সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব বা উপযােগিতা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব বা উপযােগিতা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 

উত্তর : 

সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শিক্ষামূলক গুরুত্ব বা উপযােগিতা : 

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। এই কার্যাবলির প্রধান উপযােগিতাগুলি হল— 

[1] শারীরিক বিকাশ : বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলাে ও শরীরচর্চামূলক কাজে অংশগ্রহণ করলে ছাত্রছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যথেষ্টভাবে সঞ্চালিত হয়। এর ফলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিস্ফুট হয় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। যেহেতু মনের স্বাস্থ্য দেহের স্বাস্থ্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, সেইজন্য এই কাজগুলির মাধ্যমে মানসিক ও দৈহিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। 

[2] জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা : কেবলমাত্র গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জিত হয়—এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। বাস্তব পরিবেশের সংস্পর্শে এসে প্রকৃত জীবনভিত্তিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থী তার সত্যিকারের প্রয়ােজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতাগুলি অর্জন করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিগুলি ছাত্রছাত্রীকে তাদের বাস্তব জীবন থেকে এই প্রয়ােজনীয় জ্ঞান ও কৌশলগুলি আয়ত্ত করতে সাহায্য করে। 

[3] চাহিদার পরিতৃপ্তিতে সহায়তা : প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর রুচি, চাহিদা, প্রবণতা ইত্যাদির কোনাে স্থান ছিল না। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় বিদ্যালয়ে নানান ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির আয়ােজন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা ও প্রবণতাগুলির সম্পর্কে সচেতন হয় এবং একইসঙ্গে সেগুলির পরিতৃপ্তি ও বিকাশ ঘটে।

[4] পাঠ্যসূচির পরিপূরক : বাস্তবে দেখা গেছে নানান ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শ্রেণিশিক্ষণের ক্ষেত্রে পাঠক্রমের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। যেমন—শিক্ষামূলক ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইতিহাস, ভূগােল ও পরিবেশ বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। বিতর্ক ও আলােচনা সভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সাহিত্য ও ভাষামুলক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। 

[5] আত্মপ্রকাশে সহায়তা : বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে ছাত্রছাত্রীদের অন্তর্নিহিত গুণাবলির বিকাশসাধন হয়। ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রবণতা, ক্ষমতা ও সম্ভাবনাগুলির বিষয়ে সচেতন হয়। ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠালাভে সমর্থ হয়।

[6] নাগরিকতার শিক্ষাদানে সহায়তা : শিক্ষায় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের সৃজনাত্মক কাজকর্মের মাধ্যমে তাদের মধ্যে এমন কতকগুলি গুণের বিকাশে সহায়তা করে, যার সাহায্যে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে দেশের সুস্থ নাগরিকে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদেরকে নাগরিকতার বিষয়ে শিক্ষাদান করে থাকে। 

[7] প্রক্ষোভমূলক সমতা সৃষ্টিতে সহায়তা : বিদ্যালয়ে আয়ােজিত সহপাঠক্রমিক কাজগুলি শিক্ষার্থীর বিকাশমুখী প্রক্ষোভগুলিকে অভিব্যক্ত হওয়ার সুযােগ দিয়ে সেগুলির মধ্যে সমতা আনে। চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রক্ষোভের বিষয়টি পুরােপুরি অবহেলিত থেকে যায়। সহপাঠক্রমিক কাজগুলির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভমূলক সমন্বয়সাধিত হয় এবং তার মানসিক সাম্য বজায় থাকে। 

[8] সামাজিক গুণাবলির বিকাশসাধনে সহায়তা : বিদ্যালয়ে আয়ােজিত বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সামাজিক চেতনা, সহযােগিতা, স্বার্থত্যাগ, সহানুভূতি প্রভৃতি কাঙ্ক্ষিত গুণাবলির বিকাশে সাহায্য করে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্ন জীবনসমস্যার সমাধানে প্রবৃত্ত করে। তাদের মধ্যে বিচারশক্তি, দায়িত্ববােধ, আত্মবিশ্বাস, চিন্তাশক্তি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলি বিকশিত করে।

[9] চিত্ত বিনােদনে সহায়তা : বিদ্যালয়ে অনুসৃত বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে প্রচুর বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব থাকে। তাই এগুলি ছাত্রছাত্রীদের চিত্ত বিনােদনে সাহায্য করে থাকে। গতানুগতিক শ্রেণি শিক্ষণের মাঝে বিদ্যালয়ের সময়তালিকার মধ্যে এগুলিকে সঠিকভাবে বণ্টন করে দিলে ছাত্রছাত্রীদের একঘেয়েমি দূরীভূত হয় এবং পঠনপাঠনে মনোেযােগ বৃদ্ধি পায়।

[10] শৃঙ্খলা গঠনে সহায়তা : বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের সময় ছাত্রছাত্রীদের কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। ওই বিষয়গুলি চর্চা করতে করতে আপনা থেকেই তাদের মধ্যে শৃঙ্খলাবােধের বিকাশ হয়। 

[11] বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে সহায়তা: বিদ্যালয়ে আয়ােজিত কয়েক প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণেও সহায়তা করে এবং ওইগুলি সঠিকভাবে চর্চা করলে তা কোনাে কোনাে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের রুজিরােজগারেও সহায়তা করে। 

[12] শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা : বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির চর্চা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সুসম্পর্ক গড়ে তােলে। ওই জাতীয় সম্পর্ক স্থাপন সাধারণ পাঠক্রমিক কাজের ক্ষেত্রে গড়ে ওঠে না। শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠলে শিখন ক্রিয়া এবং শিক্ষণ ক্রিয়া উভয়ই ভালােভাবে সম্পাদিত হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment