শিক্ষকের মর্যাদা, পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কী বলা হয়েছে? শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করাে।

শিক্ষকের মর্যাদা, পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কী বলা হয়েছে? শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য উল্লেখ করাে। Class 12 | Education | 8 Marks

উত্তর:-

শিক্ষকের মর্যাদা এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য

জাতীয় শিক্ষানীতির নবম অধ্যায়ে শিক্ষকের মর্যাদা এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্পর্কে যে বিষয়গুলি আলােচনা করা হয়েছে, তা নীচে উল্লেখ করা হল–

[1] শিক্ষকের মর্যাদা: কোনাে সমাজের সামাজিক ও দৃষ্টিগত চরিত্রের দিকটি শিক্ষকের মর্যাদার গতিপথে প্রতিফলিত হয়। তাই বলা হয়, মর্যাদার বিচারে শিক্ষকের উধের্ব কোনাে মানুষই উঠতে পারে না। শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া প্রয়ােজন। 

i. শিক্ষকের বেতন ও চাকুরির শর্তাবলি : শিক্ষকের বেতন ও চাকরির শর্তাবলি তাদের সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সংগতি রেখেই নির্ধারণ করা হবে। 

ii. শিক্ষকদের পেশাগত নৈতিকতা; শিক্ষার কর্মসূচি সংগঠনে ওরূপায়ণে শিক্ষকের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের জন্য খােলাখুলি অংশগ্রহণমূলক ও তথ্যভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যুক্তিসংগত সুযােগের সাহায্যে প্রমােশনের মাধ্যমে শিক্ষকদের কৃতিত্বের ব্যবস্থা থাকবে। 

iii. সমগ্র দেশে শিক্ষকদের একই বেতন : সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শিক্ষকদের জন্য শিক্ষকসংঘ National code of Professional ethics তৈরি করবে | সর্বভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস স্থাপন করা হবে। সারা দেশে শিক্ষকদের একই রকম বেতন হার, চাকুরির শর্ত ও চাহিদা মেটাবার ব্যবস্থা রাখা হবে। 

[2] শিক্ষক-শিক্ষণ বা পেশাগত দক্ষতা: শিক্ষক-শিক্ষা হবে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। চাকরি-পূর্ব ও চাকরিকালীন শিক্ষণের মধ্যে কোনাে বাচ্ছন্নতা নেই, তবে প্রথম কাজ হবে শিক্ষক-শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করা। 

1. DIET থাপন : প্রতিটি জেলায় District Institute of Education and Training (DIET) প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক, ননফরম্যাল ও বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের চাকুরিরত অবস্থায় অথবা চাকুরি-পূর্ব অবস্থায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। 

ii. NCTE-র ওপর দায়িত্ব অর্পণ : NPE-1986-এ শিক্ষক- শিক্ষণের উন্নয়নের জন্য National Council for Teacher Education (NCTE)-এর ওপর দায়িত্ব দেওয়া হবে। এর প্রধান কাজ হবে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি নজর রাখা ও শিক্ষক-শিক্ষা মানের উন্নয়ন ঘটানাে। তা ছাড়া পাঠক্রমের বিষয়বস্তু নির্ধারণ, ছাত্র ভরতির নিয়মকানুন স্থির করা, শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির অনুমােদন দেওয়া বা অনুমােদন প্রত্যাহার করা, শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজগুলির পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা, মূল্যায়ন ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। NCTEর অপর কাজ হল শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের কাজের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপন করা l

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির বক্তব্য

জাতীয় শিক্ষানীতির দশম অধ্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। আলােচনার বিষয়গুলি হল— 

[1] শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার: শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সর্বাধিক প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য নীচের ব্যবস্থাগুলি নেওয়া দরকার— 

i. শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং দেশের উন্নয়ন ও জনশক্তির প্রয়ােজনীয়তার মধ্যে সমন্বয়সাধন। 

ii. বিকেন্দ্রীকরণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বায়ত্তশাসনের প্রবণতা সৃষ্টি। 

iii. শিক্ষা পরিচালনায় বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রয়াসের সঙ্গে – জনশক্তিকে যুক্ত করা। 

iv. শিক্ষার উদ্দেশ্য ও আদর্শের প্রেক্ষিতে দায়বদ্ধতা পালনের নীতি নির্ধারণ করা। 

[2] জাতীয় স্তর: জাতীয় স্তরে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য CABE-কে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। CABE-তে যে কার্যকরী কমিটি থাকবে, তার দায়িত্ব হবে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন।

[3] ভারতীয় শিক্ষা সার্ভিস: শিক্ষার উপযুক্ত পরিচালন কাঠামাে গড়ে তােলার জন্য Indian Education Service প্রতিষ্ঠা করা হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করে সার্ভিসের মৌলিক নীতি, কার্যাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

[4] রাজ্য স্তর: CABE-এর মতাে রাজ্য স্তরে SABE গঠন করা হবে। 

[5] জেলা স্তর ও আঞ্চলিক স্তর: উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার জন্য জেলা স্কুল বাের্ড গঠিত হবে। কেন্দ্র, রাজ্য, জেলা ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলি শিক্ষা পরিকল্পনা, সমন্বয়, তদারকি ও মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করবে। 

[6] স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান: শিক্ষার ক্ষেত্রে সমাজকর্মীদের সঙ্গে, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রয়াসকেও উৎসাহিত করা হবে|তবে ব্যাবসা করার উদ্দেশ্যে কোনাে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment