প্রেষণার প্রভাবক বা নির্ধারক বলতে কী বােঝ? প্রেষণার উল্লেখযােগ্য প্রভাবক বা শর্তগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

প্রেষণার প্রভাবক বা নির্ধারক বলতে কী বােঝ? প্রেষণার উল্লেখযােগ্য প্রভাবক বা শর্তগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 2 + 6 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রেষণার প্রভাবক বা নির্ধারক : 

মনােবিদদের মতে, কতকগুলি প্রভাবক বা শর্ত ব্যক্তির প্রেষণার গতি নির্ধারণ করে। ওই শর্ত বা প্রভাবকগুলিকে প্রেষণার নির্ধারক বলা হয়। 

প্রেষণার উল্লেখযােগ্য প্রভাবক বা শর্তসমূহ: 

প্রেষণার উল্লেখযােগ্য প্রভাবক বা শর্তগুলি হল—অনুরাগ, কৌতূহল, উদবেগ, মূল্যবােধ, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, অর্জিত অসহায়তা, দক্ষতা সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাস, সাফল্য, উদ্দীপনা, জীবনাদর্শ, অভ্যাস, পরিবেশ ইত্যাদি ৷ নীচে এগুলির সম্পর্কে আলােচনা করা হল— 

[1] অনুরাগ : প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বা নির্ধারক হল ব্যক্তির অনুরাগ। কোনােরকম চাহিদাপূরণের জন্য চাহিদা তৃপ্তিকারক বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে যেটির প্রতি ব্যক্তির অনুরাগ বা আগ্রহ আছে, সেটি সে নির্বাচন করে ৷ 

[2] কৌতুহল : মনােবিদ ম্যাকডুগাল-এর মতে, যে বিষয়ে কোনাে ব্যক্তির কৌতূহল সৃষ্টি হয়, সেই বিষয়ে কৌতুহল নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সে অস্বস্তি বােধ করে। সুতরাং বলা যায়, কৌতুহল হল ব্যক্তির প্রেষণার অন্যতম প্রভাবক।

[3] উদবেগ: ব্যক্তির কোনাে একটি বিষয়ে উদ্‌বেগ প্রেষণার প্রভাবক রূপে কাজ করে। এর ফলে কোনাে কাজ সহজ বা কঠিনের মাঝামাঝি হলে, প্রেষণা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়। 

[4] মূল্যবােধ: কোনাে সমাজে বসবাসকারী কোনাে ব্যক্তির মনে ওই সমাজে প্রচলিত ধ্যানধারণা অনুযায়ী ভালােমন্দ, সত্য-মিথ্যা, সৎ-অসৎ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যে বােধ বা ধারণার সৃষ্টি হয়, তাকেই ওই ব্যক্তির মূল্যবােধ আখ্যা দেওয়া হয়। ব্যক্তিজীবনে মূল্যবোধ প্রেষণাক্লিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। 

[5] নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র: ব্যক্তির প্রেষণা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মনােবিদ রােটার (Rotter) দুই ধরনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেছেন। বাহ্যনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং অন্তর্নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। কোনাে শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল খারাপ হলে যদি প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়াকে দায়ী করা হয়, তবে সেটি বাহ্যনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। আর যদি শিক্ষার্থী মনে করে সে ভালাে প্রস্তুতি নিতে পারেনি বলেই এই ফল, তবে সেটি অন্তর্নিয়ন্ত্রক। 

[6] অর্জিত অসহায়তা: কোনাে ব্যক্তি কোনাে কাজে বারে বারে অসফল হলে সেই কাজে প্রেষণা জাগে না | অসফলতার মধ্য দিয়ে ওই ব্যক্তির মধ্যে অসহায়তার সৃষ্টি হয়। 

[7] দক্ষতা সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাস: যেসব ব্যক্তির মধ্যে নিজের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে, তারা সহজেই যে-কোনাে কাজে প্রেষণা পায়। অন্যদিকে, যারা নিজের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে না, তাদের কোনাে কাজেই প্রেষণা জাগে না | তাই দক্ষতা সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাসকে প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বলা হয়। 

[8] সাফল্য : ব্যক্তি কোনাে কাজে সাফল্য লাভ করলে, সেই কাজের জন্য তার মধ্যে প্রেষণার সঞ্চার ঘটে। অর্থাৎ, সাফল্য প্রত্যক্ষভাবে কোনাে ব্যক্তির প্রেষণা প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। 

[9] উদ্দীপনা: নানাপ্রকার বস্তু বা ঘটনা প্রেষণাকে কার্যকরী করে তােলে। উপযুক্ত লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ ও লক্ষ্যবস্তুর প্রকৃতি ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণার উন্মেষ ঘটায়। 

[10] জীবনাদর্শ: ব্যক্তির জীবনাদর্শ প্রেষণার নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। সঠিক জীবনাদর্শ গড়ে উঠলে ব্যক্তি সেই লক্ষ্যে পৌঁছােনাের চেষ্টা করে। ফলে তার যে-কোনাে আচরণ ওই লক্ষ্যমুখী হয়। 

[11] অভ্যাস: প্রত্যেক ব্যক্তিরই এমন কিছু অভ্যাস থাকে যা তার মধ্যে কোনাে বিশেষ কাজ করার জন্য প্রেষণা জাগায়। চাহিদাপূরণ হলে, অভ্যাসগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যান্ত্রিক নিয়মে কাজ করে। প্রেষণা সৃষ্টিতে সহায়ক হয় না।

[12] পরিবেশ: ব্যক্তির পরিবেশ প্রেষণা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাস্তবে দেখা গেছে, ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ উপযুক্ত না হলে, সে কোনাে কাজে সঠিকভাবে মনােনিবেশ করতে পারে না। ফলে কোনাে কাজের ক্ষেত্রেই তার মধ্যে প্রেষণার উন্মেষ ঘটে না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment