নিয়ত বায়ু বলতে কী বােঝ? পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও।

নিয়ত বায়ু বলতে কী বােঝ? পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের পরিচয় দাও। Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর: নিয়ত বায়ু

ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে কতকগুলি স্থায়ী উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয় থাকার জন্য কতকগুলি বায়ুও সারাবছর ধরে ওই উচ্চচাপ বলয়গুলি থেকে নিম্নচাপ বলয়গুলির দিকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্টপথে প্রবাহিত হয়। এদের বলে নিয়ত বায়ু। ভূপৃষ্ঠে তিনপ্রকার নিয়ত বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়। এগুলি হল— 

১) আয়ন বায়ু, ২) পশ্চিমা বায়ু এবং ৩) মেরু বায়ু। 

উত্তর:পশ্চিমা বায়ু

উত্তর ও দক্ষিণ গােলার্ধের দুই উপক্ৰান্তীয় (কর্কটীয় ও মকরীয়) উচ্চচাপ বলয় থেকে দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর নির্দিষ্ট পথে নিয়মিতভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে বলে পশ্চিমা বায়ু ।

শ্রেনিবিভাগ : পশ্চিমা বায়ু দু-প্রকার, যথা —

১। দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: উত্তর গােলার্ধের উপক্রান্তীয় (কর্কটীয়) উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফেরেল-এর সূত্রানুসারে সামান্য ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।

২) উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: দক্ষিণ গােলার্ধের উপক্ৰান্তীয় (মকরীয়) উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফেরেল-এর সূত্রানুসারে সামান্য বাঁদিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য : পশ্চিমা বায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 

১) নামকরণ: পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত। 

2) প্রবাহ অঞ্চল: উভয় গােলার্ধে 35-60° অক্ষাংশের মধ্যে উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে অর্থাৎ দুটি গােলার্ধে মিলে প্রায় 50° অক্ষরেখা জুড়ে পশ্চিমা বায়ু। প্রবাহিত হয়।

3) বায়ুর গতিবেগ ও তাদের নাম: উত্তর গােলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গােলার্ধে বাধা কম (জলভাগ বেশি) বলে পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগও বেশি। এজন্য দক্ষিণ গােলার্ধে সারাবছরই পশ্চিমা বায়ু প্রবল গতিতে। প্রবাহিত হয়। একে বলে প্রবল বা সাহসী পশ্চিমা বায়ু। উন্মুক্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার সময় দক্ষিণ । গােলার্ধের বিভিন্ন অক্ষরেখায় পশ্চিমা বায়ুর বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আওয়াজ শােনা যায়। এই ভিত্তিতে চল্লিশের অক্ষরেখাকে গর্জনশীল চল্লিশা, পাশের অক্ষরেখাকে ভয়ংকর। পাশ বা পঞাশিয়া এবং ষাটের অক্ষরেখাকে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট নামে অভিহিত করা হয়।

জলবায়ুতে প্রভাব : জলবায়ুর ওপর পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবগুলি হল— 

১) ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি: পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলে বেশি ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।

২) ঝড় ঝঞ্ঝার প্রভাব: সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসে বলে পশ্চিমা বায়ু গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে বেশি শক্তিশালী থাকে। এই কারণে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর শীতকালে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ঝড়ঝঞাসংকুল অঞলরূপে পরিচিত। 

৩) বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি: সমুদ্রের ওপর দিয়ে বয়ে আসে বলে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত হয়।

 ৪) তৃণভূমির সৃষ্টি: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্বাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment