হিমালয় ভ্ৰমণ – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এখানে আমরা উচ্চমাধ্যমিক বাংলা থেকে হিমালয় ভ্ৰমণ – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। নীচে একটি অনুচ্ছেদ দেওয়া রয়েছে যেটা পড়ে তোমাকে হিমালয় ভ্ৰমণ এর উপর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করতে বলা হয়েছে। আমরা নীচে তার সমাধান করে দিলাম।

হিমালয় ভ্ৰমণ – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

অনুচ্ছেদঃ আমার সঙ্গের এক ভৃত্য এক বনলতা হইতে তাহার পুষ্পিত শাখা আমার হস্তে দিল। এমন সুন্দর পুষ্পের লতা আমি আর কখনও দেখি নাই; আমার চক্ষু খুলিয়া গেল, আমার হৃদয় বিকশিত হইল। আমি সেই ছোটো ছোটো শ্বেত পুষ্পগুলির উপরে অখিলমাতার হস্ত পড়িয়া রহিয়াছে দেখিলাম ৷ এই বনের মধ্যে কে বা সেই সকল পুষ্পের গন্ধ পাইবে, কে বা তাহাদের সৌন্দর্য দেখিবে? তথাপি তিনি কত যত্নে, কত স্নেহে তাহাদিগকে সুগন্ধ দিয়া, লাবণ্য দিয়া, শিশিরে সিক্ত করিয়া, লতাতে সাজাইয়া রাখিয়াছেন ৷

উত্তর:

হিমালয় ভ্রমণ

এই পাহাড়ি পথে চলতে চলতে প্রতিটি মুহূর্ত ঈশ্বরের পরম করুণা উপলব্ধি করলাম। নিজের মতো করে মানুষের অগোচরে তিনি যেন এই পাহাড়- উপত্যকাকে সাজিয়ে রেখেছেন। সামনেই একটি পাহাড়ি ঝোরা। রুপোলি জলধারা নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে। যেন এক অনাদি অনন্ত জীবনের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। আর তার যে কলধ্বনি তা-ই তো জীবনের মহাসংগীত ।

এক জায়গায় নদীর স্রোতধারা যেখানে সংকীর্ণ, সেখানে পাথরে পা দিয়ে আমাদের নদী পেরোতে হবে। আমার পথপ্রদর্শক বললেন শুকনো পাথরগুলোতে পা দিতে, অন্যথায় পা পিছলে যেতে পারে। আরও কিছুটা চলার পরে একটা পাহাড়ি গ্রাম পেলাম । দশ-বারো ঘর মানুষের বাস । ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো আমাদের দেখে উঁকিঝুকি দিচ্ছিল। দারিদ্র্যের ছাপ সকলের চেহারাতেই। মেষপালনই এদের জীবিকা। সভ্যতার আড়ালে পাহাড়ের আদিমতায় মিশে থাকা এই মানুষগুলো যেন আমাদের দেখে কিছুটা সংকুচিত। এদিকে বেলা শেষ হয়ে আসছে। তাই রাত্রিকালে এখানে থাকাই সমীচীন মনে হল। তাঁবু ফেলে পথপ্রদর্শক রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হল। আমি কম্বলের ভিতরে ঢুকে চা-সেবনে তৃপ্তি পেলাম। দীর্ঘ পথশ্রমে নিদ্রাচ্ছন্ন হতে সময় লাগল না। রাতের খাওয়াও যেন অনিচ্ছাতেই হল।

পরদিন সূর্যোদয় যথাযথ সময়ে হলেও আমাদের কাছে সূর্যের আলো পৌঁছোতে যথেষ্ট দেরি হল। চারপাশে ঘন কুয়াশা, তাপমাত্রাও বোধহয় হিমাঙ্কের নীচেই হবে। আজ যাত্রা শুরু করতে করতে বেলা প্রায় দশটা বেজে গেল। দু-দিনের পথশ্রমে শরীরও আর ধকল নিতে পারছে না। তবুও প্রতিটা মুহূর্তকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বিবেচনা করে চলতে লাগলাম পথপ্রদর্শক বললেন, আর ঘণ্টা-পাঁচেক চললেই আমরা সামনের পাহাড়শীর্ষে পৌঁছোতে পারব। এতক্ষণে চারপাশে রৌদ্রকিরণ স্পষ্ট হয়েছে। দূরের বরফঢাকা পর্বতশীর্ষে সেই সূর্যের আলোর প্রতিফলন যেন হীরককণার দ্যুতি সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বরের অপার্থিব সেই আয়োজনের দিকে আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। পথের আঁকেবাঁকে ফুটে আছে কত শ অজানা ফুল ৷ প্রকৃতি যেন তার স্রষ্টার জন্য প্রণতি সাজিয়ে রেখেছে। পাইন দেবদারুর সারিতে সবুজ পাহাড়ি উপত্যকার প্রেক্ষাপটে সামনের পাহাড়কে যেন ধ্যানগম্ভীর ঋষির মতো মনে হচ্ছিল।

পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে চোখে পড়ল একটা মন্দির। সেখানেই যাত্রায় সাময়িক বিরতি। একজন মাত্র সাধু ধুনি জ্বালিয়ে শিবের পুজো করছে। শিবলিঙ্গ নয়, মন্দিরে রয়েছে শিবের মূর্তি। কৈলাসশীর্ষে মহাদেব মানসচক্ষে জেগে উঠলেন। আপনা থেকেই মাথা নত হয়ে গেল। পুজো শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রসাদ খেয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম। লোকচক্ষুর আড়ালে এভাবেই পৃথিবীর প্রতিটি কোণে ঈশ্বর তাঁর জায়গা করে নিয়েছেন। নাগরিক মানুষ তীর্থ বলতে শুধু হট্টগোল আর প্রচুর অর্থব্যয়ে সঞ্চয় করা একধরনের আত্ম-প্রসাদকেই বোঝে।

বেলা প্রায় তিনটের সময় পর্বতশীর্ষে আরোহণ করলাম। সামনে তুষারাবৃত পর্বতমালা, মখমলের মতো সবুজ ঢালে কিছু পাহাড়ি বাড়িঘর। দু-চারটি ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাথার উপরে স্বচ্ছ নীল আকাশ। সৃষ্টির সেই অনন্ত বিস্তারের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বাক্রদ্ধ হয়ে গেলাম, পথশ্রমের সমস্ত ক্লান্তি গেল সরে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment