পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণগুলি কী কী?

পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণগুলি কী কী? Class 10 | Geography (ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ) | 5 Marks

উত্তর:-

পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণসমূহ 

উত্তর-পশ্চিম ভারতে অবস্থিত পাঞ্জাব-হরিয়ানা দেশের অন্যতম কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল। এটি ভারতের শ্রেষ্ঠ গমবলয়। এ ছাড়াও এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান, তুলাে, আখ প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলের এক-একটি কৃষিজমিতে শীতকালে গম এবং গ্রীষ্মকালে ধান বা তুলাে বা আখ নিয়ে বছরে মােট যে পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়, বিশ্বের খুব কম অঞ্চলেই তা দেখা যায়। পাঞ্জাব-হরিয়ানায় এইরূপ কৃষিসমৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি হল— 

1) জলবায়ু: রাজ্য দুটি উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত, যা গম চাষের পক্ষে আদর্শ। এ ছাড়া পশ্চিমি ঝঞ্ঝার জন্য শীতকালে এই অঞ্চলে যে বৃষ্টিপাত হয়, তা এখানে গমসহ অন্যান্য রবি ফসল চাষে বিশেষ উপযােগী। 

2) মৃত্তিকা: পাঞ্জাব-হরিয়ানার বেশিরভাগ এলাকা উর্বর পলিগঠিত সমতল ভূমি, যেখানে গম, ধান, আখ, তুলাে প্রভৃতি সহজেই চাষ করা যায় এবং এদের উৎপাদনও হয় প্রচুর। 

3) উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা: এই অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হলেও জলসেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এখানে ভৌমজলস্তর ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থান করায় কূপ ও নলকূপের মাধ্যমে সহজেই ওই জল উত্তোলন করে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও ভাকরা-নাঙ্গাল বহুমুখী নদী পরিকল্পনার অধীনে অসংখ্য নিত্যবহ খাল খনন করে এখানকার কৃষিজমিসমূহে জলসেচের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে এখানে বছরে তিন-চার বার চাষ করা যায়।

4) উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার: ড. বােরলগের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে প্রথম উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়। ধান, গম, তুলাে ও অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার এই অঞ্চলকে কৃষি উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে। 

5) যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চাষ: পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ট্রাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতির মাধ্যমে চাষ করা হয়। বৃহৎ জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষবাস কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

অন্যান্য কারণ 

1) রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার: ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয়। সেকারণে ভারতের এই দুটি রাজ্যে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি। 

2) কৃষি প্রশিক্ষণ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন: ঋতু, মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী কৃষি পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও প্রতিনিয়ত কৃষিতে উন্নতির লক্ষ্যে গবেষণা চালানাে হচ্ছে।

3) মূলধন: এখানকার অধিকাংশ কৃষক ধনী। তা ছাড়া জাতিগতভাবে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা বেশি সংখ্যায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। সক্ষম অবস্থায় তারাই অবসরগ্রহণের সময় যে অর্থ পায়, তার অধিকাংশ লাভজনক কৃষিতে বিনিয়ােগ করে। ফলে কৃষিতে মূলধনের অভাব হয় না। 

এ ছাড়া, 4) সরকার কর্তৃক উৎপাদিত ফসলের দাম নির্ধারণ, 5) বিদ্যুতের সুবিধা, 6) ভারতের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, 7) সরকারি পরিকাঠামাের উন্নয়ন প্রভৃতি কারণে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে কৃষির ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। যেমন—2016-17 সালের তথ্য অনুসারে, পাঞ্জাব হেক্টরপ্রতি গম উৎপাদনে ভারতে প্রথম (4704 কেজি) এবং হরিয়ানা দ্বিতীয় (4514 কেজি)। আবার হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে পাঞ্জাব প্রথম (3998 কেজি) এবং হরিয়ানা ততীয় (3213 কেজি)। অন্যদিকে, হেক্টরপ্রতি তুলাে উৎপাদনে পাঞ্জাব (756 কেজি) ও হরিয়ানা (609 কেজি) ভারতে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

5 thoughts on “পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণগুলি কী কী?”

Leave a Comment