শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলো 

ভূমিকা : এখন আমি এক তরুণ কিশাের। সবে শৈশব অতিক্রম করে এসেছি। তা শৈশব অতিক্রম করে এলেও, শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলির কথা আমার খুবই মনে পড়ে। ওই দিনগুলি ভীষণ সুখের ছিল এবং মজারও ছিল। 

অচেতন শৈশব থেকে সচেতন শৈশবে : মায়ের কোল ছেড়ে টলমল করে চলার দিন থেকে আমার প্রকৃত শৈশব শুরু হয়েছিল। তখন সবে দুরন্ত হয়েছি, দৌড়ে বেড়াই। সেই সময়কার এক মজার সন্ধ্যার কথা মনে পড়ছে। পিসির কাছে এক ছায়াধরার’ ছড়া শুনেছিলাম। আলাের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পিসি দুলে দুলে সেটি পড়ছিলেন এবং পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিসির ছায়াও দুলছিল দেয়ালে। আমি দৌড়ে গিয়ে ওই ছায়া ধরতে চেষ্টা করলাম। পিসি পাশের ঘরে সরে গেলেন, ছায়াও গেল হারিয়ে। আমি কেঁদে উঠলাম। আমার শৈশবস্মৃতির সেখান থেকেই শুরু। ছায়া যে বাস্তব নয়, সে-যে কেবল ছায়ামাত্র, সেদিন তা আমার ধারণায় ছিল না।

রূপকথার জগৎ : এই বাস্তববােধের অভাব আমার শৈশবের দিনগুলিকে খুবই মাতিয়ে তুলেছিল। অবাস্তব এবং আজগুবি চিন্তায় আমার মন সেদিন ছিল উদবেল। পিসির মুখে হরেকরকম রুপকথার গল্প আমি শুনেছি, শুনতে শুনতে সেই রূপকথার জগতের আমি বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিলাম। রাজপুত্র ও রাজকুমারীদের যেন চোখের সামনে তখন দেখতে পেতাম। দেখতে পেতাম রাক্ষস-রাক্ষসীদের। গাছের কোটরে বসে থাকা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমিদেরও খুব মনে পড়ে। আর পক্ষীরাজ ঘােড়ায় চড়ে আমি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে চলে যেতাম রাজকুমারীর ঘুম ভাঙাতে। শৈশবের এই দিনগুলিতে ওই রূপকথার জগৎ ছিল আমার কাছে বাস্তব সত্য।

পৌরাণিক গল্প, হাসান-হুসেনের কথা, ঘটোৎকচ: আমাকে ভীষণভাবে মােহিত করত রামায়ণ-মহাভারত এবং পৌরাণিক গল্পগুলি। সীতার দুঃখে ভারি কষ্ট পেতাম। রাগ হত খুব রাবণ রাজার ওপর। মহরমের কাহিনি শােনার পর হাসান-হুসেনের দুঃখে আমার চোখ ভেসে গিয়েছিল কান্নার জলে। মহাভারতের কাহিনি শুনে আমার ভারি পছন্দ হয়ে গিয়েছিল ঘটোৎকচকে। আমার তখন মনে হত, এই ঘটোৎকচকে সঙ্গে পেলে আমি বিশ্বজয় করতে পারতাম।

প্রকৃতির জগৎ, পাখি : আমার শৈশবের দিনগুলি যে বাড়িতে কেটেছে, তার সামনেই ছিল একটি বাগান। এ বাগানে ছিল অনেক গাছগাছালি এবং অনেক ফুলের সমারােহ। এখানে ছিল হরেক রকমের পাখিদের আনাগােনা। বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেক গাছগাছালির সঙ্গে আমার ভাব হয়ে গিয়েছিল। তারা আমার ভাষা বুঝত এবং আমিও তাদের ভাষা কিছু কম বুঝতাম না। অনেক ফুলের সঙ্গে ছিল আমার মিতালি। পাখিরা মাঝে মাঝে উড়ে এসে তাদের কথা আমাকে বলে যেত।

টুনটুনির বই: এইসময় পিসি আমাকে মজার একটি বই পড়ে শুনিয়েছিলেন, বইটিতে টুনটুনির কথা বলা ছিল। বলা ছিল, দুষ্টু বেড়াল, বাঘ, কুমির এবং শেয়ালের বৃত্তান্তও। তাদের কথা শুনতে শুনতে একদিন তারাও আমার সহচর হয়ে গিয়েছিল। তারা আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যেতে চাইত, শহর ছাড়িয়ে অনেক দূরে। সেইসব অনুভূতির স্মৃতি এখনও আমাকে আবেগে আপ্লুত করে। 

উপসংহার : শৈশবের ওই ফেলে আসা দিনগুলিতে তারা-ভরা আকাশ এবং আকাশ-ভরা চাদ আমার মনে বিস্ময় সৃষ্টি করত। তখন বাস্তব ও অবাস্তবের সীমানা নির্দিষ্ট কিছু ছিল না। সব কিছুই একাকার হয়ে গিয়েছিল। এইরকমই ছিল আমার শৈশবের দিনগুলি।

আরো পড়ুন

ছুটির দিন – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

বিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ঝড়ের রাত – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা l

একটি বৃষ্টিমুখর দিনের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment