প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা শিশুশ্রম – একটি জ্বলন্ত সমস্যা | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
শিশুশ্রম – একটি জ্বলন্ত সমস্যা
“যে ছেলেটা প্রাণপণে রিকশা চালাচ্ছে
মুক্তির ঘুড়ি তাকে খবর পাঠাচ্ছে।”
-সুমন চট্টোপাধ্যায়
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সমৃদ্ধ একুশ শতকের মানবসভ্যতা আলোর নীচে থাকা অন্ধকারের মতোই যে কয়েকটি সামাজিক সমস্যার কালিমায় কলঙ্কিত তার মধ্যে অন্যতম হল শিশুশ্রমিক সমস্যা। গোটা বিশ্বসমাজ তথা মানবতার কাছে এই সমস্যা একই সঙ্গে লজ্জাজনক এবং গভীর চিন্তার বিষয়।
ইনটারন্যাশনাল কনভেনশন স্পষ্টভাবেই চিহ্নিত করে দিয়েছে যে, ১৮ বছরের কমবয়সিরাই শিশু। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে যে, কেবলমাত্র ১২ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের বিশেষ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে যদি তা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মানসিক ক্ষতির কারণ না হয় (Convention No. 138, Article-30)। সাধারণভাবে কৃষির কাজ, ঘরের কাজ থেকে শুরু করে কার্পেট বোনা, হিরে কাটা, বিড়ি তৈরি, চা-বাগিচার কাজ—ইত্যাদি নানা সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের ব্যবহার ঘটে। শিশুশ্রমের চাহিদার প্রধান কারণ স্বল্প মজুরি। যথেষ্ট সচেতনতা না থাকায় এক্ষেত্রে সহজেই শোষণকে অপরিমিত করে তোলা যায় ।
সমগ্র বিশ্বে শিশুশ্রমিকের সংখ্যার বিচারে এশিয়ার স্থান দ্বিতীয়। আর এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান ভারতের। সমগ্র বিশ্বের মোট শিশুশ্রমিকের অর্ধেকই ভারতে বাস করে। বর্তমানে ভারতে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৪৫ মিলিয়ন। অসংগঠিত ক্ষেত্রকে ধরলে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই ৭০ মিলিয়নও পার হয়ে যাবে। জনসংখ্যার বিপুল চাপ, অসম সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষের সংখ্যাধিক্য ভারতে শিশুশ্রমকে একটি দুরপনেয় বিষয় করে তুলেছে।
সমাজকাঠামোর গঠন অনুসারে ভারতে শিশুশ্রমিকদের দু-ভাগে ভাগ করা যায়—(১) গ্রামীণ শিশুশ্রমিক এবং (২) শহুরে শিশুশ্রমিক। ভারতে শিশুশ্রমিকের একপঞ্চমাংশ থাকে গ্রামীণ এলাকায়, আর বাকি অংশ শহরে । আবার শহরের এই বিরাট সংখ্যক শিশুশ্রমিকের মাত্র ৫ শতাংশ আসে শহরের বস্তি এলাকা থেকে, বাকিরা আসে বিভিন্ন জেলা এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে। গ্রামীণ শিশুশ্রমিকরা মুখ্যত যুক্ত থাকে কৃষিক্ষেত্রে, ইটভাটায়, বিড়ি তৈরিতে এবং সম্পন্ন বাড়িতে নানারকম কাজে। আর শহরের শিশুশ্রমিকরা যুক্ত থাকে চায়ের দোকানে, রেস্তোরাঁয়, মোটর গ্যারেজে ও চামড়ার কারখানায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুধু দিল্লি এলাকায় কার্পেট তৈরির কারখানাগুলিতে প্রায় দেড় লাখ শিশুশ্রমিক কাজ করে। এদের দিনে কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। মোরাদাবাদে একটি পিতলের কারখানায় প্রচণ্ড উত্তাপে কাজ করার জন্য কর্মরত শিশুশ্রমিকদের অধিকাংশই টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। একুশ শতকে এসে এই ঘটনাগুলিকে সভ্যতার চরম লজ্জা বলেই মনে হয়। কিন্তু তার থেকেও ভয়াবহ তথ্য হল ভারত তথা বিশ্বের শিশুশ্রমিকদের একটা বড়ো অংশকেই কাজে লাগানো হয়
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।