পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও তার প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা ও তার প্রতিকার 

ভূমিকা: 

“জলের উচ্ছ্বাস, নাম তার বন্যা,
অসহায় মানুষের বুকফাটা কান্না।” 

নদীমাতৃক বঙ্গদেশের দুঃস্বপ্ন বন্যা’। নদী আমাদের ধাত্রী, আবার নদীই আমাদের নিয়তি। আবার আকাশ ভরা যে মেঘের শােভা আমাদের বুকে আশা জাগায়, সেই মেঘ অঝাের ধারাবর্ষণে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বাঙালির এ এক অলঙ্ঘ্য বিধিলিপি।

বন্যার কারণ ও উৎস : অত্যধিক বর্ষণ বা বিপুল বৃষ্টিপাত, সমুদ্রের জলােচ্ছ্বাস প্রভৃতি বন্যার মূল কারণ। এ ছাড়া, অত্যধিক বর্ষণে নদী ও জলাধারের জলস্ফীতির ফলে বন্যা হয়। বন্যার ফলে মাইলের পর মাইল জমি, ঘরবাড়ি, ফসল সবই জলের তলায় চলে যায়।

বর্ষা ও বন্যা: বর্ষে বর্ষে বন্যা হানে’—আমাদের এই দেশের সঙ্গে বন্যার একটি দুর্নিবার আত্মীয়তাও রয়েছে। আমাদের এই রাজ্যে বন্যা একটা বাৎসরিক দুর্বিপাকের মতাে হয়ে উঠেছে। বিশেষত বর্ধমান, হাওড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম, মুরশিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাগুলির বিভিন্ন অংশ সম্বচ্ছর বন্যার কবলে পড়ে। প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহে, রুক্ষ, দগ্ধ ধরিত্রীর বুকে স্বস্তির আনন্দ বহন করে আনে বর্ষা। আর বর্ষার ছন্দে বৃষ্টির প্রাচুর্যে বা জলধারার বাধ্যবন্ধনহীন প্রগলভতায় আমাদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় প্রতি বছরই বন্যার প্রকোপ অকস্মাৎ ধেয়ে আসে। কিন্তু যাত্রাশেষে রেখে যায় মহাধ্বংসের চিহ্ন—মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নসৌধের বিস্তীর্ণ ধ্বংসাবশেষ।

বন্যার তাণ্ডব : বন্যার তাণ্ডবে বাড়ি, মাঠঘাট সবই জলমগ্ন হয়। চারিদিক একাকার হয়ে যায় জলে। মাইলের পর মাইল জুড়ে কেবলমাত্র বিস্তীর্ণ জলরাশি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। রাত্রে যেখানে ছিল মানুষের বসতি, সকালবেলায় সেখানে দেখা গেল বিপুল জলাশয়। এক নবতর সমুদ্র যেন কৌতুকহাস্যে আমাদের ব্যঙ্গ করতে থাকে। ভেসে যায় শহর-গ্রাম-গঞ্জ। বানভাসি অসহায় মানুষের দিন কাটে খােলা আকাশের নীচে, অথবা গাছের ডালে, উঁচু ডাঙায়। জলের স্রোতের মতােই ভেসে যায় জীবনস্রোত। চারিদিকে জল, কিন্তু তুয়া মিটানাের জল নেই, ‘Water, water everywhere, not a drop to drink’, পেটে ভাত নেই, লজ্জা নিবারণের বস্ত্র নেই, মাথায় ছাদ নেই। বন্যার পায়ে পায়ে আসে আধি-ব্যাধি, এমনকি মহামারিও। বন্যাত্রাসিত মানুষের দুঃখদুর্দশা সত্যই অবর্ণনীয়।

বন্যার সুফল : তবে বন্যা শুধুমাত্র ধ্বংসসাধন করে না। এই বন্যার কিছু কিছু শুভ দিকও রয়েছে। বন্যা শক্ত ও পতিত জমিকে জল সরবরাহ করে স্থলভাগ থেকে জমা আবর্জনা সরিয়ে দিয়ে পলি দ্বারা আবৃত করে মাটিকে উর্বর করে রাখে।

উপসংহার: বন্যা প্রতিরােধ: মানুষ যদি সচেষ্ট হয়, প্রকৃতির এই ভয়াবহ বিপদকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব বা শক্ত নয়। উপযুক্ত সময়ে নদীর বুকে উঁচু এবং শক্ত বাঁধ নির্মাণ করে বর্ষার উচ্ছ্বসিত জলরাশি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে রাখা বন্যা প্রতিরােধের শ্রেষ্ঠ উপায়। এজন্য নদীগর্ভকে গভীরতর করে নদীকে অতিরিক্ত জলধারণের যােগ্য করে তুলতে হবে। বেশ কিছু খাল খনন করে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বর্ষাকালের অতিরিক্ত জলকে ধরে রাখবার জন্য অতিকায় জলাধার নির্মাণ করতে হবে। জলনিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। বানভাসি মানুষ, প্রাণীসম্পদ ইত্যাদি সুরক্ষায় আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে আগাম আবহবার্তা দিয়ে সকলকে সতর্ক করতে হবে।

আরো পড়ুন

মঙ্গল অভিযানে ভারত  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ভূস্বর্গ ভূমিকম্প – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি উৎসব স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

ছুটির দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment