কয়েকজন মনােবিজ্ঞানীর ধারণা বিশ্লেষণ করে শিখনের একটি কার্যকরী সংজ্ঞা দাও। শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা কী? Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
শিখনের কার্যকরী সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনােবিজ্ঞানী শিখনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা এখানে উল্লেখ করা হল—
মনােবিজ্ঞানীর নাম | মনােবিজ্ঞানী প্রদত্ত শিখনের সংজ্ঞা |
মেলভিন এইচ মার্কস (Melvin H Marx) | শিখন হল অপেক্ষাকৃত স্থায়ী আচরণের পরিবর্তন যা পূর্বের আচরণের ফল (যাকে সাধারণত অনুশীলন বলা হয়)। |
এইচ পি স্মিথ (H P Smith) | শিখন হল নতুন আচার-আচরণ, অথবা অভিজ্ঞতার ফলে পুরােনাে আচরণের দৃঢ়ীকরণ বা শিথিলকরণ। |
ম্যাকগিয়ক এবং ইরােভেন (McGeoch and Iroven) | সক্রিয়তা, অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতার ফলে আচরণের পরিবর্তনই হল শিখন৷ |
কিংসলে এবং গ্যারি (Kingsley and Garry) | শিখন হল একপ্রকার প্রক্রিয়া যার দ্বারা আচরণ সৃষ্টি হয়, অথবা অনুশীলন বা প্রশিক্ষণের দ্বারা পরিবর্তিত হয়। |
উপযুক্ত সংজ্ঞাগুলিকে বিশ্লেষণ করে শিখনের একটি কার্যকরী সংজ্ঞা নিরূপণ করা যেতে পারে।
শিখনের কার্যকরী সংজ্ঞা | অতীতের অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের প্রভাবে আচরণের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল শিখন। |
শিখনে প্রেষণার ভূমিকা : ব্যক্তির বা শিক্ষার্থীর শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা জানি, শিখন হল ব্যক্তির আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। শিখন যেহেতু উদ্দেশ্যমুখী আচরণ সম্পাদনের প্রক্রিয়া, তাই সেক্ষেত্রে প্রেষণার প্রয়ােজন। কারণ যে-কোনাে উদ্দেশ্যমুখী কাজের ক্ষেত্রে প্রেষণা অপরিহার্য। শিখন প্রক্রিয়ায় প্রেষণা ঠিক কী ভূমিকা পালন করে, তা এখানে উল্লেখ করা হল—
[1] উদ্যম সৃষ্টি: ব্যক্তির যে-কোনাে কাজের বা আচরণ সম্পাদনের জন্য সবার আগে দরকার উদ্যম। প্রেষণা ব্যক্তির মধ্যে সেই উদ্যম সৃষ্টি করে, ব্যক্তিকে কর্মে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য শক্তি জোগায়। মূল কথা হল, প্রেষণা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ উদ্যমকে জাগ্রত করে।
[2] আচরণের প্রবণতা নির্ধারণ: শিক্ষাথীর আচরণের প্রবণতা নির্ধারণে প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কোনাে শিক্ষার্থীর আচরণ ঠিক কতখানি উদ্দেশ্যমুখী হবে, লক্ষ্যবস্তুগুলির মধ্যে কোন্টির প্রতি অধিক গুরুত্ব থাকবে, কোন্ বিষয়ে কখন, কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত, কোটির ক্ষেত্রে সাড়া না দেওয়াই শ্রেয়—এসবই প্রেষণা স্থির করে দেয়।
[3] যথাযথভাবে কর্মসম্পাদন: প্রেষণার ফলে ব্যক্তি কেবলমাত্র কোনাে কাজে অগ্রসর হয় তাই নয়, বরং কাজটি যাতে সঠিকভাবে সম্পাদন করা যায়, তার জন্য সচেষ্ট হয়। প্রেষণার ব্রুন শিক্ষার্থীরা নিজের চেষ্টাতেই অনেক কিছু শিখে ফেলে এবং জটিল বিষয়কেও আয়ত্ত করার চেষ্টা করে। প্রয়ােজনে শিক্ষক-শিক্ষিকার সাহায্য নিতে দ্বিধা বােধ করে না।
[4] শিখন কৌশলের ওপর প্রভাব বিস্তার ও মনােযােগ বৃদ্ধি : প্রেষণা শিক্ষার্থীর শিখন কৌশলকেও প্রভাবিত করে। তা ছাড়া প্রেষণা শিক্ষার্থীকে পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে কোনাে-একটি বিষয়ে অধিক মনােযােগী করে তােলে | এর ফলে শিক্ষার্থীর কাছে শিখনের কাজ অনেক সহজ হয়। শিক্ষার্থী যেকোনাে পাঠ অর্থপূর্ণভাবে শিখতে সক্ষম হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জন ডিউইর মতে, শিক্ষার প্রতিটি অভিজ্ঞতা যাতে শিক্ষার্থীর কাছে অর্থপূর্ণ হয়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকার অন্যতম কর্তব্য।
[5] আচরণের গতিপথ নির্ণয় : প্রেষণার অপর একটি ভূমিকা হল শিক্ষার্থীদের আচরণের গতিপথ নির্ণয় করা। শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছােতে হলে শুধুমাত্র আচরণ সম্পাদনই নয়, সেই আচরণকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছােনাে যায় এবং প্রেষণার পরিতৃপ্তি ঘটে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।