ভারতে নিরক্ষরতার কারণসমূহ বর্ণনা কর Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) 8 Marks
উত্তর:
ভারতে নিরক্ষরতার কারণসমূহ : ভারতে নিরক্ষরতার পিছনে কারণ হিসাবে বিভিন্ন বিষয়। বর্তমান। এই সমস্ত কারণের মধ্যে কতকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
1. জনস্ফীতির সমস্যা : অধ্যাপক আহুজা (Ram Ahuja) তঁার ‘Social Problems in India শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “high rate of population growth in relation to low rate of adult population gaining literacy” অর্থাৎ জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটছে উচ্চ হারে কিন্তু সেই তুলনায় সাক্ষর হচ্ছে খুবই অল্পসংখ্যক মানুষ। ভারতে জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই হারে শিক্ষালাভের সুযােগ-সুবিধা বাড়ছে না। সকল শিশুকে প্রারম্ভিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার মত পরিকাঠামােগত আয়ােজন নেই। তাপস মজুমদার কমিটির প্রতিবেদন (১৯৯৯) অনুযায়ী একবিংশ শতাব্দীর গােড়াতেই দেশে ছ’বছর থেকে এগারাে বছর বয়সের শিশুর মােট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে এগারাে কোটি বিরাশি লক্ষের মত। ঐ সময়ে এগারাে বছর থেকে চৌদ্দ বছরের কিশাের বয়সীদের মােট সংখ্যা হবে সাত কোটি পয়তাল্লিশ লক্ষের মত। এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খরচ নির্বাহের জন্য গড়ে প্রতি বছর সামর্থ্যের বাইরে। স্বভাবতই সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ‘সর্বশিক্ষা অভিযান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
2. দারিদ্র্যের দাপট: নিরক্ষরতা দারিদ্র্যের অনুষঙ্গ। নিদারুণ দারিদ্রকে ভারতে নিরক্ষরতার একটি বড় কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা শৈশবেই পরিবারের প্রয়ােজনে কাজে লেগে যায়। তারা বিদ্যালয়ে যায় না, বা যাওয়া শুরু করলেও অনতিবিলম্বে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। স্বভাবতই ভারতের দরিদ্র জনগােষ্ঠীসমূহের মধ্যে নিরক্ষরতার হার অধিক হয়। এ সত্য কেবলমাত্র ভারতে নয়, পৃথিবীব্যাপী প্রতিষ্ঠিত।
3.শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা: স্বাধীন ভারতের শাসকগােষ্ঠী সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ ও বিস্তারের ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে উদ্যোগ-আয়ােজন গ্রহণ করেন নি। এই কারণে পৃথিবীর সর্বাধিক নিরক্ষর। দেশ হিসাবে ভারতের লজ্জা ঢাকবার উপায় নেই। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ৮৬ তম সংবিধান সংশােধনী আইন (ডিসেম্বর ১২, ২০০২)-এর মাধ্যমে ২১(ক) ধারায় চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুর শিক্ষার। অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তাদের শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করা মাতাপিতা ও অভিভাবকের মৌলিক কর্তব্য হিসাবে ঘােষণা করা হয়।
4.নারী-শিক্ষায় বাধা : ভারতে পুরুষ-নিরক্ষরতার থেকে নারী-নিরক্ষরতা ভয়াবহ। সনাতন ভারতের চলে আসা সমাজব্যবস্থায় নারীসমাজের উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুবিধ অসামর্থ্য আরােপ করা হয়। নারীজাতিকে অবলা-অজ্ঞ বলে ঘর-গৃহস্থালীর কাজকর্মের মধ্যে আটকে রাখা হয়। এ ধরনের অসংখ্য প্রতিকূলতার কারণে নারী-সাক্ষরতার পথে প্রবল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এ সবকিছুই নারী-শিক্ষার ক্ষেত্রে অভাবনীয় অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। অবশ্য ইতিমধ্যে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলের পরিবর্তন। ঘটেছে এবং নারী-সাক্ষরতার শতকরা হারও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
5. রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার প্রতিকূলতা : ভারতের সনাতন সমাজব্যবস্থা উধ্বাধঃভা ক্ৰমস্তরবিন্যস্ত। এই সমাজব্যবস্থায় বর্ণাশ্রমের ভিত্তিতে প্রথাগত শিক্ষা পরিচালিত হত। নিম্নবর জনগােষ্ঠীসমূহের বিদ্যাচর্চা ধর্মীয় ও সামাজিক নির্দেশ অনুযায়ী অবাঞ্ছিত বিবেচিত হত। এইভাবে সাবে সমাজব্যবস্থার একটি বড় অংশ শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সামাজিক বঞ্চনার পরিণামে ভারতে জনশিক্ষা সুদীর্ঘকাল ধরে ব্যাহত হয়ে আসছে। ঐতিহ্যগত এই বঞ্চনা নিরক্ষর মানুষের সংখ্যাকে দীর্ঘকাল ধরে বাড়িয়ে চলেছে। জনশিক্ষা ব্যাহত হয়ে নিরক্ষরতা বৃদ্ধি পায়।
6. সরকারের দায়িত্ব সম্পাদনে সীমাবদ্ধতা : শিক্ষা বা সাক্ষরতা খাতে সরকারের বিনিয়ােগের পরিমাণ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পর্যন্ত আশানুরূপ হয়নি। প্রথম ও দ্বিতীয় পরিকল্পনাকালে বয়জ শিক্ষার খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা করে। তৃতীয় পরিকল্পনাকালে এক কোটি বাড়িয়ে ছ’কোটি করা হয়। চতুর্থ পরিকল্পনায় এর পরিমাণ ছিল আট কোটি। পঞ্চম ও ষষ্ঠ পরিকল্পনায় ব্যয় করা হয়। যথাক্রমে আঠারাে কোটি এবং একশ’ আঠাশ কোটি। সপ্তম পরিকল্পনায় বৃদ্ধি পেয়ে হয় একশ’ ষাট কোটি। অষ্টম পরিকল্পনাকালে বয়স্ক শিক্ষা খাতে ১,৮০৭ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারিত হয়। বয়স্ক শিক্ষাখাতে এই বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থার অল্পবিস্তর উন্নতি ঘটেছে। শিশু শিক্ষার ব্যাপারে ড. তাপস মজুমদার। কমিটির সুপারিশ কার্যকর করতে সরকার সমর্থ হয়নি। আর্থিক সঙ্গতির সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার এক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে পারে নি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।