বেকার সমস্যার সমাধানে গৃহীত সুপারিশগুলি কী কী? Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) | 8 Marks
উত্তর:
বেকারসমস্যার সমাধানে সুপারিশসমূহ।ভারতের অর্থনীতিক কাঠামােতে শিল্পক্ষেত্রে বেকারত্ব, কৃষিক্ষেত্রে বেকারত্ব, শিক্ষিত বেকারত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বেকারত্বের কারণ ভিন্ন ভিন্ন। এই কারণে এই সমস্ত বেকারত্বের প্রতিবিধানের উপায়-পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। তবে সাধারণভাবে বেকারসমস্যার সমাধানের স্বার্থে কতকগুলি প্রতিকার সুপারিশ করা হয়।
(১) দ্রুতহারে আর্থনীতিক উন্নয়ন : আর্থনীতিক উন্নয়নের হার বৃদ্ধির জন্য দরকার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন প্রভৃতি অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা। তার জন্য আবশ্যক হল দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী প্রণয়ন ও প্রয়ােগ। এই প্রক্রিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। স্বভাবতই তা সময়সাপেক্ষ। তবে দ্রুত হারে আর্থনীতিক উন্নয়নের উদ্দেশে সরকার ও পরিকল্পনা কমিশনকে বিশেষভাবে উদ্যোগ-আয়ােজন গ্রহণ করতে হবে।
(২) স্বনিযুক্তির ব্যবস্থা : শহরাঞলে ত’ বটেই, গ্রামাঞ্চলে বহু ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্ব-নিযুক্তির সুযােগসুবিধা বর্তমান। গ্রামাঞ্চলে স্ব-নিযুক্তির ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল: কৃষিভিত্তিক শিল্প; বনসম্পদভিত্তিক শিল্প; ক্ষুদ্রায়তনবিশিষ্ট শিল্প; আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কৃষিকর্ম; কৃষিযন্ত্রপাতির মেরামতি; গ্রামীণ কুটিরশিল্প যেমন, হাতে তৈরি কাগজ, চামড়ার জিনিসপত্র, চীনেমাটির বাসনপত্র, হস্তচালিত ছাপাখানা, হস্তচালিত তাঁত, কাপড় রং করা প্রভৃতি; গরু-মােষ পালন; হাঁস-মুরগি পালন; নার্সারি; ছােট আকারে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি।
(৩) ত্রাণমূলক কর্মসংস্থান : ত্রাণমূলক কর্মসংস্থান হল একটি স্বল্পকালীন পদক্ষেপ। ত্রাণমূলক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সাময়িকভাবে কিছু নিয়ােগ বৃদ্ধি করা যায়। সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির এ রকম ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল রাস্তাঘাট তৈরি, গৃহনির্মাণ, সেচব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বাঁধ তৈরি প্রভৃতি। এই সমস্ত কর্মসূচীর সুবাদে সামাজিক কল্যাণ সাধিত হয় এবং সামাজিক নীট উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কারণ ত্রাণমূলক কর্মসংস্থানের সুবাদে কর্মনিয়ােগের সৃষ্টি হয় এবং আর্থনীতিক পরিকাঠামাের উন্নতি সাধিত হয়।।
(৪) উৎপাদনমূলক নিয়ােগ বৃদ্ধি : সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীল নিয়ােগ বাড়ানাে যায়। উৎপাদনমূলক নিয়ােগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নীট উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পায়; তেমনি নতুন ধরনের সম্পদ সৃষ্ট করা যায়।
(৫) শিল্পে বিনিয়ােগ বৃদ্ধি : শিল্পের উন্নতিসাধনের উদ্দেশে শিল্পে দ্রুতহারে বিনিয়ােগ বৃদ্ধি করতে হবে। তা হলে কর্মহীনতার সমস্যার সুরাহা করা সম্ভব হতে পারে। শিল্পের যে সমস্ত ক্ষেত্রে প্রতিযােগিতা
কম, সেই সমস্ত শ্রম-নিবিড় উৎপাদন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। বিপরীতক্রমে যে সকল ক্ষেত্রে বিদেশী। প্রতিযােগিতার আধিক্য আছে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে মূলধন-নিবিড় উৎপাদন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। | ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদের প্রাচুর্য পরিলক্ষিত হয়। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহে উপযুক্ত বিভিন্ন শিল্প সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। তা হলে আঞ্চলিক কর্মহীনতার অবসানের সম্ভাবনা। সৃষ্টি হবে।
