জীবনস্মৃতি – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করো

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এখানে আমরা উচ্চমাধ্যমিক বাংলা থেকে জীবনস্মৃতি – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। নীচে একটি অনুচ্ছেদ দেওয়া রয়েছে যেটা পড়ে তোমাকে জীবনস্মৃতি এর উপর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা করতে বলা হয়েছে। আমরা নীচে তার সমাধান করে দিলাম।

জীবনস্মৃতি – পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনা

অনুচ্ছেদঃ ছেলেবেলার দিকে যখন তাকানো যায়, সবচেয়ে এই কথাটা মনে পড়ে যে, তখন জগৎটা এবং জীবনটা রহস্যে পরিপূর্ণ। সর্বত্রই যে একটি অভাবনীয় আছে, এবং কখন যে তাহার দেখা পাওয়া যাইবে তাহার ঠিকানা নাই, এই কথাটা প্রতিদিনই মনে জাগিত। প্রকৃতি যেন হাত মুঠা করিয়া জিজ্ঞাসা করিত, কী আছে বলো দেখি ? কোটা থাকা যে অসম্ভব, তাহা নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারিতাম না ।

উত্তর:

জীবনস্মৃতি

ছেলেবেলা মানে দু-চোখে রঙিন স্বপ্ন। ছেলেবেলা মানে কল্পনার সোনালি জগতে ভেসে বেড়ানো। ছেলেবেলার পরতে পরতে অগাধ বিস্ময় আর অনন্ত কৌতূহল জড়িয়ে থাকে। মা-ঠাকুমার মুখে শোনা রূপকথার গল্প অবিশ্বাসের সাঁকো পেরিয়ে মনের মধ্যে জীবন্ত হয়ে ওঠে। কল্পনার দেশের রাক্ষস-খোক্কস, দৈত্য-দানোরা যেন জানলার পেছনে বট গাছটার অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। অন্ধকার নামলেই তারা বেরিয়ে আসবে সেখান থেকে। তাই মার কোলে মুখ লুকিয়ে তাদের হাত থেকে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা চলে । এর সঙ্গে যদি বিদ্যুৎ চমকায় বা বাজ পড়ে তাহলে তো কথাই নেই, সব অশরীরী চরিত্ররাই যেন খাটের পাশে উল্লাসে নৃত্য করছে বলে মনে হয়।

শুধু কী রাতের বেলা! স্কুল থেকে ফেরার পথে সামনে যে মোটাসোটা লোকটাকে দেখা গেল—আড়ে আড়ে তাকাচ্ছে—তাকে ছেলেধরা ভেবে হাড় হিম হয়ে যায়, ভাগ্যিস পাশের বাড়ির আন্টি যাচ্ছিলেন সে সময় ওখান দিয়ে। গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দুপুরবেলা দোতলায় একলা শুয়ে থাকতে থাকতে ভয়ের আর-এক অনুভূতি। এরকম পুরোনো বাড়িতেই তো তাঁদের উপদ্রব। অতএব মা-কে খোঁজা, একটু আগে মোচার ঘণ্ট খাওয়ানোর জন্য যার সঙ্গে আমার প্রবল ঝামেলা হয়েছিল।

শুধু কী ভয়! বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে চোখে পড়ে আকাশে উড়ে যাচ্ছে পাখিদের ঝাঁক। ওরা কোন্ দেশের বাসিন্দা! ওদের জন্য কোনো কাঁটাতার নেই, ওদের পাসপোর্টও লাগে না। আচ্ছা, ওদের মা-বাবারা কি ওদের বকে না? না কি তারা ওদের সঙ্গেই উড়ে চলে? ব্যাপারটা তাহলে বেশ মজার ৷ রোজ সকালে যখন পড়তে বসতাম জানলার বাইরে টবের ফুল গাছটায় এসে বসত একটা চড়ুই। দশ হাত দূরত্বে থাকলেও সে আমাকে গ্রাহ্য করত না। নিজের ভাষায় কত কথাই বলত। আমার মনে হত ওদের কোনো স্কুল নেই, বর্ণলিপি নেই। কত আনন্দেই আছে ওরা! সে চড়াই-এর সঙ্গে আজ আর আমার দেখা হয় না। কাগজে পড়লাম শহর কলকাতায় মোবাইলের টাওয়ারের বিকিরণের জন্য চড়ুইয়ের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে।

অফিস থেকে বাবার ফেরার অপেক্ষা–হয়তো আসবে টুকিটাকি কোনো উপহার, নতুন বইয়ের মলাটে মুখ গুঁজে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। আমগাছে কবে মুকুল আসবে তার জন্য অপেক্ষা—সেই বিস্ময়, কৌতূহল আর নিজেকে হারিয়ে ফেলার দিনগুলো আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। প্রতিদিনের প্রতিষ্ঠা আর সাফল্যকে খুঁজে নেওয়ার ব্যস্ততাতেই এখন দিন চলে যায়। ছেলেবেলার সেই ফেরিওয়ালারা আজ আর সুর করে হেঁকে যায় না বাড়ির সামনে দিয়ে। কাগজের নৌকা জলে ভাসে না। আকাশে একলা চিল কি আজও উড়ে চলে? হয়তো ওড়ে, কিন্তু তার খোঁজ কে রাখে? জীবনপথে আজ এসে জমা হয়েছে অজস্র হিসেবনিকেশের বালি-কাঁকর। জটিলতার গ্রন্থি ঘিরে আছে আমাদের, এখান থেকে পরিত্রাণের পথ নেই। ছেলেবেলা তাই আজ টিকে আছে এক আশ্চর্য রূপকথার মতো। যে রূপকথার হারিয়ে যাওয়া চরিত্র হয়তো আমরা সবাই।

মনে পড়ে সেই প্লাস্টিকের বল আর ভাঙা গাড়িটার কথা। একটা একটা করে তার সবকটা চাকাই আমার প্রযুক্তিবিদ্যার সৌজন্যে অবলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের মাথার পাশে নিয়ে ঘুমোনো চাই-ই। নিয়ম করে আজও ঘুমোতে যাই, কিন্তু খেলনাগুলো হারিয়ে গেছে মনের কোন্ গহীন গাঙে। এভাবেই স্মৃতিধর মানুষ বেঁচে থাকে। আর শৈশবের সেই সবুজের গুঁড়ো আচমকাই এসে কখনো-কখনো লাগে তার ক্লান্ত চোখেমুখে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!