পাবনা বিদ্রোহের দিকগুলি আলােচনা করাে।

পাবনা বিদ্রোহের দিকগুলি আলােচনা করাে। 8 Marks/Class 10

উত্তর:

ভূমিকা : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার কম বিদ্রোহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য দুটি বিদ্রোহ ছিল নীলবিদ্রোহ এষ ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের পাবনা বিদ্রোহ। 

বিদ্রোহের কারণ : পাবনা বিদ্রোহের কারণগুলি হল—

১) ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি : ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী জমিদাররা তিনটি কারণ দেখিয়ে ভূমি রাজস্ব বৃদ্ধি করে এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি পাবনার কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের অবৈধ খাজনা আদায় করা শুরু করে। 

২) প্রতিকারের চেষ্টার ব্যর্থতা : ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর পাবনার কৃষকরা আইনসম্মত উপায়ে এই শােষণ ও অত্যাচারের প্রতিকার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। 

৩) জোটবদ্ধতা : আইনানুগ পথে কৃষক সমস্যার প্রতিকার না হলে ঈশানচন্দ্র রায় নামে এক সম্পন্ন কৃষকের নেতৃত্বে কৃষকেরা জোটবদ্ধ হয়ে পাবনা বিদ্রোহ শুরু করে। 

বিদ্রোহের বিস্তার : জমিদাররা খাজনা বৃদ্ধি করায় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই বিক্ষোভের আগুন একটু একটু করে ছড়াতে থাকে। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাবনার ইউসুফজাই পরগনার কৃষকরা একটি কৃষক সমিতি গঠন করে, যার উদ্দেশ্য ছিল খাজনা বৃদ্ধি প্রতিরােধ করা। এরা বিভিন্নভাবে খাজনা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে খাজনা দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। পাবনার অধিকাংশ কৃষক মুসলিম এবং জমিদাররা হিন্দু হলেও এই আন্দোলনে কোনােরকম সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব ছিল না। 

তাৎপর্য : ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে বেআইনি খাজনা ও খাজনাবৃদ্ধির কারণে সংঘটিত পাবনা বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও তাৎপর্যহীন ছিল না, কারণ— 

১) ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন : পাবনার অধিকাংশ কৃষক মুসলিম এবং জমিদার হিন্দু হলেও এই আন্দোলনে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ঘটেনি বা সংঘাতের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। 

২) জমিদার বিরােধিতা : পাবনা বিদ্রোহ ছিল জমিদার বিরােধী কিন্তু তা ইংরেজ বিরােধী ছিল না। তাই এই বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান নয়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রজাস্বার্থ রক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

৩) রায়ত সভা গঠন : পাবনার কৃষক বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলার কৃষকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠার প্রেরণা লাভ করে এবং রায়ত সভা গঠনের মাধ্যমে কৃষক সংগঠন গড়ে ওঠে। 

৪) বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তন : পাবনা বিদ্রোহের অন্যতম দাবি ছিল ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রজাস্বত্ব অক্ষুন্ন রাখা। তাই প্রজাস্বত্ব রক্ষার জন্য ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাস করা হয়।

উপসংহার : ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতে, পাবনার কৃষকদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার অভাব ছিল। নীল বিদ্রোহের তুলনায় পাবনার কৃষক বিদ্রোহ ছিল আদর্শগতভাবে সীমাবদ্ধ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment