প্রেষণা সম্পর্কিত ওয়াইনারের কারণ নির্দেশক তত্ত্বটি আলােচনা করাে। 

প্রেষণা সম্পর্কিত ওয়াইনারের কারণ নির্দেশক তত্ত্বটি আলােচনা করাে।    Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রেষণা সম্পর্কিত ওয়াইনারের কারণ নির্দেশক তত্ত্ব : ওয়াইনারের মতে, কোনাে ব্যক্তি যে-কোনাে কাজ সম্পাদন করলে, সেই কাজে দুই ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, যথা—

[1] ব্যক্তি কাজটিতে সাফল্য লাভ করতে পারে। 

[2] ব্যক্তি কাজটিতে ব্যর্থ হতে পারে।

কোনাে কাজে সাফল্য লাভ করলে, ব্যক্তি পরবর্তী কাজে প্রেষণা লাভ করে। অন্যদিকে কাজে ব্যর্থ হলে, পরবর্তী কাজের প্রতি প্রেষণা বা উৎসাহ কমে যায়। এটিই হল ওয়াইনারের কারণ নির্দেশক তত্ত্বের মূল কথা।

ওয়াইনার এই তত্ত্বটি তিনটি প্রাথমিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে স্থির করেছেন। ধারণা তিনটি হল— 

[1] যেসব আচরণ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তার কারণ জানতে বেশিরভাগ মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করে। 

[2] ব্যক্তি কোনাে কাজে সফল বা বিফল হলে যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা করে সফলতা বা বিফলতার কারণগুলি নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করে। 

[3] ব্যক্তি তার সফলতা বা বিফলতার জন্য যে কারণগুলি চিহ্নিত করে, সেই কারণগুলি ব্যক্তির পরবর্তী আচরণের ক্ষেত্রে অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করে। 

ওয়াইনারের মতে, ব্যক্তির কোনাে কাজে সাফল্য বা ব্যর্থতার পিছনে কারণ হিসেবে চারটি যুক্তির অবতারণা করা হয়৷ যুক্তিগুলি নীচে আলােচনা করা হল— 

[1] ক্ষমতা: ব্যক্তি কোনাে কাজে সফল হলে, ওই কাজের জন্য নিজেকে সক্ষম বলে মনে করে এবং সফলতা তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করে | ফলে সে পরবর্তী কাজে আরও বেশি আগ্রহী হয়। ওয়াইনারের মতে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোনাে বিষয়ে বিফল হলে, শিক্ষক-শিক্ষিকার উচিত, তাদের মধ্য থেকে ভীতি দূর করে, উপযুক্ত নির্দেশনাদানের মাধ্যমে তাদের মধ্যে সাফল্যের মনােভাব জাগিয়ে তােলা। 

[2] প্রচেষ্ট : ওয়াইনারের মতে, কোনাে কাজে সফল হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল প্রচেষ্টা। কোনাে কাজে সফল হওয়ার জন্য কতটা প্রচেষ্টার প্রয়ােজন, তা প্রাথমিক অবস্থায় ব্যক্তির জানা থাকে না। তবে সফলতার জন্য যে প্রচেষ্টার প্রয়ােজন হয়, তা প্রত্যেক সফল ব্যক্তিই উপলদ্ধি করতে পারে। সফলতা ব্যক্তিকে পরবর্তী প্রচেষ্টার প্রেষণা সঞ্চার করে। ওয়াইনারের মতে, ব্যক্তির কোনাে কাজের জন্য প্রচেষ্টার মূল্যায়ন হয় তার সাফল্য বা ব্যর্থতার মাধ্যমে | তাই বলা যায়, সাফল্য বা ব্যর্থতার একটি কারণ হল প্রচেষ্টা। 

[3] কাজের কাঠিন্য: ওয়াইনারের মতে, কাজের কাঠিন্যের সঙ্গে প্রেষণার একটি সম্পর্ক বর্তমান। কোনাে কাজ কঠিন হলে এবং তাতে সাফল্যের সম্ভাবনা কম হলে, ওই কাজে ব্যক্তির প্রেষণা হ্রাস পায়। ওয়াইনারের মতে, শিখনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পাঠক্রম যদি শিক্ষার্থীর সামর্থ্য অনুযায়ী হয়, তাহলে সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং প্রেষণাও সৃষ্টি হয়। 

[4] ভাগ্য : ওয়াইনারের মতে, ব্যক্তির কোনাে কাজের সাফল্য বা ব্যর্থতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভাগ্য। কোনাে কাজের ক্ষেত্রে সামর্থ্য এবং প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও যদি কোনাে ব্যক্তি ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটি ভাগ্যের জন্যই ঘটেছে বলা হয়।

শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়িত্ব হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উপযুক্ত প্রেষণার সার ঘটানাে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই সফলতাকে তার প্রচেষ্টা ও সামর্থ্যের মধ্যে যুক্ত করতে পারে | শিক্ষার্থীরা যেন সফলতা বা ব্যর্থতাকে কেবল ভাগ্যের ওপর ছেড়ে না দেয়, সেই দিকে লক্ষরাখিতে হবে। কেবল ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখনে সক্রিয়তা হ্রাস পাবে তার মধ্যে এই বােধ জাগ্রত করতে হবে, নিস্ক্রিয় ভাগ্য কখনােই কোনাে শিক্ষার্থী বা ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে না। সুতরাং, জীবনে যে-কোনাে ধরনের সাফল্যের জন্য চাই সঠিক প্রচেষ্টা এবং সক্ষমতা।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment