অন্তর্দৃষ্টি কাকে বলে? অন্তদৃষ্টিমূলক শিখনের মৌলিক প্রক্রিয়া দুটি লেখাে। অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন সম্পর্কিত কোহলার-এর শিম্পাঞ্জির পরীক্ষা বর্ণনা করাে।

অন্তর্দৃষ্টি কাকে বলে? অন্তদৃষ্টিমূলক শিখনের মৌলিক প্রক্রিয়া দুটি লেখাে। অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন সম্পর্কিত কোহলার-এর শিম্পাঞ্জির পরীক্ষা বর্ণনা করাে। অথবা, অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন বলতে কী বােঝ? অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন সম্পর্কিত কোহলার-এর শিম্পাঞ্জির পরীক্ষাটি বর্ণনা করাে Class 12 | Education (শিক্ষার কৌশল) | 8 Marks

উত্তর:

অন্তদৃষ্টি

ওয়ারদাইমার (Wertheimer), কুর্ট কফকা (Kurt Koffka) ও উল্ফগ্যাং কোলার (Wolfgang Kohler) প্রমুখ সমগ্রতাবাদী শিখনের কৌশলরূপে অন্তর্দৃষ্টি কৌশলের কথা বলেন। এঁদের মধ্যে কোহলার শিম্পাঞ্জির ওপরে এবং ওয়ারদাইমার মানুষের শিখনের ওপর পরীক্ষা করে মন্তব্য করেন যে, প্রাণীরা বসময় প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শেখে না৷ সমস্যামূলক পরিস্থিতির সামগ্রিক রূপ উপলদ্ধি হওয়ার পরে প্রাণীর সমস্যার সমাধান করে। এটা হঠাৎ ঘটে, এর জন্য প্রচেষ্টা ও ভুলের প্রয়ােজন হয় না একে অন্তদৃষ্টি বলে | অন্তর্দৃষ্টির মূল কথা, সমস্যামূলক পরিস্থিতিকে আমরা সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষ করি ও প্রতিক্রিয়া করি | সামগ্রিক প্রত্যক্ষণের ফলেই পরিস্থিতির অর্থ পরিষ্কার হয়। 

অন্তর্দষ্টিমূলক শিখনের মৌলিক প্রক্রিয়া

সমগ্রতাবাদীগণ অন্তর্দৃষ্টি জাগ্রত হওয়ার জন্য দুটি মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। এই দুটি প্রক্রিয়া হল—.i) সামান্যীকরণ ও ii). পৃথক্‌করণ | শিখন পরিস্থিতির মধ্যে যেগুলি অপ্রাসঙ্গিক সেগুলিকে বাতিল করে কেবলমাত্র প্রাসঙ্গিক ও সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলিকে বেছে নেওয়ার নামই হল পৃথক্‌করণ এবং পরে ওই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর ভিত্তি করে সামান্যধর্মী সূত্র তৈরি করার নামই হল সামান্যীকরণ। 

কোহলার -এর শিম্পাঞ্জির পরীক্ষা

 অন্তদৃষ্টিমূলক শিখনের ক্ষেত্রে মনােবিজ্ঞানীউলফগ্যাং কোহলারের শিম্পাঞ্জির। পরীক্ষাটি বিশেষ উল্লেখযােগ্য | কোহলার 1913 থেকে 1917 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। কয়েকটি শিম্পাঞ্জিকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করেন। 

[1] প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা: পরীক্ষার জন্য প্রথমে একটি শিম্পাঞ্জিকে একটি বড়াে খাচার মধ্যে রাখা হয়। খাচার ওপর থেকে একছড়া কলা। এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যা সাধারণ অবস্থায় শিম্পাঞ্জির নাগালের বাইরে থাকে। খাঁচার মধ্যে কাঠের তৈরি দু-তিনটি প্যাকিং বাক্সও রাখা হয়। খিদে পেলে শিম্পাঞ্জিটি কলার ছড়াটি পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার লাফ দেয়, কিন্তু বারে বারে ব্যর্থ হয়। ফলে সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসে থাকে। এই অবস্থায়  কোহলার নিজে খাঁচার মধ্যে ঢােকেন এবং একটি প্যাকিং বাবা। টেনে এনে কলার ছড়াটি যেখানে ঝােলানাে আছে, তার নীচে রাখেন। পরে ওই বাক্সটির ওপর দাঁড়িয়ে কলার ছড়াটি হাত দিয়ে স্পর্শ করেন| পরে। বাক্সটি যথাস্থানে রেখে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসেন| কোলার খাচা থেকে। বেরিয়ে আসার পরক্ষণে শিম্পাঞ্জিটি কোলারের মতােই প্যাকিং বাক্স টেনে এনে তার ওপর দাড়িয়ে কলার ছড়াটি পেড়ে নেয়।

         কোহলার তার এই পরীক্ষাটি করার সময় অন্য শিম্পাঞ্জিগুলিকে খাচার। বাইরে রেখে, এই পর্যায়গুলি দেখানাের ব্যবস্থা করেন। পরপর কয়েকদিন। ধরে, পর্যায়ক্রমে একটি করে শিম্পাঞ্জিকে এইভাবে খাচার ভেতরে ঢুকিয়ে। দিয়ে পরীক্ষা করতে থাকেন। দেখা যায়, ওই শিম্পাঞ্জিগুলি কোনাে প্রকার ইঙ্গিত ছাড়াই নিজেরা কলার ছড়া পেড়ে নিতে পারে। অর্থাৎ, নিজেরাই সমস্যার সমাধান করতে পারে।

        এরপর কোহলার একদিন তুলনামূলকভাবে বােকা একটি শিম্পাঞ্জিকে খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে দেন এবং যথাস্থানে কলার ছড়া রাখেন। ওই শিম্পাঞ্জিটি দীর্ঘদিন তার সঙ্গীদের কলার ছড়া পেড়ে নেওয়ার ঘটনা দেখেছে | কিন্তু তা সত্ত্বেও শিম্পাঞ্জিটি কিছুই শিখতে পারেনি। প্যাকিং বাক্স। টেনে না নিয়ে, কেবল লাফ দিয়ে সে ছড়াটি নেওয়ার চেষ্টা করে।

[2] দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা ; কোহলার ‘সুলতান’ নামে একটি বুদ্ধিমান শিম্পাঞ্জিকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। এই পরীক্ষার জন্য সুলতানকে (শিম্পাঞ্জি) একটি বড়াে খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে তার সামনে দুটি বাঁশের লাঠি রাখেন। লাঠি দুটি এমনভাবে তৈরি করা যে, একটি লাঠির প্রান্ত, অপর লাঠির প্রান্তের গর্তে চকিয়ে সেটিকে বেশ লম্বা একটি লাঠিতে পরিণত করা যায়। কলার ছড়া বা কোনাে খাদ্যবস্তুকে খাঁচা থেকে এমন দূরত্বে রাখা হয়, যাতে হাত দিয়ে বা ছােটো লাঠি দুটির যে-কোনাে একটির সাহায্যে তাকে টেনে নেওয়া কোনােমতেই সম্ভব নয়। সুলতান প্রথমে খাঁচার ভেতর থেকে বাইরে হাত বাড়িয়ে কলার ছড়াটি নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু নাগালের বাইরে থাকায়, তা সম্ভব হল না। এবার বাঁশের লাঠি দুটির মধ্যে থেকে একটি নিয়ে, সেটির সাহায্যে সে কলার ছড়াটি পাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তাতেও কলার ছড়ার নাগাল পাওয়া গেল না। ফলে সুলতান কলার ছড়াটি পাওয়ার আশা ছেড়ে | দিয়ে হতাশ হয়ে বসে থাকল। কিছুক্ষণ পরে সুলতান বাঁশের লাঠি নিয়ে। খেলতে খেলতে হঠাৎ একটি লাঠির প্রান্তে অন্য লাঠির প্রান্তটিকে ঢুকিয়ে একটি লম্বা লাঠিতে পরিণত করল। এবার সুলতান দীর্ঘ ওই লাঠির সাহায্যে কলার ছড়াটি টেনে নিতে পারল৷

      উপরােক্ত পরীক্ষা থেকে কোহলার এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ‘সুলতান’ অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে সমর্থ হয়েছে। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সামগ্রিক রূপটির হঠাৎ উপলদ্ধিই অন্তদৃষ্টি| কোলারের মতে, শুধুমাত্র অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমেই শিখন ঘটে, প্রচেষ্টা ও ভুল সংশােধনের মাধ্যমে নয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment