প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার উদ্দেশ্য কী | প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি লেখাে।

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার উদ্দেশ্য কী? প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি লেখাে।  4 + 4 

উত্তর: 

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার উদ্দেশ্য : 

বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিভিন্ন সময়ে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার নানান উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। এখানে সেই সকল উদ্দেশ্যের কয়েকটি উপস্থাপন করা হল : 

[1] স্কুলছুটদের শিক্ষার সুযােগ সৃষ্টি করা : আমাদের দেশের বহু ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ে, মহাবিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে করতে বিভিন্ন কারণে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয় বা দিতে বাধ্য হন। ওই সব স্কুলছুট শিক্ষার্থীদের পুনরায় শিক্ষাক্রমে বা লেখাপড়ার মধ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। 

[2] কার্যকারী সাক্ষরতার ব্যবস্থা করা : দেশের বহু মানুষ আজও বিভিন্ন কারণে নিরক্ষর। ওইসব মানুষকে কার্যকরভাবে সাক্ষর করে তােলার জন্য প্রথাবহির্ভুত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

[3] ব্যক্তিকে স্বনির্ভর করে তােলা : দেশের প্রতিটি মানুষকে কোনাে কাজ বা পেশার উপযােগী করে গড়ে তােলার জন্য তথা স্বনির্ভর করার জন্যও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

[4] পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করা : বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সেই উদ্দেশ্যও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

[5] নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে কাজ করা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার অপর একটি উদ্দেশ্য হল—এটি নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। প্রবল জনসংখ্যার চাপে সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার সুযোগদান করা যায় না। সেক্ষেত্রে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা নেয়।

[6] জীবনব্যাপী শিক্ষার ব্যবস্থা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার মাধ্যমে যে-কোনো ব্যক্তি সারাজীবন ধরে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকে। তাই বলা যায়, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা। 

উপরোক্ত, উদ্দেশ্যগুলি ছাড়াও আরও অনেকগুলি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা করা হয়। সেগুলি হল : (i) সুযোগ্য নাগরিক সৃষ্টি, (2) সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা, (3) দারিদ্র্য দূরীকরণ, (4) ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সীমাবদ্ধতা : 

জনশিক্ষার বিস্তারে এবং শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণের পটভূমিকায় প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার অবদান এককথায় অনস্বীকার্য। তথাপি এই শিক্ষাব্যবস্থাতেও বহু সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি লক্ষ করা যায়। এখানে কয়েকটি সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটির উল্লেখ করা হল :

[1] সমস্ত চাহিদা পূরণে অপারগ : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যেহেতু নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায় না, প্রয়োজন অনুসারে স্বল্পকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে বা অন্য কোনো স্থানে হাজির হয়ে পাঠ গ্রহণ করে, তাই এই ব্যবস্থার দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক—সব ধরনের চাহিদা পূরণ করা যায় না।

[2] সহযোগিতার ঘাটতি : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু নিজেরাই বাড়িতে বসে শিক্ষাগ্রহণ করে, তাই তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণাবলির বিকাশের সুযোগ ঘটে না। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক মূল্যবোধও গড়ে ওঠে না।

[3] ফিড-ব্যাকের ঘাটতি : এই জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় যেহেতু নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া ঘটে না, তাই ফিড-ব্যাকের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উদ্ভূত শিখন বিষয়ক জিজ্ঞাসা বা অসুবিধাগুলি দূর করা সম্ভব হয় না।

[4] শংসাপত্রের গ্রহণযোগ্যতা কম : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা থেকে অর্জিত শংসাপত্রগুলিকে অনেকক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত শংসাপত্রের তুলনায় নিম্নমানের মনে করা হয়।

[5] আংশিক শিক্ষা : প্রথাবহির্ভূত শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যেহেতু নিজে নিজেই পড়াশোনা করে, খুব একটা শিক্ষক-শিক্ষিকার সান্নিধ্য পায় না, তাই অনেক কিছু বিষয় সম্পর্কে তারা জানতে পারে না। ফলে তাদের আংশিক বিকাশ ঘটে, সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটতে পারে না। তাই অনেকে প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাকে আংশিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment