শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে ছাপাখানার বিস্তারে সাহায্য করেছিল তা ব্যাখ্যা করাে। এ প্রসঙ্গে ছাপাখানার বিস্তারে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদানকে চিহ্নিত করাে

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে ছাপাখানার বিস্তারে সাহায্য করেছিল তা ব্যাখ্যা করাে। এ প্রসঙ্গে ছাপাখানার বিস্তারে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদানকে চিহ্নিত করাে। ৫+৩ | Class 10

উত্তর : প্রথম অংশ : ছাপাখানার বিস্তার শ্রীরামপুর মিশন : বাংলায় ছাপাখানা ব্যবস্থার বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস।

মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা : খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি বাংলা ভাষায় বাইবেল ছাপানাের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও (১৭৯৮খ্রি.) তা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় নিজেই ছাপাখানা প্রবর্তন করে ছাপানাের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠিত হলে (১৮০০ খ্রি.) কেরি এখানেই শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করেন। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই এই ছাপাখানা। স্বয়ংসম্পূর্ণ ছাপাখানায় পরিণত হয়। 

মিশন প্রেসের উৎপাদন – শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের ছাপা বইগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— 

১। ধৰ্ম্ম পুস্তক’ : প্রাথমিক পর্বে কেরির সহযােগী অভিজ্ঞ ও দক্ষ মুদ্রাকর ওয়ার্ড এবং পানন কর্মকার কলকাতা থেকে সংগৃহীত হরফ এবং কিছু পাটনাই ও বিদেশি কাগজ সহযােগে ছাপার কাজ শুরু করেন। নিউ টেস্টামেন্টের প্রথম অধ্যায়টির বাংলা অনুবাদ করে কেরি ১০৭ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট ‘মঙ্গল সমাচার মাতিউর রচিত’ নামে প্রকাশ করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে আটশােরও বেশি পৃষ্ঠাযুক্ত ‘ধৰ্ম্মপুস্তক’ বা বাংলা বাইবেল প্রকাশ করেন। 

২। অন্যান্য বই : শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে রামরাম বসুর রচিত হরকরা’ ও ‘জ্ঞানােদয়’ নামক দুটি গ্রন্থ (আগস্ট সেপ্টেম্বরে, ১৮০০ খ্রি.) মুদ্রিত হয়। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই প্রেসে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের বত্রিশ সিংহাসন’ (১৮০২ খ্রি.), ৪ খণ্ডে কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’ (১৮০১-০৩) ও পাঁচ খণ্ডে। কীর্তিবাসের রামায়ণ’ (১৮০২-০৩) প্রভৃতি সহ ৪০ টি বিভিন্ন ভাষায় ২,১২,০০০ কপি বই মুদ্রিত হয়। 

৩।পাঠ্যপুস্তক : শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকও মুদ্রিত হয়েছিল। এই সব পুস্তকের রচয়িতা ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামরাম বসু, চণ্ডীচরণ মুন্সী, হরপ্রসাদ রায় প্রমুখ।

উপরের আলােচনা থেকে দেখা যায় যে, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপিত হলেও তার উৎপাদনে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ও ছিল।

দ্বিতীয় অংশ : ছাপাখানার বিস্তারে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ : প্রশাসনিক প্রয়ােজনে প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সিভিলিয়ানদের ইংরেজির পাশাপাশি দেশীয় ভাষাতেও শিক্ষাদান করা হত। তাই এরকম শিক্ষাদানের জন্য বাংলায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকের প্রয়ােজনীয়তা থেকেই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানা সহ সংস্কৃত প্রেস, হিন্দুস্থানি প্রেস-এ গ্রন্থ ছাপারও বরাত (Order) দিত। এভাবেই বাংলা মুদ্রণ শিল্পে গতির সৃষ্টি হয়। 

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment