ব্রিটিশ আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। Class 12 History Suggestion 2022

প্রশ্নঃ ব্রিটিশ আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর: ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চারটি ভাগ ছিল যথা- ১) বাংলায় প্রবর্তিত ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ২) রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত ৩) মহলওয়ারি বন্দোবস্ত ৪) ভাইয়াচারী বন্দোবস্ত।

ক) বাংলায় প্রবর্তিত ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা-

১) পাঁচসালা বন্দোবস্ত- ওয়ারেন হেস্টিং রাজস্ব আদায়ের জন্য 1772 খ্রিস্টাব্দে একটি ভ্রাম্যমাণ কমিটি গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে রাজি হতো। এই ভ্রাম্যমাণ কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্ত প্রদান করতেন এবং কোন জমিদার সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব দিতে অক্ষম হলে তিনি জমিদারি হারাতেন। এই ব্যবস্থা ইজারাদার ব্যবস্থা বা পাঁচসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। 1773 খ্রিস্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ কমিটি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে এই কমিটি বাতিল করে ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব বোর্ড গঠন করেন।

২) একসালা বন্দোবস্ত- ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার পাঁচসালা বন্দোবস্তের কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায়, যার উদ্দেশ্যে 1777 খ্রিস্টাব্দে পাঁচসালা বন্দোবস্ত বাতিল করে নতুন ভূমি বন্দোবস্ত প্রচলন করেন যা একসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত এই ব্যবস্থা অনুসারে

ক) প্রতি বছর পুরনো জমিদারদের জমি বন্দোবস্ত দেয়া হবে।

খ) বিগত তিন বছরের রাজস্বের গড় অনুসারে এই বন্দোবস্ত রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করা হতো।

গ) জমিদার রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হলে জমিদারের এক অংশ বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব পরিষদের নিয়ম চালু হয়।

ঘ) এই ব্যবস্থাতেও কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করার জন্য 1784 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন পাস হয়।

এই আইন অনুসারে জমিদারকে স্থায়ীভাবে জমি প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।

৩) দশসালা বন্দোবস্ত (1789 – 93) 1784 খ্রিস্টাব্দে পিটের ভারত শাসন আইনে ভূমি রাজস্ব সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা দূর হয়। 1786 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল কর্নওয়ালিশ এদেশে আসেন ও 1789 খ্রিস্টাব্দে তিনি জমিদারদের সাথে অস্থায়ী দশসালা বন্দোবস্ত করেন।

৩) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত- 1793 সালে কর্নওয়ালিশ দশসালা বন্দোবস্ত কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিণত করেন। এতে স্থির হয় যে –

১) নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে ধার্য খাজনা জমা দিলে জমিদারেরা বংশানুক্রমিক ভাবে জমি ভোগ করবে।

২) খাজনা চিরস্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট করা হয়।

৩) অতিরিক্ত অর্থ সরকার জমিদারের কাছে দাবি করবে না।

৪) জমিতে রাইতের অধিকার লিপিবদ্ধ করা হয়।

৫) জমিদাররা বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

খ) রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত- 1820 সালে ভারতের দক্ষিণের দক্ষিণ-পশ্চিমে আলেকজান্ডার লিড ও টমাস মনরো উদ্যোগে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করা হয়। এই ব্যবস্থায় সরকারের সাথে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয়। এতে বলা হয় কুড়ি বা তিরিশ বছর অন্তর সরকার ইচ্ছে করলে রাজস্বের হার বাড়াতে পারে।

গ) মহলওয়ারি বন্দোবস্ত- গাঙ্গেয় উপত্যকা উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মধ্য ভারতের কিছু অংশে 1822 সালে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করা হয়। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গড়ে তোলা হয় মহল। 30 বছর মেয়াদে রাজস্ব নির্ধারিত হত। এতে জমিদার পেত ২০% ও সরকার পেত ৮০%।

ঘ) ভাইয়াচারী বন্দোবস্ত- 1846 সাল থেকে 1849 সালে পাঞ্জাবের প্রতিটি কৃষকের সাথে ভাইয়াচারী বন্দোবস্ত প্রচলিত হয়। রাজস্ব আদায় করতেন বোড়ো চাষি।

Read Also:

HS History Suggestion 2022 PDF Download
জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ আলােচনা করাে।
অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলােচনা করাে।
ব্রিটিশ আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করো।
জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলােচনা করাে।
ক্যান্টন বাণিজ্য কি? ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে। এই বাণিজ্যের অবসানের কারণ আলােচনা করাে।
নৌ বিদ্রোহের কারণ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment