সামন্ততন্ত্রের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে আলোচনা করা হলো
1. সামন্ত প্রভুর প্রাধান্য – আঞ্চলিক সামন্ত প্রভুরা কেন্দ্রীয় শাসক অর্থাৎ রাজা কে যুদ্ধের সময় সেনা সরবরাহ করে সহায়তা করতেন। ফলে দেশের কেন্দ্রীয় শক্তি কখনোই শক্তিশালী হতে পারত না। কেন্দ্রীয় শক্তিকে বিভিন্ন বিষয়ে সামন্ত প্রভুর উপর নির্ভর করতে হতো ।
2. শোষিত ভূমিদাস – ভূমি দাসদের শোষণ করার বিষয়টি সামন্ততন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। কৃষকরা শর্ত সাপেক্ষে প্রভুর কাছ থেকে কৃষিজমি লাভ করত। এর বিনিময়ে উদ্বৃত্ত ফসল উপভোগ করত। কৃষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কর ও বেগার শ্রমে যুক্ত করত। ভূমি দাসদের ওপর বিভিন্ন ধরনের সামন্ততান্ত্রিক করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল।
3. জমির গুরুত্ব – সামন্ত প্রথায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জমি। জমির পরিমাণের দ্বারা কোনো সামন্তপ্রভুর মর্যাদা বিচার করা হতো, যেই প্রভুর জমি থাকতো সেই প্রভু ততো বেশি ভূমিদাস নিয়োগ করতে পারত।
4. ম্যানর ব্যবস্থা – কাল মার্কস সামন্ততন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ম্যানর ব্যবস্থা উল্লেখ করেছেন। সামন্ত প্রভূর অধীনে কৃষিভিত্তিক গ্রামগুলি ছিল, সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদনের প্রধান ভিত্তি। এই গ্রামগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত ম্যানর ব্যবস্থা। ম্যানর হাউস প্রতিষ্ঠা করে নিজের এলাকায় কৃষকদের উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত রাখতেন।
5. যোদ্ধা শ্রেণী – সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যুদ্ধ, শ্রেণীর গঠন ও যোদ্ধাদের সংরক্ষণের বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই বীর যোদ্ধাদের নাইট বলা হত। এদের কাজ ছিল বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করা ও অভ্যন্তরীণ সংকটের মোকাবিলা থেকে রক্ষা করা
6. বেগার প্রথা – সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সপ্তাহের কয়েকটি দিন সামন্ত প্রভুর জমিতে বিনা পরিশ্রমে খাটতে বাধ্য হতেন । দুর্যোগের সময় নিজের জমি রক্ষা করার পরিবর্তে প্রভুর জমি রক্ষা করতে বাধ্য হত।
7. অনুন্নত ব্যবস্থা – সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃষি প্রযুক্তি, শ্রম বিভাজন নীতি প্রভৃতি সবই অনুন্নত মানের ছিল। এর কারণে কৃষি জমির আয়তন ও কৃষি উৎপাদনে যথেষ্ট কম হতো।
সামন্ততন্ত্রের পতনের কারণ গুলি উল্লেখ করো
সামন্ততন্ত্র বিভিন্ন কারণের জন্য সামন্ততন্ত্র পতনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো
গতিহীন উৎপাদন ব্যবস্থা – সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ছিল গতিহীন। উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃষকের পরিশ্রম বেড়েছিল কিন্তু উৎপাদন তেমন বাড়েনি, দশম শতকে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
জনসংখ্যা হ্রাস – খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে ইউরোপে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্লেগ, প্রভৃতির ফলে জনসংখ্যা কমতে থাকে। ফলে মানুষের অনুপাতে জমির পরিমাণ কমতে থাকে কৃষকদের জমির অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে, উৎপাদন হ্রাস পেলে সামন্ততন্ত্রের মূল ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
কৃষক বিদ্রোহ – সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষকরা ছিল শোষিত ও নির্যাতিত। কৃষকদের উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশের বেশি কর প্রদানে চলে যেত, এছাড়াও প্রভুর জমিতে বিনা ব্যয়ে খাটার ফলে কৃষকরা দুর্দশার চরমে উঠতো। প্রভৃতি কারনের এর ফলে কৃষকরা বিদ্রোহ করেছিল।
ভূমি দাস বিদ্রোহ – সামন্ততন্ত্র সর্বাপেক্ষা শোষিত শ্রেনী ছিল ভূমিদাসরা, ভূমিদাসরা ক্রীতদাস পর্যায়ে না হলেও স্বাধীনতা প্রায় ছিল না বললেই চলে। তীব্র শোষণ, অত্যাচার ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য ভূমিদাসরা মাঝে মধ্যে প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতো।
বাণিজ্যের বিকাশ – মধ্যযুগে ইউরোপে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরজীবনের প্রসার ঘটায় বাণিজ্যের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছিল। এর ফলে গ্রামীণ কৃষক ও ভূমিদাস রা গ্রাম ছেড়ে শ্রমিকের কাজ করতে শহরে চলে আসে, এভাবে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় শুরু হয়।
বাণিজ্যিক পণ্যের চাহিদা – ইউরোপে বাণিজ্য ও রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বাণিজ্যিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ।
এই সমস্ত কারণের জন্য সামন্ততন্ত্রের পতন হয়েছিল , যা সামন্ততন্ত্রের মানুষের পক্ষে খুবই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।