আদি মধ্য বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

আদি মধ্য বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

উত্তর:

আদি-মধ্য বাংলা ভাষার একমাত্র নিদর্শন বড়ু-চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য। আর অন্ত্য-মধ্য যুগের বাংলা ভাষার নমুনা পাওয়া যায় বৈষ্ণব পদাবলী, সমকালীন মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল ইত্যাদি কাব্যে। চৈতন্য জীবনীকাব্য, রামায়ন-মহাভারত ও ভগবতের অনুবাদ, লােককাব্য, আরাকানের মুসলমান কবিদের রচনা ইত্যাদি।

(ক) ধ্বনিতাত্বিক বৈশিষ্ট্য:

(১) আদি মধ্য বাংলা ভাষায় মহাপ্রাণ নাসিক্যের মহাপ্রাণতা লােপ পেয়েছে। অর্থাৎ অগ্রাণ ধ্বনির পরে ‘হ’ ধ্বনি থাকলে অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল। যেমন – কতহাে > কথাে ইত্যাদি।

(২) এই পর্বে বাংলায় ‘আ’ কারের পরে অবস্থিত ‘ই’ ও ‘উ” ধ্বনি ক্ষীণ হয়ে যায়। যেমন – বড়াই > বড়াই প্রভৃতি।

(৩) স্বরভক্তির ব্যবহার আদি মধ্য বাংলায় বহুল ব্যবহৃত হয়েছিল। যেমন – শক্তি > শকতি ইত্যাদি। 

(৪) প্রাচীন বাংলার থেকে মধ্য বাংলা স্বরসংগতির ব্যবহার অনেক বেশি। যেমন – ভেড়ি > ভিড়ি প্রভৃতি। 

(৫) অপিনিহিতির ব্যবহারও এখানে বেশি । যেমন- আসিহ > আইস ইত্যাদি ।

(খ) রূপভাষিক বৈশিষ্ট্য:

(১) এই যুগের ভাষায় গৌণকর্ম ও সম্প্রদানকারকে ‘ক’, ‘কে’, ‘রে’ বিভক্তি মিলে। যেমন- ক = হান পাঁচবাণ তাক না করিহ দয়া।

(২) এই যুগের ভাষায় করণ কারকে ‘ত’, ‘এ’ , বিভক্তি বর্তমান। যেমন – এ = মিছাই মাত্র পাড় সান।

(৩) এ যুগের ভাষায় করতিকারক ছাড়া অন্য কারকেও বিভক্তিহীনতার সন্ধান মেলে।

(৪) এ যুগের ভাষায় অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে ‘আছাে’ ধাতু যােগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠিত হয়েছে। যেমন- রহিলছে > রহিল+আছে।

(৫) এ যুগের ভাষায় নাম ধাতুর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন- হেন মনে পড়ে পরিহাসে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “আদি মধ্য বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো”

Leave a Comment