আরােহমূলক দোষ কী? বিভিন্ন প্রকার আরােহমূলক দোষের উল্লেখ করাে।দঘটিত দোষ Class 12 | Education (আরোহমূলক দোষ) | 8 Marks
উত্তর:-
আরােহমুলক দোষ
আরােহ অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নিভর করে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করি৷ সিদ্ধান্তে এই সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় কিছু জ্ঞাত সত্যের ওপর নির্ভর করে ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে একপ্রকার আরােহমূলক লাফ (inductive leap) অবশ্যই থাকে| এই আরােহমুলক লাফের বিষয়টি সবসময় যে সঠিক হয়, এমন নয়। অর্থাৎ, এরুপ লাফের ক্ষেত্রে অবশ্যই একপ্রকার সংশয় থেকেই যায়। এর ফলে আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আরােহ অনুমানের ক্ষেত্রে কিছু দোষের সৃষ্টি হয়। আরও বলা যায় যে, আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতকগুলি বিভিন্ন রকম দোষের (fallacies) উদ্ভব হয়। এগুলিকেই বলা হয় আরােহমূলক দোষ (inductive fallacies)।
আরােহুমুলক দোষের প্রকার
আরােহ অনুমানের সিদ্ধান্তটিকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বিভিন্ন প্রকার দোষের সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত দোষগুলিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা হয় — [1] অনুমান সংক্রান্ত দোষ এবং [2] অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ।
অনুমান সংক্রান্ত দোষ
আরােহ অনুমানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলিকে যথাযথভাবে মেনে না চললে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অনুমান সংক্রান্ত দোষ| এই অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলিকে আবার তিনভাগে বিভক্ত করা যায় — [1] কারণ সংক্রান্ত দোষ [2] সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ এবং [3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ।
কারণ সংক্রান্ত দোষ আরােহ : অনুমানের মূল উদ্দেশ্য হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা| এর মাধ্যমে একপ্রকার। কার্যকারণ সম্পর্ককে ইঙ্গিত করা হয়। এই কার্যকারণ সম্পর্কটিকে তাই যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হয়। এই সম্পর্কটিকে যদি যথাযথভাবে নির্ণয় করা না হয়, তাহলে কোনাে কার্যের প্রকৃত কারণটি কখনােই ধরা পড়ে না l কোনাে কার্যের প্রকৃত কারণকে উল্লেখ না করে, অবভাসিত কোনাে কারণকে যদি প্রকৃত কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেই দোষকেই বলা হয় কারণ সংক্রান্ত দোষ।
কারণ সংক্রান্ত দোষের বিভাগ: কারণ সংক্রান্ত দোষকে আবার চারভাগে। ভাগ করা যায়—[a] অবান্তর শর্ত বা বিষয়কে কারণ বলার দোষ [b] সহকার্যকে কারণ বলার দোষ [c] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ। বলার দোষ এবং [d] কাকতালীয় দোষ৷ কোনাে অবান্তর বিষয়কে যদি কোনাে কার্যের কারণ বলে মনে করা হয় তাহলে অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ হয়। একই কারণ থেকে উদ্ভূত দুটি বিষয়ের একটিকে যদি আর-একটির কারণ বলা হয়, তাহলে সহকার্যকে কারণবলার দোষ উৎপন্ন হয়। কোনাে ঘটনার একটি অনিবার্য বা আবশ্যিক শর্তকে যদি সমগ্র কারণরূপে মনে করা হয়, তাহলে একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ হয়। আর অহেতুক কোনাে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা হলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব হয়।
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ
আরােহ অনুমানের মূল উদ্দেশ্যই হল পর্যবেক্ষণলব্ধ কতকগুলি দৃষ্টান্তের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যে যেসমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তা যদি যথাযথ না হয়, তবে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ। আমাদের পর্যবেক্ষণের ভ্রান্তির জন্যই এই ধরনের দোষ উৎপন্ন হয় বলে একে পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দোষ রূপেও উল্লেখ করা হয়। এই দোষ আবার দুপ্রকারের[1] অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ এবং [2] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ। অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাবে উল্লেখ করা যায়—[i] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ এবং [ii] প্রয়ােজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে বিভক্ত করা যায়—[i] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ এবং [ii] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
আৱােহমূলক দোখের ছক
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।