শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কী? শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলােচনা করাে।

শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কী? শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলােচনা করাে। অথবা, শিখনে পরিণমনের ভূমিকা আলােচনা করাে। 6 + 2 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক: শিখন ও পরিণমনের মধ্যে কতগুলি বিশেষ সম্পর্ক লক্ষ করা যায়।

[1] বিকাশমূলক প্রক্রিয়া: শিখন ও পরিণমন—দুটিই বিকাশমূলক প্রক্রিয়া যার ফলে ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন ঘটে। শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে এই দুই প্রক্রিয়াই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুটি প্রক্রিয়া পরস্পর নির্ভরশীল। 

[2] নির্ভরশীলতা : প্রক্রিয়া দুটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উভয়ই উভয়ের ওপর নির্ভরশীল। শিখনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল পরিণমন। যথাযথ পরিগমন ছাড়া শিখন অসম্ভব। পরিণমন প্রক্রিয়াটি শিখনের সীমারেখা নির্ধারণ করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিখনও পরিণমনের ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে, যেমন —দৈহিক অনুশীলন দৈহিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই বলা যায়, শিখন এবং পরিণমন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং উভয়েই শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

[3] মনােবিদদের অভিমত : মনােবিদরা পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখেছেন উপযুক্ত পরিণমন ঘটলেই শিশুর বিশেষ বিশেষ শিখন সম্ভব হয়। শারীরিক পরিবর্তন বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশ নির্ধারণ করে শিশু কী শিখতে পারে এবং কতখানি শিখতে পারে। বাস্তবে দেখা গেছে, কোনাে বিষয় শেখার জন্য শিশু যদি পরিণত বা প্রস্তুত না হয় এবং তাকে যদি জোর করে সেই বিষয় শেখানাের চেষ্টা করা হয়, তাহলে ফল বিপরীত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—দুই-তিন বছর বয়সের শিশুকে ভাষাসাহিত্য বিষয়ে পাঠদান করলে কিংবা জটিল অঙ্কের নিয়মকানুন শেখানাের চেষ্টা করলে তা কোনােদিনই সফল হবে না। তাই বলা যায়, পরিণমনই ঠিক করে শিশুর শিখনের সীমারেখা। 

[4] শিক্ষাবিদদের অভিমত : শিক্ষাবিদদের মতে শিখন শুরু করার আগে তার পরিণমনের স্তর সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া প্রয়ােজন। উপযুক্ত পরিণমন ঘটলে তবেই তার শিখনের কাজটি শুরু করা উচিত। শিশুর জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে শিখনের ভূমিকা অপরিসীম। এই কারণে অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, পরিণমন ও শিখন দুটি পরস্পরবিরােধী ধারণা নয়। বরং শিশুর সামগ্রিক বিকাশের জন্য দুটিই আবশ্যক।

শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব : শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ— 

[1] পরিণমনভিত্তিক শিক্ষা পরিকল্পনা : উপযুক্ত পরিণমন না ঘটলে শিশু যথাযথভাবে পাঠ গ্রহণ করতে পারে না। সেই কারণে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক পরিণমনের প্রতি লক্ষ রেখে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার পরিকল্পনা করতে হবে l

[2] আচরণের পরিশীলিতকরণ : পরিণমনের ফলে পরিবর্তিত আচরণগুলিকে উপযুক্ত শিখনের মাধ্যমে পরিশীলিত করতে হবে। 

[3] পরিণমনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা : জীবনবিকাশের দুটি স্তরে (শৈশব এবং বয়ঃসন্ধিক্ষণ) পরিণমনের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়। এই স্তর দুটিতে পরিণমন যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় এবং পরিণমন অনুযায়ী যাতে শিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা করা যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment