শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান

শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান
অথবা, শিক্ষার লক্ষ্য, শিক্ষার পাঠক্রম, পুস্তক প্রণয়ন এবং জনশিক্ষা সম্পর্কে রাজা রামমােহনের অবদান সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

উত্তর : 

শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান : 

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা দেশে নবজাগরণের তথা ভারতের নবজাগরণের প্রথম পর্যায়ে রামমােহন রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তৎকালীন ভারতবর্ষে শিক্ষাক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে শুধু অবক্ষয়। তিনি শিক্ষা, সামাজিক, ধর্মীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে নতুন ভারতের মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। 

[1] শিক্ষার লক্ষ্য : তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্যের উৎকৃষ্ট অবদানগুলি প্রাচ্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গ্রহণ করার বিষয়ে উদ্যোগী ছিলেন। তাঁর শিক্ষাচিন্তার মূল লক্ষ্য ছিল—
(i) পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকগুলি গ্রহণ করে দেশীয় শিক্ষার পুনরুজ্জীবন। 

(ii) ভারতীয় শিক্ষার উন্নত দিকগুলি সংরক্ষণ ও প্রসার। 

(iii) ভারতীয় জনগণকে সংস্কারমুক্ত করে আধুনিক করে তােলা। 

(iv) ভারতবাসীর মূল্যবােধের বিকাশসাধন। 

[2] শিক্ষার পাঠক্রম : ভারতীয়দের উন্নয়নের জন্য সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ইত্যাদি দেশীয় ভাষা ছাড়া ইংরেজি ভাষা শিক্ষার গভীর প্রয়ােজন অনুভব করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষার পাঠক্রমে গণিত, দর্শন, রসায়ন, অস্থিবিদ্যা, যন্ত্রবিদ্যা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মতপ্রকাশ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত অ্যাংলাে-হিন্দু বিদ্যালয়ে, ইউক্লিডের জ্যামিতি, কারিগরিবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয় পড়ানাের ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত বেদান্ত কলেজে হিন্দু দর্শন ও সাহিত্যের সঙ্গে ইংরেজি ও বিজ্ঞান পড়াশােনার ব্যবস্থা করেন। 

[3] পুস্তক প্রণয়ন : সাহিত্যে সংস্কৃত ভাষার বাহুল্য সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। তাই রামমােহন রায় বাংলা ভাষায় ধর্ম-বিষয়ক পুস্তক, ব্যাকরণ, শাস্ত্ৰবিচার প্রভৃতি রচনা করেন। তার প্রথম গদ্যগ্রন্থ—বেদান্ত গ্রন্থ, ব্যাকরণ । বই—গৌড়ীয় ব্যাকরণ, অনুবাদের বই—বিভিন্ন উপনিষদের অনুবাদ। তাঁর পুস্তক সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল—ভারতবাসীকে নতুন করে জাগিয়ে তােলা। 

জনশিক্ষা সম্পর্কে রামমােহনের অবদান : 

রামমােহন রায়ের জনশিক্ষার প্রসারে প্রয়াস ভারতীয় সমাজকে উন্নততর করেছিল। তিনি মনে করতেন শিক্ষাই মানুষকে প্রকৃত পথের সন্ধান দিতে পারে। জনশিক্ষার জন্য তিনি পত্রপত্রিকা, পুস্তক, প্রবন্ধ প্রণয়ন করেন। তার উল্লেখযােগ্য প্রকাশনা সম্বাদ কৌমুদি’, ‘মিরাৎ-উল-আখবার’, দ্য ব্রাত্মনিকাল ম্যাগাজিন ইত্যাদি। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকাগুলি তৎকালীন সমাজ, ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি বিষয়ক সমালােচনা এবং জাতির সংস্কারমুক্তির পথের দিশা।

উপসংহার :

রামমােহনের ধর্মীয়, সামাজিক শিক্ষাসংস্কার সম্পর্কে চিন্তাধারা ভারতবাসীকে পুনঃজাগরিত করেছিল। প্রাচ্য শিক্ষার সঙ্গে পাশ্চাত্য শিক্ষার সংযােগ দ্বারা ভারতীয় জনশিক্ষার পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকীকরণ করা সম্ভব হয়েছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment