (রুদ্ধ – মুক্ত – রুদ্ধ – মুক্ত)
আর্যকুলরবি = আর্ – য – কু – ল – র – বি (রুদ্ধ – মুক্ত – মুক্ত – মুক্ত – মুক্ত – মুক্ত)
১১. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :
১১.১ নদতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস অন্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন। (দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো)
উত্তর:- সেকেন্দার ও সেলুকস নদতটে শিবির সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন। তাঁরা অস্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন।
১১.২ ‘আমার কাছে কিরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো?’ (পরোক্ষ উক্তিতে)
উত্তর:- বক্তা শ্রোতাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি তাঁর কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন।
১১.৩ জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- জগতে একটা কীর্তি না রেখে যেতে চাই না।
১১.৪ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম। (সরল বাক্যে)
উত্তর:- আমার শেখা বিষয়গুলি এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।
১১.৫ তোমার অপরাধ তত নয়। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- তোমার অপরাধ সামান্য।
১১.৬ এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্র ছাত্র হিসেবে তাঁর কাছে উপস্থিত, তাতেই তিনি ত্রস্ত। (নিম্নরেখ শব্দের বিশেষ্যরূপ ব্যবহার করে বাক্যটি লেখো)
উত্তর:- এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্রের ছাত্র হিসেবে তাঁর কাছে উপস্থিতিতেই তিনি ত্রস্ত।
১১.৭ কী বিচিত্র এই দেশ’। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর:- এই দেশ সত্যিই বিচিত্র।
১১.৮ ‘সত্য সম্রাট’। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- মিথ্যা নয় সম্রাট।
১১. এ দিগবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট? (পরোক্ষ উক্তিতে)
উত্তর:- বক্তা প্রশ্ন করলেন যে, এ দিগ্বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়ার কারণ কী
১১:১০ ‘ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই।’ (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- ভারতবাসী এখনও পর্যন্ত শুধু সত্য কথা বলতেই শিখেছে।
১১.১১ আমি এরূপ বুঝি নাই। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- আমি অন্যরূপ বুঝিয়াছি।
১১.১২ ‘সেকেন্দার সাহা এত কাপুরুষ তাহা ভাবি নাই।’ (নিম্নরেখাঙ্কিত শব্দের বিশেষ্যের রূপ ব্যবহার করো)
উত্তর:- সেকেন্দার সাহার কাপুরুষত্ব এতখানি, ভাবি নাই ।
১১.১৩ সম্রাট আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর:- সম্রাট আগে আমায় বধ করবে এবং তারপর বন্দি করবেন।
১১.১৪ আমি পরীক্ষা করছিলাম মাত্র। (জটিল বাকো)
উত্তর:- আমি যা করছিলাম তা নিতান্তই পরীক্ষা।
১১.১৫ “নির্ভয়ে তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও’। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর:- নির্ভয়ে তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যেতে বিরত থেকো না।
আরো পড়ুন
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bojhapora Question Answer | Class 8 | Wbbse
অদ্ভুত আতিথেয়তা প্রশ্ন উত্তর | Advut Atitheota Question Answer | Class 8 | Wbbse
পরবাসী কবিতার প্রশ্ন উত্তর | বিষ্ণু দে | Porobasi Class 8 Question Answer | Wbbse
চিঠি গল্পের প্রশ্ন উত্তর | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | Chithi Class 8 Question Answer | Wbbse
গাছের কথা প্রশ্ন উত্তর | জগদীশচন্দ্র বসু | Class 8 Bengali Gacher Kotha Question Answer | WBBSE
গড়াই নদীর তীরে প্রশ্ন উত্তর | জসীমউদ্দীন | Gorai Nodir Tire Question Answer | Class 8 | Wbbse
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।