নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি আলােচনা করাে

নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি আলােচনা করাে Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks

উত্তর:

নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি : 

বর্তমান সামাজিক কাঠামােয় নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জনগণকে শিক্ষিত করে তােলার প্রথা প্রচলিত থাকলেও মানবজীবনের সব ধরনের সামাজিক ও ব্যক্তিগত চাহিদাগুলি এই শিক্ষার মাধ্যমে পরিতৃপ্ত করা সম্ভব হয় না। তাই এই শিক্ষার মধ্যেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি লক্ষ করা যায়। 

[1] কৃত্রিম পরিবেশ : নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষা বিদ্যালয়ের কৃত্রিম পরিবেশে সংগঠিত হয়। কৃত্রিম পরিবেশে শিক্ষার মতাে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কখনও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হতে পারে না। সুতরাং, এটিকে একটি সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। 

[2] শিক্ষার্থীর আগ্রহের প্রতি অবহেলা : নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষা একটি নির্দিষ্ট কাঠামাের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়। ফলে ছাত্রছাত্রীদেরকে পূর্বনির্ধারিত পাঠক্রম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ শেষ করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ পছন্দ-অপছন্দের প্রতি লক্ষ রাখার সুযােগ থাকে না। ইচ্ছার বিরুদ্ধেও বহু অভিজ্ঞতা ও বিষয়কে আয়ত্ত করতে হয়। 

[3] সামঞ্জস্যের ঘাটতি : নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষায় পাঠক্রম যেহেতু পূর্বনির্ধারিত, তাই শিক্ষর্থীদেরকে ওই পাঠক্রমের বিষয়গুলিকেই আয়ত্ত করতে হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিষয়গুলি আবিষ্কৃত হয়। সেগুলিকে নিয়মিত পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার কোনাে ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান করে চলা অসুবিধাজনক হয়। 

[4] পদ্ধতি নির্বাচনে ত্রুটি : নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার উৎকর্ষ নির্ভর করে সঠিক শিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়ােগের ওপর। উপযুক্ত পদ্ধতির পরিবর্তে যদি ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতির প্রয়ােগ হয়, তাহলে সমগ্র শিক্ষা প্রক্রিয়ার ওপর তার প্রভাব পড়ে। ভুল বা অনুপযুক্ত পদ্ধতি প্রয়ােগের কারণে শিক্ষার্থীর মধ্যে অনীহার সৃষ্টি হয়। এর ফলে তার সমগ্র শিক্ষাজীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

[5] মানবশক্তির অপচয় : নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষায় সব ধরনের ছাত্রছাত্রীকে একই স্থানে একই পদ্ধতিতে এবং একই পাঠক্রমের ভিত্তিতে পাঠদান করা হয়। এতে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক সময় তারা মানিয়ে নিতে না-পেরে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয়। এর ফলে মানবশক্তির অপচয় ঘটে। 

[6] বৈচিত্র্যহীন শিক্ষা : নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষার পাঠক্রমে তেমন কোনাে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। ফলে এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে তেমনভাবে আকৃষ্ট করে না। বরং বৈচিত্র্যহীনতার কারণে শিক্ষা তাদের কাছে হয়ে ওঠে নীরস বস্তু।

[7] বড্ড বেশি নিয়মতান্ত্রিক : প্রথাগত নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার পাঠক্রম, পদ্ধতি, সময়, প্রবেশের বয়স সবদিক থেকেই বাধ্যতামূলক। এককথায়, এই ব্যবস্থা অনেক বেশি নিয়মতান্ত্রিক।

[8] বাস্তবের সঙ্গে সংগতিহীন : প্রচলিত নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত শিক্ষা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এই শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে বেশির ভাগই বেকার। যারা কোনাে-না-কোনাে কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগেরই কাজের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার তেমন কোনাে সম্পর্ক নেই। সমাজ এবং মানুষের প্রয়ােজনেই নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু এই শিক্ষা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়ােজন মেটাতে পারছে না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment