ধারণা গঠনের স্তর বা পর্যায়গুলি সংক্ষেপে লেখো

ধারণা গঠনের স্তর বা পর্যায়গুলি সংক্ষেপে লেখো
অথবা, ধারণা গঠনের প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে লেখাে। 

উত্তর : 

ধারণা গঠনের প্রক্রিয়া/পর্যায় : 

ধারণা বলতে কোনাে বিশেষ বস্তু বা ঘটনাকে বােঝায় না বরং সাধারণ শ্রেণিকে বােঝায়। বিভিন্ন বস্তু, ব্যক্তি অথবা ঘটনার সাদৃশ্যের ভিত্তিতে ব্যক্তির মধ্যে ধারণা গড়ে ওঠে। এবং এর একটি নাম দেওয়া হয়। ধারণা গঠন মুলত দু-ভাবে হয়। (1) স্বতঃস্ফূর্তভাবে (বিনা চেষ্টায়) এবং (2) প্রচেষ্টার মাধ্যমে।

লৌকিক বহু ধারণাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে (বিনা চেষ্টায়) গড়ে ওঠে। অন্যান্য ধারণাগুলি প্রচেষ্টার দ্বারা গঠিত হয়। ধারণা গঠনের পর্যায়গুলি নীচে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল—

[1] প্রত্যক্ষণ: ব্যক্তি প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে যে-কোনাে বিষয় সম্পর্কে জানে বা জ্ঞান লাভ করে। কোনাে বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করতে না-পারলে তার সম্পর্কে ধারণা গঠনও সম্ভব হয় না। তাই ধারণা গঠন শুরু হয় প্রত্যক্ষণ দিয়ে। 

[2] পর্যবেক্ষণ : এই পর্যায়ে একই ধরনের নানান বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পাখি বিষয়ে ধারণা গড়ে তুলতে হলে, নানান ধরনের পাখি পর্যবেক্ষণ করতে হয়। 

[3] বিশ্লেষণ : এই পর্যায়ে বিভিন্ন বস্তুর গুণ, জাতি, ধর্ম ইত্যাদি পর্যালােচনা বা বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন—পাখির প্রকারভেদ, পালকের রং, ডাক, স্বভাব, আকার ইত্যাদি বৈচিত্র্যগুলি বিশ্লেষণ করা হয়। 

[4] তুলনা : এই পর্যায়ে বৈচিত্র্যগুলির তুলনা করে কোন কোন্ দিক দিয়ে তাদের মধ্যে মিল রয়েছে এবং কোন্ কোন্ দিক দিয়ে তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তা লক্ষ করা হয়। পরবর্তী স্তরে তাদের বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা যায়। যেমন— কাক, কোকিল, পায়রা, এদের ওড়ার জন্য ডানা বর্তমান এদের গায়ে পালক আছে। এদের চক্ষু বর্তমান … ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে এদেরকে একটি বিভাগে রাখা হয়। 

[5] পৃথককরণ : এই পর্যায়ে বস্তুর সাধারণ গুণগুলিকে পৃথক করা হয়। যে বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনার যােগ্য নয়, সেগুলিকে বাদ দিয়ে যেগুলি সমভাবে সবকটির মধ্যে রয়েছে, সেগুলিকে পৃথক করা হয়। যেমন — সব পাখিরই পালক আছে, চঞ্চু আছে, ডানা আছে … এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে পৃথকরণের ক্ষেত্রে দেখা হয়। কতগুলি ডিম পাড়ে, ডিমের আকৃতি কেমন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা করা হয় না। 

[6] সামান্যীকরণ : এই পর্যায়ে বস্তু সম্পর্কে সাধারণ সূত্র স্থির করা হয়। যেসকল বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির ভিত্তিতে পৃথককরণ হয়েছিল, সেইগুণ বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই সাধারণ সূত্র স্থির করা হয়। যেমন— পাখির বিষয়ে সাধারণ সূত্র হল— পাখির পালক আছে, ডানা আছে এবং পাখি উড়তে পারে ইত্যাদি। 

[7] শ্রেণিকরণ ও নামকরণ : এই পর্যায়ে শ্রেণিকরণ ঘটে এবং সবশেষে নাম দেওয়া হয়। মােটকথা সামান্যীকরণের পর বস্তু বা বিষয়কে কোনাে শ্রেণিতে স্থান দিয়ে সেটিকে একটি বিশেষ নামে চিহ্নিত করা হয়। এই নামকে মনােবিজ্ঞানীরা ধারণাটির ভাষামূলক প্রতীক বলে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—পাখি বললে কেবল কাক বা কোকিলকে বােঝায় না, সব ধরনের পাখিকেই বােঝায়। 

এই ভাবেই ব্যক্তি বা শিশুর মধ্যে বিভিন্ন বস্তু, ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে কেবলমাত্র মূর্ত বস্তুকে কেন্দ্র করে ধারণা গঠিত হয়। পরবর্তীকালে বৌদ্ধিক বিকাশের অগ্রগতির সাথে সাথে সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফল হিসেবে তার মধ্যে সততা, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিমূর্ত ধারণাও গঠিত হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment