দশম শ্রেনী (মাধ্যমিক) Class 10 Geography উত্তর ভারতের তিনটি নদনদীর গতিপথের বর্ণনা দাও।

উত্তর ভারতের তিনটি নদনদীর গতিপথের বর্ণনা দাও।

উত্তর ভারতের তিনটি নদনদীর গতিপথের বর্ণনা দাও।   Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

উত্তর ভারতের প্রধান নদনদী : উত্তর ভারতের নদনদীর মধ্যে প্রধান তিনটি নদী হল গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রম্মপুত্র। 

1. গঙ্গা : গঙ্গা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 2525 কিমি। গঙ্গা ভারতের প্রধান নদী। এই নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— 

(i) উচ্চগতি :
প্রবাহপথ: উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ উচ্চগতি নামে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের অন্তর্গত গঙ্গোত্রী হিমবাহের গােমুখ তুষারগুহা থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি। উৎসের কাছে এই নদীর নাম ভাগীরথী। রুদ্রপ্রয়াগের কাছে মন্দাকিনী ও দেবপ্রয়াগের কাছে এর অন্যতম প্রধান উপনদী অলকনন্দার সঙ্গে মিলিত হয়ে ভাগীরথী গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে। 

(ii) মধ্যগতি :
প্রবাহপথ: হরিদ্বারের কাছে পার্বত্যপ্রবাহ অতিক্রম করে গঙ্গা সমভূমিতে প্রবেশ করেছে এবং এখান থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত। 
উপনদী: গঙ্গার সুদীর্ঘ গতিপথে ডানদিক থেকে যমুনা ও শােন এবং বামদিক থেকে গােমতী, ঘর্ঘরা, রামগঙ্গা, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি উপনদী এসে পড়েছে। গঙ্গার এইসব উপনদীর মধ্যে যমুনা সর্বপ্রধান। যমুনােত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে যমুনা নদী এলাহাবাদের কাছে গঙ্গা নদীতে পড়েছে। চম্বল, বেতােয়া, কেন, সারদা প্রভৃতি যমুনার ডানতীরের উল্লেখযােগ্য উপনদী। হরিদ্বারের পর থেকে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত প্রবাহপথ গঙ্গার মধ্যগতি নামে পরিচিত।

(iii) নিম্নগতি :
প্রবাহপথ: রাজমহল পাহাড়ের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মােহানা পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহপথ নিম্নগতি নামে পরিচিত। রাজমহল পাহাড়ের কাছে এসে গঙ্গা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে মুরশিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানের কাছে দুটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। 
শাখানদী: প্রধান প্রবাহটি প্রথমে পদ্মা ও পরে মেঘনা নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। গঙ্গার প্রধান শাখানদীটি ভাগীরথী-হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
উপনদী: ভাগীরথী-হুগলি নদীর গতিপথে অজয়, দামােদর, কংসাবতী, রূপনারায়ণ, রসুলপুর প্রভৃতি নদী ডানতীরের উপনদী হিসেবে এবং জলঙ্গি, মাথাভাঙ্গা, চুৰ্ণি প্রভৃতি নদী বামতীরের উপনদী হিসেবে এসে মিশেছে।
বদ্বীপ: মােহানার কাছে এসে গঙ্গা নদী পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সৃষ্টি করেছে।

চিত্র : গঙ্গা নদীর প্রবাহপথ

2. সিন্ধু :
প্রবাহপথ: উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রধান নদী সিন্ধু (দৈর্ঘ্য 2880 কিমি, ভারতে 1114 কিমি)। তিব্বতের মানস সরােবর হ্রদের কাছে সেঙ্গেখাবার প্রস্রবণ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
মােহানা: এই প্রবাহ নাঙ্গা পর্বতের কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আরব সাগরে (করাচির দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে) পড়েছে। 
উপনদী: সিন্ধুর বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে পাঁচটি প্রধান, এগুলি হল—শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা। এই নদীগুলি জম্মু ও
কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিন্ধুর ডানতীরের প্রধান উপনদীগুলি হল কাশ্মীরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত শিয়ক, গিলগিট, শিগার প্রভৃতি।
সমভূমিপ্রবাহ: সিন্ধু নদ লাডাক পর্বতশ্রেণি অতিক্রম করার পর একটি সুগভীর গিরিখাতের সৃষ্টি করে ধীরে ধীরে সমভূমিতে প্রবেশ করেছে।
বদ্বীপ : মােহানার কাছে সিন্ধুর একটি ছােটো বদ্বীপ দেখা যায়। 

চিত্র : সিন্ধু নদের প্রবাহপথ। 

3. ব্ৰম্মপুত্র :
প্রবাহপথ: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান নদ ব্রম্মপুত্র (দৈর্ঘ্য 2900 কিমি, ভারতে 916 কিমি)। তিব্বতের রাক্ষসতাল মানস সরােবরের প্রায় 90 কিমি দক্ষিণ-পূর্বে চেমায়ুং-দুং নামক হিমবাহ থেকে ব্রম্মপুত্রের উৎপত্তি। সেখান থেকে প্রথমে সাংপাে নামে তিব্বত মালভূমির ওপর দিয়ে পূর্ব দিক বরাবর প্রায় 1500 কিমির বেশি প্রবাহিত হওয়ার পর নামচা বারওয়া শৃঙ্গের কাছে দক্ষিণপশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে ডিহং নামে অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর অসমের সদিয়ার কাছে ডিং ও লােহিত নদী ডিহংয়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ডিহং, ডিবং এবং লােহিত—এই তিনটি নদীর মিলিত প্রবাহ ব্ৰম্মপুত্র নামে পশ্চিমমুখী হয়ে অসমের ওপর দিয়ে ধুবরি পর্যন্ত বয়ে গিয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে যমুনা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
মােহানা: যমুনা নদী গােয়ালন্দের কাছে পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে শেষে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
বালুচর বা নদীদ্বীপ : অসম উপত্যকায় ব্ৰম্মপুত্র বিনুনির মতাে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে বলে নদীখাতে অনেক বালুচর বা দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। জোরহাটের কাছে ব্রম্মপুত্র নদে গঠিত মাজুলি দ্বীপটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।
উপনদী: ব্ৰম্মপুত্রের ডানতীরের উপনদীগুলির মধ্যে সুবনসিরি, কামেং বা জিয়া ভরেলি, মানস, সংকোশ, তিস্তা এবং বামতীরের উপনদীগুলির মধ্যে ধানসিরি, কোপিলি, বুড়ি ডিহিং প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য।

চিত্র : ব্ৰম্মপুত্র নদের প্রবাহপথ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!