সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

ভূমিকা :  

“ছাত্র তারাই, শক্তি তারাই—যারা পড়াশুনার মাঝে,
সমাজসেবার মন্ত্র নিয়ে—যুক্ত দেশের কাজে।” 

মানুষ সামাজিক জীব। পারস্পরিক সাহচর্য ও সহযােগিতার ওপর আমাদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই আমরা সমাজের কাছে যেরকম ঋণী, তেমনি ঋণ পরিশােধের পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য সমাজের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। ছাত্রগণও এই সমাজেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই, যে সমাজে তারা লালিতপালিত, সেই সমাজের উন্নতি ও কল্যাণ বিধানে নিঃস্বার্থ সেবায় অংশগ্রহণ করা তাদের পবিত্র কর্তব্য ও দায়িত্ব। ছাত্ৰাণাম্ অধ্যয়নং তপঃ— অর্থাৎ ‘অধ্যয়নই হল ছাত্রদের তপস্যা। অধ্যয়ন ছাত্রদের তপস্যা হলেও, সামাজিক দায়দায়িত্ব তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। “আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”

সমাজ ও ছাত্রদের শিক্ষা : সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন থেকে শুধুমাত্র বিদ্যানুশীলনে ব্যাপৃত থাকা ছাত্রজীবনের লক্ষ্য নয়। পুথিগত বিদ্যা মানুষকে পূর্ণ মানব গড়ে তুলতে পারে না। পুথিগত বিদ্যায় মানুষ পণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে হলে তাকে মানুষের কথা ভাবতে হবে, সমাজের কথা চিন্তা করতে হবে। কেননা ছাত্ররা সমাজবদ্ধ মানুষেরই অংশ। সুতরাং সমাজের প্রতি তাদের দায় তারা এড়াতে পারে না। শিক্ষালাভের লক্ষ্য মনুষ্যত্বের বিকাশ। ছাত্রজীবনকে পরিপূর্ণ করতে হলে কেবল পুথির ভিতর আটকে না-থেকে সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। পরার্থে আত্মত্যাগ ছাড়া মনুষ্যত্বের পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়।

সামাজিক সংকট ও ছাত্রসমাজ : আমাদের দেশে ছাত্ররা সমাজসেবার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের ভারতের মতাে উন্নয়নশীল দেশে সমাজকল্যাণমুখী কর্মযজ্ঞের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। সমাজের নানা স্তরে দারিদ্র ও অজ্ঞতা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি বহু রকমের পাপ বাসা বেঁধে রয়েছে। এ ছাড়া খরা, মহামারি, বন্যা হল এদেশের চিরপরিচিত অভিশাপ। এসব সামাজিক অভিশাপ, সমস্যার দূরীকরণে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে।

সমাজকল্যাণে কী কী কাজ করা যায় : বিশাল একটি দেশের সার্বিক উন্নতিসাধনে একমাত্র সরকারি প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে বা এককভাবে সমাজসেবায় আত্মনিয়ােগ করে দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করতে পারে। সাম্প্রদায়িক সমস্যা, নিরক্ষরতা, জাতিবিদ্বেষ, খরা-বন্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলায় ছাত্ররা অংশ নিতে পারে। এসব কাজে তারা জনসচেতনতা সৃষ্টি করবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণসংগ্রহ ও বিলি ইত্যাদি করতে পারে। বস্তি ও গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে অংশ নিতে পারে। বিশেষ করে নিরক্ষরতা দূরীকরণে তারা সক্রিয় অংশ নিতে পারে। ছাত্রদের প্রত্যেকের উচিত ‘Each one teach one’ মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে অন্তত একজনকে সাক্ষর করে তােলা।

উপসংহার: ছাত্ররাই দেশের আশা, ভরসা ও ভবিষ্যৎ। তারাই দেশের শক্তি ও বল। তাদের আছে মহৎ আদর্শ, উৎসাহ ও আত্মত্যাগের মনােবৃত্তি। তারা নিঃস্বার্থভাবে সব সংকীর্ণতা দূরে ঠেলে দেশের কল্যাণযজ্ঞে অংশ নিয়ে প্রকৃত মানুষ ও নাগরিক হয়ে উঠুক, তাদের কাছে দেশের এই প্রত্যাশা। সামাজিক কর্মযজ্ঞে শামিল হওয়ার আগে ছাত্রসমাজকে হতে হবে সহমর্মী এবং সংবেদনশীল। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে হাতেকলমে কর্মশিক্ষা ও জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ ও নাগরিক হয়ে ওঠার সুযােগ করে নিতে হবে; তবেই সার্থক হবে জনসেবা।

আরো পড়ুন

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

কুসংস্কার প্রতিরােধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের উপযোগিতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

সামাজিক জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

2 thoughts on “সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা”

Leave a Comment