প্রেষণা কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা বা গুরুত্ব আলোচনা করো

উত্তরঃ-

প্রেষণার সংজ্ঞা : প্রেষণা শব্দটি ইংরেজি Motivation শব্দ থেকে এসেছে। এই MOTIVATION শব্দটি আবার ল্যাটিন শব্দ MOVERS থেকে এসেছে। এর অর্থ হল মনের ভেতর থেকে যে শক্তি চালনা করে। বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিভিন্ন ভাবে প্রেষণার সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন –

মনোবিদ ‘উডওয়ার্থ’ – প্রেষণা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোনো লক্ষ্য পূরণ ও আচরণ পূরণ করার জন্য বাক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে।

মনোবিজ্ঞানী ‘উইনারের’ – প্রেষণা হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যা আমাদের বিশেষ একটি ক্রিয়া সম্পাদন করতে উদ্বুদ্ধ করে, কাজটিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী করে এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সেই কাজে যুক্ত রাখে।

এই সংজ্ঞা গুলোর ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে – প্রেষণা হল একপ্রকার তাড়নার অনুভূতি যা ব্যক্তিকে কাজ করতে বাধ্য করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা বা গুরুত্ব: শিখন হল একটি জটিল ও কৃত্রিম প্রক্রিয়া। প্রেষণা শিখনের এই ক্রিয়াকে পূর্ণতা দানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

1. উদ্যম জায়গায়: প্রেষণা শিক্ষার্থীকে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে শিখনে উদ্যম বা শক্তি সৃষ্টি করে, শিক্ষাগ্রহণে সহায়তা করে।

2. আগ্রহ সৃষ্টি: প্রেষণা শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে এবং সেই বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণে সহায়তা করে তোলে।

3. আচরণ নিয়ন্ত্রণ: শিখনে শিক্ষার্থীর আচরণগত কতটা লক্ষঅভিমুখী হবে এবং কখন কোন বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করবে, প্রেসার তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

4. ব্যক্তিত্ব গঠন: প্রেষণা শিক্ষার্থীর শিখনের ইচ্ছাকে বজায় রেখে তাকে বিভিন্ন কর্মসম্পাদনে সাহায্য করে এবং ব্যক্তিত্ব গঠন করে, যাতে সে সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

5. কৌতূহল সৃষ্টি: প্রেষণা শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় জানতে কৌতুহলী করে এবং সেই বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করে।

6. সু-অভ্যাস গঠন: প্রেষণা শিক্ষার্থীর মধ্যে সুঅভ্যাস গঠন করে শিখনে শিক্ষার্থীর জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

7. যথাযথ ভাবে কর্মসম্পাদন: প্রেষণার ফলে শিক্ষার্থীরা শিখনের বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে এবং যথাযথভাবে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে।

৪. মনোযোগী করা: শিখনের জন্য শিক্ষার্থীর মনোযোগ একান্ত প্রয়োজন। প্রেষণা শিক্ষার্থীকে শিখনের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। 

9. জীবনের আদর্শ ও মূল্যবোধ গঠন: প্রেষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আদর্শবোধ ও মূল্যবোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। প্রেষণার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন সম্ভব হয়।

10. সৃজনশীলতা: শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশক্তির বিকাশ ঘটায় প্রেষণা। এর ফলে তারা স্বাধীনভাবে কল্পনা করতে পারে।

11. শিক্ষক-শিক্ষিকার ভুমিকা: প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা নিম্নলিখিত –

প্রশংসা: শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রশংসা প্রেষণার ন্যায় কাজ করায়। তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনা আগ্রহ দেখা দেয়।

উচ্চাকাঙ্ক্ষা: শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরিতে সাহায্য করবে যা শিখনে তাদের প্রেষণার সঞ্চার করবে।

কাজে সফলতা: কোন কাজে সফলতা শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে যা প্রেষণা হিসেবে কাজ করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের কাজে সফলতা আসে।

প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হলে তা একে অপরের মধ্যে প্রেষণা তৈরি করে। 

পুরস্কার: শিক্ষার্থীদের ভালো কাজের জন্য, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা পুরস্কার প্রদান করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণার সঞ্চার ঘটে, যা শিখনে সহায়তা করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় শিখন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ, মনোযোগ, কৌতুহল ইত্যাদি আচরণগত প্রবনতার প্রয়োজন। এইসব প্রবনতার মূল চালিকা শক্তি হল প্রেষণা ৷ সুতরাং শিখনে প্রেষণার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Read Also

ম্পিয়ারম্যানের দ্বি-উপাদান তত্ত্বটি আলােচনা করাে

মানসিক ক্ষমতা বা বুদ্ধি কাকে বলে | শিখনে বুদ্ধির ভূমিকা আলোচনা করো

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment