মনােযােগ বলতে কী বােঝ? এর নির্ধারকগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
অথবা, মনােযােগ কাকে বলে? মনােযােগের শর্তগুলি কী কী? Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
মনােযােগ
অবয়ববাদী মনােবিদদের মতে, চেতনার কেন্দ্রীভূতকরণই হল মনােযােগ। আধুনিক মনােবিদদের মতে, কোনাে বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে মনকে নিবিষ্ট করার দৈহিক-মানসিক প্রক্রিয়াকে মনােযােগ বলে। তত্ত্ব প্রক্রিয়াকরণ তত্ত্বানুযায়ী মনােযােগ হল শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মনােযােগের শর্তগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—
[1] বস্তুগত নির্ধারক: বস্তু বা উদ্দীপকের বৈশিষ্ট্যই যখন ব্যক্তির মনােযােগ আকর্ষণ করে, তখন তাকে বস্তুগত নির্ধারক বলা হয়। এখানে নির্ধারক ব্যক্তিনিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। বস্তুগত নির্ধারকগুলির মধ্যে রয়েছে—
i) তীব্রতা: তীব্র আলাে, প্রচণ্ড শব্দ, গাঢ় রং ইত্যাদি আমাদের মনকে জোর করে আকর্ষণ করে।
ii) বিস্তৃতি: উদ্দীপকের বিস্তৃতি আমাদের মনােযােগকে আকর্ষণ করে। অস্বাভাবিক দীর্ঘ বা খর্ব কিংবা বেজায় স্থূলকায় ব্যক্তির প্রতি আমাদের মনােযােগ সহজেই চলে যায়।
iii) পুনরাবৃত্তি: পুনরাবৃত্তি মনােযােগের অন্যতম বস্তুগত নির্ধারক। ‘সাহায্য করাে’ কথাটি একবার উচ্চারিত হলে, আমরা মনােযোগ দিতে নাও পারি, কিন্তু ওই কথাটি বারবার উচ্চারিত হলে আমরা মনােযােগ না দিয়ে পারি না।
iv) অভিনবত্ব: অভিনব কোনাে বস্তুর প্রতি আমাদের মনােযােগ আকর্ষিত হয়। যেমন— নতুন ধরনের পােশাক-পরা ব্যক্তি সহজেই আমাদের মনােযােগ আকর্ষণ করে।
v) গতিশীলতা: উদ্দীপকের গতিশীলতা মনােযােগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত নির্ধারক। অনেক সময় বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপনটি চলমান করে আমাদের মনােযােগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
vi) স্পষ্টতা: উদ্দীপকের স্পষ্টতা মনােযােগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুগত নির্ধারক। পরিষ্কার হাতের লেখার প্রতি আমরা মনােযােগী হই।
vii) উদ্দীপকের স্থায়িত্ব বা দীর্ঘ সময়: উদ্দীপক অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হলে আমাদের মনােযােগ এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হলে আমরা মনােযােগ দিতে বাধ্য হই।
[2] ব্যক্তিগত নির্ধারক: মনােযােগ যখন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যের দ্বারা নির্ধারিত হয় তখন তাকে ব্যক্তিগত নির্ধারক বলে। এই ধরনের নির্ধারকগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—
i. আগ্রহ: ম্যাকডুগাল-এর মতে, আগ্রহ হল সুপ্ত মনােযােগ এবং মনােযােগ হল সক্রিয় অনুরাগ। আগ্রহ ও মনােযােগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান।
ii. চাহিদাপূরণ: খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্যবস্তুর প্রতি আমরা মনােযােগ দিই। কোনাে বিষয়ে জ্ঞানের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা সেই বিষয়ের বইয়ে মনােযােগী হই।
