দারিদ্র্য বলতে কি বােঝায়? এই প্রসঙ্গে দারিদ্রের অশুভ চক্র বর্ণনা কর চিরম দারিদ্র্য বা পুরােদস্তুর দারিদ্র্য ও আপেক্ষিক দারিদ্র বলতে কী বােঝ? Class 12 | Sociology (সাম্প্রতিক কালের সামাজিক বিচার্য বিষয়) 3+5=8 Marks
উত্তর : দারিদ্র দূরীকরণের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাদি (Measures Adopted for Alleviating Poverty) ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক ও জৈবিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। তবুও বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তির দ্বারা শাসিত ও লুণ্ঠিত হয়ে ভারতবর্ষ একটি গরীব দেশে পরিণত হয়েছিলাে। দারিদ্রতার অভিষাপ বারবার দুর্ভিক্ষ, মহামারীর মতাে সামাজিক ব্যাধির সৃষ্টি করেছে।
এ দেশে দারিদ্র মােকাবিলার ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানীরা ত্রিবিধ প্রয়াসকে চিহ্নিত করেছেন।
1. উন্নয়নের চুইয়ে পড়া মতবাদ : একেবারে গােড়ার দিকে ভারতের পরিকল্পনা প্রণেতারা ধরে নিয়েছিলেন উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেকারি, বৈষম্য ও দারিদ্র কমে যাবে। একেই বলা হয়েছে ‘উন্নয়নের চুইয়ে পড়া প্রভাব’ (trickle down effect)। বিশ্বাস করা হয়েছিল যে, মাথাপিছু আয় দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেলে। দারিদ্র স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাবে। কারণ উন্নয়নের ফলশ্রুতি হিসাবে তার প্রভাব চুইয়ে পড়বে এবং স্বাভাবিকভাবেই বৈষম্য, বেকাত্ব ও দারিদ্র হ্রাস পেতে থাকবে। কৃষি উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে চুইয়ে পড়া। মতবাদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি দারিদ্রের উপশম করবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল সম্পন্ন কৃষকরাই প্রথমে পাবে। তারপর চুইয়ে পড়ার সুফল দরিদ্র কৃষকরাও পাবে। এবং এইভাবে গরিব চাষিদের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি সাধিত হয়।
ভারতে টুইয়ে পড়া অর্থনীতির কার্যকারিতা সম্পর্কে আর্থনীতিবিদরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কৃষি-উন্নয়নের সঙ্গে দরিদ্রদের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার একটা সম্পর্ক ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় অবধি অল্পবিস্তর ছিল।। কিন্তু তারপর তা আর দেখা যায়নি। চুইয়ে পড়া প্রভাবের সুবাদে দারিদ্রের ভার লাঘব হত যদি অধিকতর দ্রুত হারে আয় বৃদ্ধি পেত।
বর্ধন-এর অভিমত অনুযায়ী কেবলমাত্র নয়া প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের দারিদ্রের ভার লাঘব করা করা যাবে না। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়ােজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারসাধনও আবশ্যক।
2 সংযুতিবাদী মতবাদ : সংযুতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকরা সম্পদের বণ্টনের ওপর গুরুত্ব আরােপের কথা বলেন। সম্পদ বণ্টনের ব্যাপারে কতকগুলি কর্মসূচির কথা বলা হয়। এগুলি হল ও ‘সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম’, ‘কৃষি সমবায়’, ‘ভূমিসংস্কার’ এবং “বৃহৎ শিল্পের জাতীয়করণ। কিন্তু এই পথেও দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য পাওয়া যায়নি।
3. গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি : বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সরাসরি দারিদ্র দূরীকরণের ব্যাপারে উদ্যোগ-আয়ােজন গ্রহণ করা হয়। গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল ‘সুসংহত গ্রামােন্নয়ন প্রকল্প’ (RDP), “জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্প’ (NREP), গ্রামীণ ভূমিহীনদের নিয়ােগ নিশ্চয়তা প্রকল্প’ (RLEGP), ‘গ্রামীণ যুবকদের স্বনিয়ােজিত কাজের জন্য প্রশিক্ষণ প্রকল্প’ (TRYSEM) প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য।
দারিদ্র দূরীকরণের সরকারি কার্যক্রম
স্বাধীনতার পরবর্তীকালে দারিদ্র দূরীকরণের উদ্দেশ্যে সরকার বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই সমস্ত কর্মসূচির মধ্যে কতকগুলি বিশেষভাবে গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণ সম্পর্কিত এবং কতকগুলি বিশেষভাবে শহরাঞলের দারিদ্র দূরীকরণ সম্পর্কিত।
গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি: গ্রামাঞ্চলের গরীব মানুষ বা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আছে ক্ষুদ্র চাষি, প্রান্তিক চাষি, ভূমিহীন খেতমজুর, গ্রামীণ কারিগর প্রভৃতি। গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে বেকার, প্রচ্ছন্ন বেকার, অর্ধ বেকার প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বেকারও আছে। গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে চালু কর্মসূচিসমূহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল ঃএক, সুসংহত গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি (IRDP-Integrated Rural Development Programme); n, so alta parte della part (NREP-National Rural Employment Programme); তিন, স্ব-নিযুক্তি কর্মসংস্থানের জন্য গ্রামীণ যুবকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী (TRYSM-Training of Rural Youth for Self Employment); চার, গ্রামীণ ভূমিহীন কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা কর্মসূচি (RLEGP – Rural Landless Employment Guarantee Programme); পাঁচ, জওহর। রােজগার যােজনা (JRY-Jawahar Rojgar Yojana);ছয়, জওহর গ্রাম সমৃদ্ধি যােজনা (JGSY-Jawahar Gram Samriddhi Yojana);সাত, স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্ব-রােজগার যােজনা (SGSY-Swarnajayanti Gram | Swarojgar Yojana) |
শহরাঞলে দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি: শহরালে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষজনের। আর্থনীতিক অবস্থার উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে পৃথক প্রকৃতির কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শহরাঞ্চলে দারিদ্র দূরীকরণের বিবিধ প্রয়াসের মূলকথা হল কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্রদের দুর্দশা নিবারণের জন্য নিম্নলিখিত কর্মসূচিসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে।
(১) শহরাঞ্চলের শিক্ষিত যুবকদের জন্য স্ব-নিয়ােজিত কর্মসংস্থান প্রকল্প (SEEVY-Scheme for
Self Employment to the Educated Urban Youth)
(২) শহরাঞ্চলের দরিদ্রদের জন্য স্ব-নিয়ােজিত কর্মসংস্থান প্রকল্প (SEPUP-Self Employment।
Programme for the Urban Poor) |
(৩) নেহেরু রােজগার যােজনা (NRY-Nehru Rojgar Yojana)।
(8) Stenale Giacristall (PMRY-Prime Minister’s Rojgar Yojana)
(৫) স্বর্ণজয়ন্তী শহরী রােজগার যােজনা (SSRY-Swarnajoyanti Sahari Rojgar Yojana)
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।