কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে | কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা | বয়ঃসন্ধিকালে পিতা-মাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা

কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে | কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা | বয়ঃসন্ধিকালে পিতা-মাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা
অথবা,
কৈশাের বা বয়ঃসন্ধি কাকে বলে? কৈশােরের বিভিন্ন চাহিদাগুলি উল্লেখ করাে। ওই চাহিদা পূরণে শিক্ষিক-শিক্ষিকা ও পিতা-মাতার ভূমিকা আলােচনা করাে।  1 + 3 + 4 

উত্তর : 

কৈশাের বা বয়ঃসন্ধি :

মনােবিদদের মতে 12 থেকে 20 বা 21 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে কৈশাের বা বয়ঃসন্ধি বলে। এটি প্রকৃতপক্ষে এমন একটি বয়ঃপর্যায় যেখানে ছেলেমেয়েরা প্রাক্ষোভিক, সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের মধ্য দিয়ে বাল্য থেকে পরিণত বয়স্ককালের দিয়ে অগ্রসর হয়।

কৈশাের বা বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন চাহিদা :

কৈশােরের বিভিন্ন চাহিদাগুলি হল—

[1] স্বাধীনতার চাহিদা : কৈশােরকালে ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে ও মতামত প্রকাশ করতে ভালােবাসে। 

[2] আত্মপ্রকাশের চাহিদা : কৈশােরকালের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রকাশ করতে চায়। 

[3] দুঃসাহসিকতার চাহিদা : কৈশােরকালে পৌঁছালে  প্রতিটি ছেলেমেয়েই দুঃসাহসিক কাজ করতে এগিয়ে আসে। 

[4] গণতান্ত্রিক চাহিদা : কৈশােরকালের ছেলেমেয়েরা আদর্শ নাগরিক হিসেবে সমাজ ও দেশের উন্নয়নের কাজে এগিয়ে আসে। তারা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে জানতেও চায়। 

[5] আত্মনির্ভরতার চাহিদা : কৈশােরকালের ছেলেমেয়েরা পরের ওপর নির্ভর না-করে, স্বাধীনভাবে কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। 

[6] নিরাপত্তার চাহিদা : কৈশােরকালে ছেলেমেয়েদের দেহ-মনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসায় তারা অনেক সময় সমস্যায় ভুগতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভােগে এবং বড়ােদের কাছ থেকে নিরাপত্তা আশা করে। 

[7] যৌন চাহিদা : কৈশােরকালে ছেলেমেয়েদের যৌনগ্রন্থিগুলি সক্রিয় হয়। ফলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়ে।

[8] জীবনাদর্শের চাহিদা : কৈশােরকালে পৌঁছালে ছেলেমেয়েরা সমাজ ও দেশের উন্নয়নের জন্য সঠিক দিশার অনুসন্ধান শুরু করে। নির্দিষ্ট জীবনাদর্শের দিকে আকৃষ্ট হয়। 

[9] নৈতিক চাহিদা : কৈশােরকালের ছেলেমেয়েদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবােধ প্রভৃতি গুণগুলি খুবই তীব্র হয়। তারা ‘চায় সবাই মূল্যবােধ অনুযায়ী অগ্রসর হােক। তাই কোথাও মূল্যবােধের অবনমন দেখলে তারা প্রতিবাদে মুখর হয়।

কৈশােরের চাহিদা পূরণে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পিতা-মাতার ভূমিকা :

কৈশােরকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যেসকল চাহিদা দেখা দেয়, সেগুলি যথাযথভাবে পূরণ হওয়া দরকার, ওই চাহিদা পুরণ নাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। সমস্যা বা জটিলতা এড়িয়ে চলতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পিতা-মাতাদের কিছু ভূমিকা পালন করতে হয়। নীচে ভূমিকাগুলি আলােচনা করা হল —

[1] কৈশােরকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি : বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্ব হল কৈশােরকালের ছেলেমেয়েদেরকে সঠিকভাবে নির্দেশনাদান করা। কৈশােরের বিভিন্ন পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের অবহিত করার ব্যবস্থা করা এবং তারা কীভাবে ওই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নেবে সে-বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শদান করা। 

[2] খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা : কৈশােরে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের দৈহিক পরিবর্তন হয়। তাদের পুষ্টিকর খাদ্যের দরকার হয়। বাড়িতে পিতা-মাতাকে পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, বিদ্যালয়ে তারা যাতে নিয়মিত শরীরচর্চার সুযােগ পায় তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দায়িত্বও কম নয়। 

[3] যৌন চাহিদা পূরণ করা : কৈশােরকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ওই চাহিদার উদগতির জন্য ছাত্রছাত্রীদেরকে বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত করতে হবে। আঁকা, গানবাজনা, সাহিত্যানুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্যে শিক্ষার্থীরা নিযুক্ত হলে, তাদের যৌন চাহিদার তীব্রতা অনেক কমে যায়। 

[4] স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের চাহিদা পূরণ করা : কৈশােরকালের ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্বাধীনতার চাহিদা এবং আত্মপ্রকাশের চাহিদার পরিতৃপ্তির জন্য তাদেরকে বনভােজন, নাটক, সভা, অভিনয়, ভ্রমণ ইত্যাদি কাজে যুক্ত করে বিভিন্ন দায়িত্ব বণ্টন করে দিতে হবে। 

[5] জীবনাদর্শের চাহিদা পূরণ করা : বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহাপুরুষদের জীবনী, ত্যাগ ইত্যাদি বিষয়গুলি কিশাের-কিশােরীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। অনেক কষ্ট সহ্য করেও তারা যে নিজেদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাননি, সে-বিষয়গুলির প্রতি ছেলেমেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। 

[6] পাঠকমের চাহিদা পুরণ করা : ছেলেমেয়েরা যাতে নিজের চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রম নির্বাচন করতে পারে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে বহুমুখী পাঠক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। 

[7] সামাজিক চাহিদা পূরণ করা : কিশাের-কিশােরীদের সামাজিক চাহিদা পূরণের জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের সুযােগ করে দিতে হবে। রক্তদান, সাক্ষরতা অভিযান, বন্যাত্ৰাণ সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে যুক্ত হলে তাদের সামাজিক চাহিদা পরিতৃপ্ত হবে। 

[8] জ্ঞানার্জনের চাহিদা পূরণ করা : কৈশােরের ছেলেমেয়েদের জ্ঞানার্জনের চাহিদা পুরণের জন্য বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে উপযুক্তসংখ্যক পুস্তকের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে | কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদা | বয়ঃসন্ধিকালে পিতা-মাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা”

  1. কৈশোর বা বয়ঃসন্ধি কালের ছেলেমেয়েদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

    Reply

Leave a Comment