(৬) জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ : ভারতে বেকারসমস্যা সৃষ্টির পিছনে অন্যতম বড় কারণ হল দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। স্বভাবতই এই সমস্যার সমাধানের স্বার্থে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যথাসম্ভব হ্রাস করা দরকার। এই উদ্দেশে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
(৭) কৃষিব্যবস্থার উন্নতিসাধন : ভারতের সাবেকী কৃষিব্যবস্থার সংস্কারসাধন ও পুনর্গঠন আবশ্যক। তারজন্য কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। ভূমিসংস্কার সম্পাদন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের নিয়ে স্বেচ্ছামূলক সমবায় সমিতি গঠন, উন্নত বিক্রয়ব্যবস্থার সংগঠন, সহজশর্তে কৃষিঋণের ব্যবস্থা প্রভৃতি পদক্ষেপের মাধ্যমে কৃষিব্যবস্থার পুনর্গঠনে উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক। তাছাড়া দেশব্যপী আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির কৃষি প্রক্রিয়া সম্প্রসারিত করতে হবে। সেচ, রাসায়নিক সার, উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক, সর্বাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। গ্রামাঞ্চলের বেকারসমস্যার সমাধানে কৃষিব্যবস্থার এ রকম পুনর্গঠনই হবে সর্বাধিক কার্যকরি পদক্ষেপ। কৃষিব্যবস্থার পুনর্গঠনের অঙ্গ হিসাবে আরও কতকগুলি বিষয়ের উল্লেখ আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি হল: গ্রামাঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ও বিস্তার, পশুপালন, হাঁস-মুরগী পালন, মৌমাছির চাষ, মৎস্য চাষ প্রভৃতি।
(৮) শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারসাধন : ভারতের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাকে দেশের বেকারসমস্যার, বিশেষত শিক্ষিত বেকারসমস্যার জন্য বিশেষভাবে দায়ী করা হয়। এখনকার উদ্দেশ্যহীন শিক্ষাব্যবস্থার জায়গায় আধুনিককালের উপযােগী উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বৃত্তিমূলক কতকগুলি ক্ষেত্রে শিক্ষার সম্প্রসারণ দরকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলি হল জৈবপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তির আনুষঙ্গিক শিল্প, পর্যটন শিল্প, হােটেল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি।
(৯) কর্মনিয়ােগ কেন্দ্রের ব্যবস্থা : ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মনিয়ােগ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। তাহলে শ্রমের সচলতা বাড়বে। সামাজিক বিচারে অনগ্রসর শ্রেণির কর্মহীন ব্যক্তিবর্গের কর্মসংস্থানের সুযােগসুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
(১০) পূরণমূলক কর্মসূচী : সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন পূরণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। এই সমস্ত কর্মসূচীর মাধ্যমে কর্মহীন ব্যক্তিবর্গের জন্য সাময়িকভাবে সহায়ক কাজকর্মের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।
(১১) সঠিক মানবসম্পদ পরিকল্পনা : সঠিক মানবসম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে বেকারসমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হওয়া আবশ্যক। এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে চাহিদা ও যােগানের মধ্যে সামঞ্জস্য সংরক্ষণের দিকে নজর রাখতে হবে।
(১২) আর্থিক সহায়তা : বেকার ব্যক্তিদের স্বনিযুক্তির সুযােগ-সম্ভাবনা সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের স্বার্থে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সহায়সম্বলহীন বেকার ব্যক্তিও যাতে প্রয়ােজনীয় ঋণ পায় তা দেখতে হবে।
অধ্যাপক আহুজা বেকারসমস্যার সমাধানের স্বার্থে বিশেষ কতকগুলি প্রতিনিধিমূলক ব্যবস্থাদির উপর গুরুত্ব আরােপের কথা বলেছেন: (১) স্বনিযুক্তির জন সুযােগ-সুবিধা সৃষ্টি; (২) দরিদ্র শ্রমিকদের আয় ও উৎপাদনশীলতার হার বৃদ্ধি; (৩) গ্রামাঞ্চলে ত্রাণমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবর্তে স্থায়ী উৎপাদনমুলক সম্পদ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরােপ; (৪) উদারীকরণ নীতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার এবং বেসরকারিকরণে গতিবৃদ্ধি করা দরকার।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।