তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তােমার প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র

ভূমিকা : শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘স্মৃতির সােয়েটার পরে নস্টালজিয়ার পথে আনাগােনা আমার বড়াে প্রিয়। এই কথাটা আমার খুব প্রিয়। আমারও মন আড়ালে অবসরে স্মৃতির ভঁজে ঘােরাফেরা করে। যদিও আমার এই স্মৃতি অবশ্য খুব বেশিদিনের নয়। গতবছর বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যেতেই মন চেয়েছিল কোথাও একটা যেতে হবে। আমার ভাবনা বােধহয় মা বুঝেছিল। তাই দু-দিন বাদেই বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল। কোথায় যে যাচ্ছি তা জানি না—সমুদ্রে বা অন্য কোথাও হবে। তবে মনে মনে ভেবেছিলাম দার্জিলিং-এর কথা।

গন্তব্যের পথে : ছবিতে, গল্পে, বড়ােদের স্মৃতিচারণে ছােটো থেকে দার্জিলিং-এর কত ছবি মনে আঁকা হয়ে আছে, কাল্পনিক ভ্রমণেও গেছি কতবার! এবার সশরীরে আমার প্রিয় শৈলশহরকে দেখার সুযােগ হয়ে গেল। ট্রেন নিউ জলপাইগুড়িতে পৌঁছােল সকাল আটটায়। চা আর সকালের খাবার খেয়ে মারুতিতে উঠলাম। আমি সমতল ভূমির মেয়ে, পাহাড়ের অচেনা-অজানা জগৎ তাই আমায় রােমাঞ্চিত করে। গাড়ি চলছে চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে; দু-ধারে পাইন, দেবদারু, ফার প্রভৃতি নানা গাছ সােজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এই গাছ আমাদের সমতলের মতাে নয়; ডালপালা ছড়িয়ে থাকে না, কাউকে আশ্রয়ও দেয় না। মনে হয় যেন কোনাে এক পুরােনাে কাল থেকে এরাই অতন্দ্র প্রহরীর মতাে পাহাড়কে রক্ষা করছে। পথে শুনলাম আগের দিন বৃষ্টি হয়েছে। গাছেরা বৃষ্টিপাত হয়ে সােনালি আলাের দিকে চেয়ে রয়েছে। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে বিপদকে অগ্রাহ্য করে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে। এই আঁকাবাঁকা পথে অন্য দিক থেকেও গাড়ি আসছে ছুটে, কোণ ঘেষে দুজন দুজনের দূরত্ব বজায় রেখে পরস্পরকে অতিক্রম করছে। হঠাৎ চমরী গাই-এর একটি দল অন্যদিক থেকে এসে রাস্তায় ঢুকে পড়ল। সরু রাস্তায় সব গাড়ির একেবারে নট নড়নচড়ন অবস্থা। তবে এরই ফাঁকে পাহাড়ের দু-ধারে নানান রংবেরঙের ফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। মনে মনে অনন্য প্রকৃতিকে নতজানু হয়ে অভিবাদন জানালাম।

গন্তব্যে পৌঁছে : আমরা বেলা এগারােটায় গেস্ট হাউসে পৌঁছে কিছু খেয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটছি। কিছু পাহাড়ি মানুষ মােট বয়ে আনছে, কেউ বা টুরিস্টদের মাল অভ্যস্ত হাতে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি মানুষেরা অনেক বেশি পরিশ্রমী ও কর্মঠ। পাহাড়ি পথ বেয়ে যত হুড়হুড় করে নামছি, ততই চোখে পড়ছে দু-ধারের ঢেউখেলানাে চা বাগান। বাইরেই খাওয়া সেরে দুপুরটা ম্যালের ধারে বসেই আমরা সময় কাটালাম। ধীরে ধীরে পাহাড়ের বুকে সন্ধ্যা নেমে আসছে, গেস্ট হাউসে ফেরার সময়। এবার দার্জিলিং শহরকে দেখলাম আর-এক ভাবে। গেস্ট হাউসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনে হল অন্ধকারে পাহাড়ে পাহাড়ে কারা যেন সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়েছে। সে অপূর্ব দৃশ্য ! বিন্দু বিন্দু আলােকমালায় প্রদীপ্ত এক আশ্চর্য অন্ধকার! 

পরের দিন ভােরের আগেই রওনা দিয়ে আমরা টাইগার হিলে গিয়ে সূর্যোদয় দেখলাম। এমন আশ্চর্য দৃশ্য যেন জন্মজন্মান্তরেও ভােলা যায় না। শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর সূর্যের সােনালি আলাের সােনার মুকুট যেন আমার মনকে অভিভূত করে দিল। মহাকালের মন্দির, নিবেদিতার বাড়ি দেখে আমরা হােটেলে ফিরলাম। এই বাড়িটি অধুনা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযােগিতায় এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সহায়তায় সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তােলা হচ্ছে দেখে ভালাে লাগল।

উপসংহার: এবার বিদায় নেবার পালা। পথে নিঝরিণী খরস্রোতা তিস্তার জলধারার শব্দ শুনতে শুনতে নেমে এলাম শিলিগুড়ি। ভারাক্রান্ত মনেই ঠিক করলাম সুযােগ পেলেই দার্জিলিং-এর উদ্দেশ্যে আবারও পাড়ি জমাবাে। হিমালয়ের অমােঘ আকর্ষণে বারবার ছুটে আসব এই ছােট্ট পাহাড়ি ছবির মতন সুন্দর শহরটির বুকে।

আরো পড়ুন

একটি নির্জন দুপুর – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

আমার চোখে আমার দেশ – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

শীতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!