পশ্চিম হিমালয়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে। ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

পশ্চিম হিমালয়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।   Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : 
অবস্থান: জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপালের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত কালীনদী পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে বলা হয় পশ্চিম হিমালয়। ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ তিনটি হল— (1) কাশ্মীর হিমালয়, (2) হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয় এবং (3) কুমায়ুন হিমালয়।

(1) কাশ্মীর হিমালয়: [i] এই অংশটি জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত। [ii] কাশ্মীর হিমালয়ের দক্ষিণে পরপর জম্মু ও পুঞ পাহাড় এবং পিরপঞ্জাল পর্বত অবস্থিত। এগুলি প্রধানত বেলেপাথর ও শেল দিয়ে গঠিত। [iii] এই পিরপালের উত্তরে অনেক উপত্যকা ও দুন দেখা যায় l যেমন — কাশ্মীর উপত্যকা, উধমপুর দুন প্রভৃতি। [iv] পিরপাল পর্বতশ্রেণি কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেবল বানিহাল ও পিরপঞ্জাল গিরিপথ দুটি দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রবেশ করা যায়। [v] হিমবাহ সৃষ্ট ডাল, উলার, আনচার, নাগিন প্রভৃতি হ্রদ এই উপত্যকায় দেখা যায়। [vi] কাশ্মীর উপত্যকার পূর্ব থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়েছে হিমগিরি ও জাস্কর পর্বতশ্রেণি। [vii] কাশ্মীরের সিন্ধু উপত্যকার উত্তরভাগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি) অবস্থিত। এই পর্বতের অন্যান্য শুঙ্গ হল গ্যাসেরব্রুম- I বা হিডেন পিক, ব্রড পিক, গ্যাসেরম-II প্রভৃতি। এই পর্বতে অবস্থিত সিয়াচেন (76 কিমি) হল ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম হিমবাহ। [viii] হিমাদ্রি হিমালয়ের উত্তরে এবং কারাকোরামের দক্ষিণে লাডাক পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। এর উত্তর-পূর্বে ভারতের সর্বোচ্চ লাডাক মালভূমি অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা প্রায় 4300 মি। [ix] জোজি লা ও বানিহাল হল কাশ্মীর হিমালয়ের প্রধান গিরিপথ।

চিত্র : পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি

(2) হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয়: [i] হিমালয়ের যে অংশ হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত তাকে হিমাচল হিমালয় বলা হয়। [ii] এই অঞ্চলের উত্তরে 5000-6000 মিটার উঁচু হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। [iii] হিমাদ্রির দক্ষিণে মধ্য হিমালয়ের চারটি পর্বতশ্রেণি—ধওলাধর, পিরপঞ্জাল, নাগটিব্বা ও মুসৌরি অবস্থিত। এদের মধ্যে পিরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণির শৃঙ্গগুলি প্রায়ই তুষারাবৃত থাকে। এই পর্বতশ্রেণিগুলির গড় উচ্চতা 1500-4500 মিটারের মধ্যে। [iv] সবচেয়ে দক্ষিণে আছে শিবালিক পর্বতশ্রেণি এর গড় উচ্চতা 600-1500 মি। [v] এই অংশেও অনেক পার্বত্য উপত্যকা দেখা যায়, যেমন—লাহুল, ম্পিতি, কুলু, কাংড়া প্রভৃতি। 

(3) কুমায়ুন হিমালয়: [i] উত্তরাখণ্ড রাজ্যে হিমালয়ের যে অংশটি বিস্তৃত, তার নাম কুমায়ুন হিমালয়। [ii] মধ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির উত্তরে কতকগুলি বিখ্যাত তুষারাবৃত শৃঙ্গ আছে, যেমন—নন্দাদেবী (7816 মি), গঙ্গোত্রী (6614 মি), কেদারনাথ (7188 মি), কামেট (7756 মি), ত্রিশূল (7120 মি) প্রভৃতি। [iii] এই অঞলের দক্ষিণ ভাগে শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যে কতকগুলি বিখ্যাত উপত্যকা বা দুন আছে, যেমন—দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটা, পাটালি, কোঠরি, কোটলি প্রভৃতি। [iv] এই অংশে বিস্তৃত নাগটিব্বা ও মুসৌরি পর্বতের পূর্বাংশে অনেকগুলি হ্রদ দেখা যায়। যেমন—নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি। [v] এখানে গঙ্গোত্রী ও যমুনােত্রী হিমবাহ থেকে যথাক্রমে গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “পশ্চিম হিমালয়ের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে। ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।”

Leave a Comment