BA Class Notes BA Philosophy বৈশেষিক মতে সমবায়ও সংযােগের পার্থক্য আলোচনা কর?

বৈশেষিক মতে সমবায়ও সংযােগের পার্থক্য আলোচনা কর?

বৈশেষিক মতে সমবায়ও সংযােগের পার্থক্য আলোচনা কর? BA Class | Philosophy | 15 Marks

ロ বৈশেষিক দর্শনে সমবায়কে একটি স্বতন্ত্র পদার্থ হিসাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। দুটি পদার্থ যখন এক নিত্য সম্বন্ধে সম্বন্ধযুক্ত হয় যে, পদার্থ দুটির একটি আরেকটিতে থাকে, তখন এই সম্বন্ধকে বলে সমবায়। যেমন- সমগ্রের সঙ্গে অংশের সম্বন্ধ। প্রশস্থপাদ তার ‘পদার্থ সংগ্রহে’ সমবায় সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,-“অযুত-সিদ্ধ নামা ধার্যাধার ভূতানাং সং সম্বন্ধ হই প্রত্য হেতু সঃ সমবায়”। অর্থাৎ যে দুটি বস্তু আঁধার ও আঁধেয় হতে একটি বর্জন করে অপরের আঁধার আঁধেয়ভাব সম্পূর্ণ হয় না। এমন দুটি বস্তুকে অযুতসিদ্ধ বলা হয়। এরূপ দুটি বস্তুর সম্বন্ধের নাম সমবায়


ন্যায় বৈশেষিকগণ যে দুই প্রকার সম্বন্ধ স্বীকার করেছেন, সে দুটি হল সংযােগ ও সমবায়। যে দুটি বস্তু সাধারণতঃ পৃথকভাবে থাকে তাদের মধ্যে যে অনিত্য সম্বন্ধ থাকে, তাকে অনিত্য সংযােগ বলে। ঘরের ছাদের উপর থেকে পাখীটা যখন উড়ে এসে গাছের উপর বসল তখন গাছের সঙ্গে পাখীটার সংযোেগ হল। এই সংযােগ নিত্য বা স্থায়ী নয়। কেননা যে মুহূর্তে পাখীটা গাছের উপর থেকে উড়ে চলে যাবে সেই মুহূর্তে উভয়ের মধ্যে সংযােগ আবার বিচ্ছিন্ন হবে। সুতরাং এই সম্বন্ধ হল সাময়িক। যতক্ষণ সেই সংযােগ বস্তুর গুণ রূপে বস্তুকে আশ্রয় করে থাকে বস্তুর সত্তা সংযােগের উপর নির্ভর করে না। গাছ ও পাখীর মধ্যে যে সম্বন্ধ স্থাপিত হল সেই সম্বন্ধের উপর গাছ ও পাখীর সত্তা নির্ভর করে না। দুটি বস্তুর একটি যদি আরেকটি থেকে পৃথক করা যায় এবং তাতে যদি তাদের অস্তিত্বের হানি না হয়, তাহলে তাদের বলা হবে যুতসিদ্ধ। আর যদি দুটি বস্তুর একটিকে আরেকটি থেকে পৃথক করা না যায় অর্থাৎ পৃথক করলেই অস্তিত্বেই হানি ঘটে, তাহলে তাদের বলা হয়, অযুতসিদ্ধ। যুতবস্তুর মধ্যে একটি সম্বন্ধকে
সংযােগ বলা হয় এবং অযুত বস্তুর সম্বন্ধকে বলা হয় সমবায়।

সমবায় ও সংযােগের পার্থক্য : –
(১) যখন দুটি পদার্থ পরস্পর সংযুক্ত না হয়ে থাকতেপারে, তাদের মধ্যে অনিত্য সম্বন্ধকে সংযােগ বলে। সংযােগ সম্বন্ধ আকস্মিক, কখনই আবশ্যিক হতে পারে না। কিন্তু সমবায় একদিকে যেমন নিত্য পদার্থ অপরদিকে তেমন সম্পর্কযুক্ত বিষয়দুটি একটি অপরটিকে ছাড়া থাকতে পারে না।  যেমন-দ্রব্য ও গুণ। (২) সংযােগ, বিভাগ কোন পদার্থ নয় এরা দ্রব্যের শুধু গুণ। অন্যদিকে সমবায় কোন গুণ নয়, একটি স্বতন্ত্র পদার্থ। (৩) সংযােগ অনেক, কিন্তু সমবায় এক। (৪) সমবায় দ্রব্য, কর্ম ও গুণে থাকে বলে সংযােগের তুলনায় সমবায়ের আশ্রয় বেশী। (৫) সংযােগ সামান্যবান পদার্থ নয়, সংযােগ কেবলমাত্র দ্রব্যেই থাকে, কিন্তু সমবায় সামান্যবান পদার্থ। (৬) সংযােগ উৎপাদিত, সমবায় অনুৎপাদিত। (৭) সমবায়কে কোনভাবে ভাগ করা যায় না, কিন্তু তা স্বাভাবিক সম্বন্ধ। কিন্তু সংযােগ হল কৃত্রিম ও অস্বাভাবিক সম্পর্ক। (৮) সংযােগ বিভাগ দ্বারা ধ্বংস হতে পারে। কিন্তু সমবায় নিত্য কোন মতেই তা ধ্বংসশীল নয়। (৯) সমবায় ইন্দ্রিগ্রাহ্য নয়, অনুমান সাপেক্ষ। কিন্তু সংযােগ সম্পর্ক হল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। (১০) যুতসিদ্ধ বস্তুর সম্পর্ককে সংযােগ বলা হয়, কিন্তু সমবায় বলা হয় অযুতসিদ্ধ বস্তুর সম্পর্ককে।

ন্যায় ও বৈশেষিক মতে, সমবায় সম্বন্ধ পাঁচ প্রকার– (i) ব্যক্তি ও জাতীয় সম্বন্ধ, (ii) অংশ ও অংশির সম্বন্ধ, (iii) নিত্য দ্রব্য ও বিশেষের সম্বন্ধ, (iv) দ্রব্য ও গুণে সম্বন্ধ, (v) দ্রব্য ও কার্যের সম্বন্ধ।

প্রভাকর মীমাংশক সম্প্রদায় মনে করেন যে, সমবায় সংখ্যায় বহু একটি নয়। এরা ন্যায় বৈশেষিক মতের বিরােধিতা করে বলেন যে, একটি সমবায় সম্বন্ধের মধ্যে সমরকম আঁধার ও আঁধেয় থাকতে পারে। কিন্তু সব সম্বন্ধকে ব্যাখ্যা করা যায় না। ভট্ট মীমাংশকগণ সমবায় সম্বন্ধ না মেনে নিয়ে সমবায়ের
ক্ষেত্রে তাদাত্মের সঙ্গে সমবায়ে অভিন্নতার কথা বলেছেন। বেদান্ত দর্শনে সমবায়কে সম্পূর্ণ বর্জন করা হয়েছে বা স্বীকার করা হয় নি।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!