iii. অভ্যাস: অভ্যাস মনােযােগের অন্যতম ব্যক্তিগত নির্ধারক। ঘুম থেকে উঠে যাদের খবরের কাগজ পড়া অভ্যাস, তারা যতক্ষণ না খবরের কাগজ পড়তে পারে ততক্ষণ অন্য কোনাে বিষয়ে মনােযােগ দিতে পারে না।
iv. সেন্টিমেন্ট: সেন্টিমেন্ট এক ধরনের মানসিক সত্তা যা কোনাে ব্যক্তি, ঘটনা, বস্তু বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসা, ধর্মের প্রতি বিশ্বাস প্রভৃতি সেন্টিমেন্টের উদাহরণ। যে বিষয় বা বস্তুকে কেন্দ্র করে সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে, তার প্রতি আমরা মনােযােগী হই।
v. মনঃপ্রকৃতি: বিশেষ ধরনের মনঃপ্রকৃতির অধিকারী ব্যক্তি বিশেষ বিশেষ ঘটনার প্রতি আকৃষ্ট হয়। স্বাভাবিকভাবেই তার সেই দিকেই মনােযােগ দিতে ইচ্ছা হয়।
vi. শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা: দর্শনীয় কোনাে জায়গায় বেড়াতে গিয়ে ইতিহাসবিদদের দৃষ্টি ঐতিহাসিক বস্তুর দিকে থাকে। ভূতত্ত্ববিদদের কাছে শিলার প্রকৃতি গুরুত্ব পায়। শিল্পরসিকের শিল্পের অভিনবত্বের ওপর নজর পড়ে। মনােযােগের এই রকম বিভিন্নতার কারণ ব্যক্তির শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা।
vii. প্রবণতা: ব্যক্তিভেদে প্রবণতার পার্থক্য দেখা যায়। ব্যক্তির নির্দিষ্ট দিকে প্রবণতা মনােযােগের ব্যক্তিগত নির্ধারক। যার সংগীতে প্রবণতা আছে, সে সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
vi. কৌতুহল: দৈনন্দিন চলার পথে আমরা অনেক ঘটনার মুখােমুখি হই। অধিকাংশ মানুষই বেশিরভাগ ঘটনার প্রতি মনােযােগী হয় না। কিন্তু যারা কৌতুহলী তারা যতটা সম্ভব বেশিসংখ্যক ঘটনার প্রতি মনােযােগ দেয়।
vii. বৈপরীত্য বা পার্থক্য: একটি দীর্ঘকায় ব্যক্তির পাশে খর্বকায় ব্যক্তি বা একটি স্থুলকায় ব্যক্তির পাশে যদি একটি শীর্ণকায় ব্যক্তি থাকে, সহজেই সেই দিকে আমাদের মনােযােগ চলে যায়।
viii. বিশেষ অবস্থিতি: কোনাে বস্তুর বিশেষ অবস্থিতির জন্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। পত্রিকার নীচের অংশের থেকে ওপরের অংশের দিকে আমাদের দৃষ্টি আগে পড়ে।
ix. রং: সাদা কালাে লেখার মধ্যে যদি রঙিন লেখা থাকে, তখন রঙিন লেখার প্রতি আমাদের দৃষ্টি প্রথমেই চলে যায়।
[3] শারীরিক বা দৈহিক শর্ত বা কারণ: মনােযােগের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও অন্যতম শর্ত হিসেবে কাজ করে। যদিও শারীরিক শর্তগুলি সঠিক অর্থে মনােযােগের শর্ত নয়, তবুও তা মনঃসংযােগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন—
i. জ্ঞানেন্দ্রিয়সমূহকে নিবদ্ধ করা: মনােযােগের বিষয়বস্তুর প্রতি জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলিকে নিবদ্ধ করতে হয়। যেমন—চোখ বা কানকে সজাগ করা।
ii. শারীরিক পরিবর্তন: মনােযােগ দেওয়ার জন্য আমরা শারীরিক অঙ্গ, পেশি বা ইন্দ্রিয়ের পরিবর্তন ঘটাই। যেমন—মনােযােগের বস্তুর দিকে আমরা মাথা হেলাই।
iii. দেহের বিশেষ ভঙ্গিমা: মনােযােগ দেওয়ার জন্য অনেকের মধ্যে বিশেষ ধরনের দেহভঙ্গিমা দেখা যায়। যেমন—বহু শিল্পী মনােযােগ দিয়ে গান গাওয়ার সময়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন।
iv. ব্যক্তিগত অভ্যাস: বহু ব্যক্তি বিশেষ কোনাে বিষয়ে মনােযােগ দিলে পা নাচাতে থাকেন। পা নাচানাে বন্ধ করলেই তাদের মনােযােগ নষ্ট হয়ে যায়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।