প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা পল্লিসাহিত্য – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
পল্লিসাহিত্য
পল্লিজীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনা, আচার-আচরণ, বিশ্বাস-মূল্যবোধ প্রভৃতির সাক্ষ্য বহন করে পল্লিসাহিত্য। মানুষ তার অতীত ও বর্তমান জীবনের সৌন্দর্য ও সুষমাকে পল্লিসাহিত্যের মধ্যেই আবিষ্কার করে। বাংলার পল্লিসাহিত্য তাই বাঙালি-সংস্কৃতির (গ্রামীণ) গৌরবময় অতীতের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য।
আবহমানকাল থেকে পল্লিবাসীদের লোকমুখে প্রচলিত ছড়া, রূপকথা, পল্লিগাথা, পশুকথা এবং লোকশ্রুতিকেই পল্লিসাহিত্য বলা হয়। এগুলি ব্যক্তিবিশেষের সৃষ্টি নয়, যূথবদ্ধ গ্রামজীবনের পটভূমিকায় এদের সৃষ্টি। যুগপৎ ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার স্তরে সত্তাবান হয়ে অবস্থান করে পল্লিসাহিত্য। অর্থাৎ, পল্লিসাহিত্য একদিকে যেমন তার শিকড়কে চারিয়ে দেয় জাতির অতীত ও সমষ্টিগত স্মৃতির গভীরে, অন্যদিকে তার ডানা মেলা থাকে সমসাময়িক বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দিকে। তাই, পরিবর্তনশীলতা এবং সংরক্ষণ—এ দুই-ই পল্লিসাহিত্যের বিশিষ্ট চরিত্রলক্ষণ। পল্লিসাহিত্যের সমস্ত ক্ষেত্রেই তাই একটি গোটা জাতির জীবনভাবনা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে থাকে ।
ছড়া: ছড়ার জগৎ মূলত শিশুমানবের জগৎ এবং সেই জগতের আস্বাদকও মূলত শিশুই। শিশুর মনোরঞ্জনের জন্য মা-দিদিমা-ঠাকুমারা এগুলি রচনা করেন। শৈশব-কৈশোরের অহেতুক আনন্দ, অপার বিস্ময়বোধ, অস্ফুট প্রকাশসামর্থ্য এবং স্বাধীন সৃজনশীলতায় এগুলি জীবন্ত ও বর্ণময়।
রূপকথা: রূপকথা দীর্ঘ আয়তনবিশিষ্ট কাহিনি। অবাস্তব ও স্বপ্নিল পরিবেশের পটভূমিকায় বিভিন্ন কল্পিত চরিত্র অবলম্বনে অবিশ্বাস্য সব রোমাঞ্চকর ঘটনার সমাহারে তৈরি হয় রূপকথা ।
পশুকথা: মূলত কৌতুকসৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশুপাখিকে কেন্দ্র করে এবং পশুত্বে দেবত্ব ও মানবত্ব আরোপ করে রচিত হয় পশুকথা। যে সমস্ত পশুকথায় উপদেশ বা নীতি সংযুক্ত থাকে, তাই-ই নীতিকথা (Fables)। পল্লিগাথা: সমাজের আদি মানুষের আবির্ভাব, পৃথিবীর সৃষ্টি, দেবদেবীর জন্মগ্রহণ, মানুষের বিবর্তন, স্রষ্টার মূল ও প্রকৃতি, মানুষ ও অন্যান্য জীবের জন্ম, লোকাচার–প্রভৃতি বিষয় নিয়েই গ্রামবাংলায় রচিত হয় পল্লিগাথা। পল্লিসাহিত্য গ্রামবাংলার সকল শ্রেণির মানুষের সম্পত্তি। দেশের জল- আলো-বাতাসে যেমন দেশবাসীর স্বাভাবিক অধিকার, তেমনই পল্লিসাহিত্যেও সকলের সমান অধিকার। পল্লিসাহিত্য অনেকক্ষেত্রেই ধর্মভাবনা থেকে সৃষ্ট হলেও শেষমেষ তা সকল সম্প্রদায়েরই সম্পত্তি। যুগ যুগ ধরে পল্লিসাহিত্যই গ্রামবাংলাকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে।
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এসে পল্লিসাহিত্য আজ অনেকখানিই অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছে। সময় ও রুচির পরিবর্তনের ফলে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে পল্লিসাহিত্য আজ অনাদৃত। সুদূর গ্রামজীবনেও এর কদর আজ কমে আসছে। আসলে গ্রামবাংলাতেও আজ গ্রামীণ পরিবেশ অন্তর্হিত হতে চলেছে। গ্রামের মানুষ তাই আক্ষরিক অর্থে না হলেও মানসিকভাবে শহরমুখী। পল্লিসাহিত্য তাই এখন আর বিশেষ রচিত হয় না। নেহাত পাড়াগাঁয়ের লোক ছাড়া পল্লিসাহিত্যের কদরও আর কেউ করেন না। তবু, প্রাচীন ও মধ্যযুগের গ্রামবাংলার প্রকৃত ইতিহাস বিধৃত রয়েছে এই পল্লিসাহিত্যের মধ্যেই। এসবের সংরক্ষণ তাই অত্যন্ত জরুরি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।