গাছের কথা – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা গাছের কথা – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ

গাছের কথা

বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্‌গমের ফলে উদ্ভিদ জন্মগ্রহণ করে। তা সে ছোটো গাছই হোক, আর বড়ো গাছই হোক। একবীজপত্রী উদ্ভিদই হোক, বা দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ—সব রকমের উদ্ভিদের বীজই একটি কঠিন আস্তরণে ঢাকা থাকে। অঙ্কুরোদ্‌গমের আগে সেই আস্তরণের মধ্যেই গাছের চারা নিশ্চিন্তে, নিরুপদ্রবে নিদ্রা যায়। বিভিন্ন গাছের বীজের আকৃতি বিভিন্ন প্রকারের হয়। কোনো গাছের বীজ ছোটো, কোনো গাছের বীজ হয় বড়ো। তবে, যে গাছের বীজ ছোটো, সেই গাছ যে ছোটো হবে, অথবা যে গাছের বীজ বড়ো, সেই গাছ যে বড়োই হবে—এমনটা কিন্তু সবসময় হয় না । বট গাছের বীজ দেখে আমরা কখনও কি কল্পনা করতে পারি যে, একটা বৃহৎ বৃক্ষ তার মধ্যে লুকিয়ে আছে? গ্রামের চাষি ভাইরা ধানের বীজ খেতে ছড়ান ৷ নানাপ্রকার শষ্যের চাষ এইভাবে বীজ ছড়িয়েই হয়। কিন্তু আমাদের চারপাশের যে সবুজ গাছপালা আমরা দেখি, তার সবই কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট নয় । বাস্তবে সারা পৃথিবীতে যত সংখ্যক উদ্ভিদ রয়েছে, তার একটা সামান্য অংশই কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট। বাকি সমস্তই প্রাকৃতিক উদ্ভিদ। তাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠায় মানুষের কোনো হাত নেই।

প্রাকৃতিক উপায়েও একটি গাছের ফলের মধ্যে থাকা বীজ অন্যত্র বাহিত হয়, মাটিতে পড়ে এবং তা থেকে কালক্রমে পূর্ণাঙ্গ চারাগাছ জন্ম নেয়। বিভিন্ন পাখি গাছের কাঁচা-পাকা হরেক রকমের ফল খাওয়ার সময় বীজও খেয়ে ফেলে। পরে তাদের বিষ্ঠা থেকে অঙ্কুরোদ্‌গম হয় ও গাছ জন্ম নেয় । চারপাশের পরিবেশ—যেমন, আবহাওয়া, মাটির প্রকৃতি একটি গাছের ভালোভাবে বেড়ে ওঠা ও না-বেড়ে ওঠাকে নিয়ন্ত্রণ করে। পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে যে গাছগুলি জন্মায়, সমতলের গাছের পক্ষে অত সহজে সেখানে জন্মানো ও বেড়ে ওঠা সম্ভব নয়। গাছগুলির পাতা, কাণ্ড, মূল—এসব কিছু ভালোভাবে দেখলেই ব্যাপারটা সহজে বোঝা সম্ভব। মরু অঞ্চলে ক্যাকটাস-জাতীয় বৃক্ষের প্রভূত দেখা মেলে। এগুলির পাতা, কাণ্ড জুড়ে শুধুই কাঁটা । দেহ থেকে জল যাতে বাইরে বেরিয়ে না যায়—সেই উদ্দেশ্যেই এদের এইরূপ বিশেষ অভিযোজন। সেই পরিবেশে কোনো পাতাবাহার, বর্ণালী গাছের বেঁচে থাকাটা অসম্ভব । চারপাশের জগৎ থেকে সাহায্য নিয়ে তার মোকাবিলা করে একটি গাছ যে শুধু নিজের জন্যই বেঁচে থাকে—ব্যাপারটা তেমন নয়। বদলে সমূহ জীবজগতের অস্তিত্বরক্ষার অনেকখানি দায়ভার সে নিজের কাঁধে তুলে নেয়। বাতাসের অবিশুদ্ধ কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে সে ফিরিয়ে দেয় বিশুদ্ধ অক্সিজেন, যা গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। এ ছাড়াও জলবায়ুর ভারসাম্যরক্ষায়, বৃষ্টিপাত ঘটানোর ক্ষেত্রে কিংবা মাটিক্ষয় রোধেও গাছ তথা সমগ্র অরণ্যকূলের অবদান অনস্বীকার্য। একটি ছোটো বীজের মধ্যে যে এত প্রচণ্ড ক্ষমতা লুকিয়ে থাকে তা ভাবতেও অবাক লাগে !

অথচ এখনকার বিশ্বে, দূষণে জর্জরিত পৃথিবীতে, যখন বনসৃজন হয়ে ওঠা উচিত প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, তখন আমরাই এ কাজে উৎসাহিত হয়ে ওঠার বদলে বৃক্ষচ্ছেদনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছি। সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির কারণে অগ্রাহ্য করছি সমষ্টির স্বার্থকে। একটি গাছের মূল্য বুঝে আমাদের সকলের গোটা পরিস্থিতির বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠার সময় এসেছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!