প্রশ্ন: শ্লেষ বা শব্দশ্লেষ অলংকার এর সংজ্ঞা কি শ্লেষ অলংকার কয় প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ আলােচনা করাে। (ছন্দ ও অলঙ্কার)
উত্তর: কবি যখন বিভিন্ন অর্থে একই শব্দ প্রয়ােগ করেন এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে পাঠক। বিভিন্ন অর্থেই শব্দটিকে গ্রহণ করবেন, তখনই হয় শব্দশ্লেষ অলংকার। তবে আরাে সহজ করে বলা যায়, একটি শব্দ একবার উচ্চারণের ফলে যদি বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে শব্দশ্লেষ অলংকার বলা হয়।
শব্দশ্লেষ দুই প্রকারের – সভঙ্গ শ্লেষ ও অভঙ্গ শ্লেষ।
ক) সভঙ্গ – লেখক যদি এমন শব্দ প্রয়ােগ করেন যাকে না ভাঙলে বিভিন্ন অর্থ। পাওয়া যায় না, তাহলে হয় সভঙ্গ শব্দশ্লেষ। যেমন –
অপরূপ রূপ কেশবে
দে রে তােরা এমনধারা কালাে রূপ কি আছে ভবে।।
এখানে কবি কেশব‘ শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহার করেছেন। কৃঞের অপর নাম কেশব অর্থে; এবং কে +শব এভাবে শব্দটিকে ভেঙে দেবী কালী অর্থে। কেননা শব রূপী শিবের উপরই দেবী কালী অধিষ্ঠিতা।
কৃঞসারের পায় | কেশরী করুণা চায়
তরল-আয়ত-আঁখি-পরসাদে মুগ্ধ।
এখানেও ‘কৃঞসার’ এবং “কেশরী শব্দ দুটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম অর্থ – কৃঞসার – একপ্রকারের হরিণ এবং কেশরী – সিংহ।
দ্বিতীয় অর্থ – কৃঞ +সার অর্থাৎ কৃঞই সার যাঁর সেই প্রেমাবতার শ্রীচৈতন্য; এবং কেশরী হলেন বেদান্তকেশরী মায়াবাদী প্রকাশানন্দ সরস্বতী। তাই কৃঞসার- এ সভঙ্গ শ্লেষ, আর কেশরী অভঙ্গ শ্লেষ।
অভঙ্গ, শব্দকে না ভেঙে অর্থাৎ পূর্ণরূপে রেখেই একাধিক অর্থে যদি তার প্রয়ােগ করা হয় তবেই হয় অভঙ্গ শ্লেষ। যেমন –
পূজা শেষে কুমারী বললে, ঠাকুর আমাকে একটি মনের মত বর দাও’।
এখানে বব শব্দটির দুটি অর্থ বয়েছে। প্রথম অর্থ – আশীর্বাদ
কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত ব্যাপ্ত চরাচর,
যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর?
এখানে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে এই কবিতাংশটুকু রচনা করেছিলেন : (১) ভগবানের মহিমা প্রকাশ (২) নিজের মহিমা প্রকাশ।
প্রথম অর্থ – ঈশ্বর = ভগবান; গুপ্ত = লুক্কায়িত; প্রভায় = আলােয়; প্রভা=আলােকিত; প্রভাকর = সূর্য।
দ্বিতীয় অর্থ – ঈশ্বর = ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত = অখ্যাতনামা; প্রভায় = প্রতিভ; প্রভা = উজ্জল | দীপ্তি; প্রভাকর = সংবাদ প্রভাকর।
অর্থাৎ উপরােক্ত কবিতাংশটির সম্পূর্ণ অর্থ দুটি হল – (১) যাঁর আলােতে সূর্য। আলােকিত, যিনি বিশ্বব্যাপী, সেই ভগবানকে কে বলে গুপ্ত? (২) ঈশ্বরচন্দ্র(কবি) গুপ্ত (অখ্যাতনামা) কে বলে? সংবাদ প্রভাকর তারই প্রতিভার উজ্জল দীপ্তিতে প্রকাশিত।
বাজে পূরবীর ছন্দে রবির শেষ রাগিণীর বীণ।
এখানেও পূরবী এবং রবি শব্দ দুটি বিভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
(১) পূরবী – গােধূলিকালের সংগীতের রাগবিশেষ, রবি – সূর্য।
(২) পূরবী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ পূরবী, রবি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।