প্রেষণার সংজ্ঞা নিরুপণ করাে। সংক্ষেপে প্রেষণা চক্র বর্ণনা করাে। 3+ 5 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
প্রেষণার সংজ্ঞা :
[1] মনােবিদ সুইফট (Swift)-এর মতে, ব্যক্তির নানান প্রকার চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য, যে পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া তার আচরণধারাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে, তা হল প্রেষণা l
[2] মনােবিদ উইনার (Weiner) বলেন যে, প্রেষণা এমন একটি অবস্থা যা ব্যক্তিকে বিশেষ একটি ক্রিয়া সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, ক্রিয়া সম্পাদনাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী করে এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিকে কর্মসম্পাদনে ব্যস্ত রাখে l
[3] মনােবিদ ক্লাইডার (Cryder) বলেন যে, আকাঙ্ক্ষা, প্রয়ােজন এবং আগ্রহ, যা একটি প্রাণীকে সক্রিয় বা কর্মোদ্যোগী করে তােলে এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে পরিচালিত করে, তাকে প্রেষণা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
সুতরাং, মনােবিদগণের উপরিলিখিত সংজ্ঞার ভিত্তিতে বলা যায়, প্রেষণাবা মােটিভেশন হল সেই আচরণ বা ক্রিয়া যা কোনাে অভাববােধ এবং ওই অভাব দূর করার উদ্দেশ্যে তাড়না দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত হয়।
প্রেষণা চক্র : প্রেষণা হল একটি অর্থবােধক আচরণ। আচরণ অভাববােধ বা প্রয়ােজনবােধ দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং কোনাে উদ্দেশ্যসাধনের জন্য লক্ষ্যবস্তুুর
দিকে পরিচালিত হয় l প্রেষণাকে বিশ্লেষণ করলে, চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরের সন্ধান পাওয়া যায় l এই স্তরগুলি চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে প্রেষণাচক্র সম্পন্ন করে। স্তরগুলি হল—
[1] অভাববােধ চাহিদা (Need), [2] তাড়না Drive), [3] সহায়ক বা যান্ত্রিক আচরণ (Instrumental behaviour) এবং [4] লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য (Goal)।
[1] অভাববােধ চাহিদা : প্রাণীর প্রেষণা চক্রের প্রথম ধাপ হল অভাববােধ চাহিদা নানান কারণে প্রাণীর মধ্যে অভাববােধ চাহিদা দেখা দিতে পারে। যেমন—
i. দেহের কলা-কোশে প্রয়ােজনীয় কোনাে উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে, তা থেকে শারীরিক প্রেষণার উন্মেষ ঘটে। ক্ষুধা, তৃয়া ইত্যাদি হল শারীরিক প্রেষণা।
ii. বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অবস্থার কারণে ব্যক্তির মধ্যে অভাববােধ বা চাহিদা দেখা দিতে পারে l ব্যক্তির সুযােগসুবিধা, ভােগবিলাসের জন্য প্রেষণার উন্মেষ ঘটতে পারে l স্বীকৃতি, প্রভাব বিস্তারের স্পৃহা এই জাতীয় প্রেষণা।
iii. বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ তথা হরমােন রক্তস্রোতে মিশলে প্রাণী উত্তেজিত হয় এবং নানান ধরনের আচরণ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিভিন্ন প্রকার স্টেরয়েড-জাতীয় হরমােন প্রাণীদেহে যৌন প্রেষণা, মাতৃত্ব প্রেষণা ইত্যাদি সৃষ্টি করে।
[2] তাড়না: কোনাে কিছুর অভাববােধ চাহিদা থেকে প্রাণীর মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। ওই অস্বস্তিকর অবস্থা প্রাণীকে অভাবপূরণের জন্য তাড়িত করে। অর্থাৎ, অভাবের তাড়নায় প্রাণী সক্রিয় হয়ে ওঠে।
[3] সহায়ক বা যান্ত্রিক আচরণ : প্রেষণাচক্রের তৃতীয় স্তর হল সহায়ক বা যান্ত্রিক আচরণ। প্রাণী তার অস্থিরতা নিবারণের জন্য বা তার লক্ষ্যবস্তুকে পাওয়ার জন্য কতকগুলি বিশেষ আচরণ প্রদর্শন করে। একে সহায়ক আচরণ বলে।
[4] লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য : প্রেষণাচক্রের চতুর্থ ও শেষ ধাপ লক্ষ্য বস্তুতে উপনীত হওয়া বা উদ্দেশ্য সাধন করা l লক্ষ্যবস্তুতে উপনীত হতে পারলে প্রাণীর অস্বস্তিকর শারীরিক অবস্থা দূরীভূত হয় l প্রাণী তৃপ্তি লাভ করে এবং বিশ্রাম নেয়।
প্রাণীর জীবনে প্রেষণার চারটি স্তর পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হয় l একটি প্রেষণা শেষ হওয়ার পরমুহূর্তে অপর একটি প্রেষণার সৃষ্টি হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রাণীর জীবনে প্রেষণা চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে।
Read Also
প্রেষণা কাকে বলে | শিক্ষাক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা বা গুরুত্ব আলোচনা করো
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।