সাধারণ বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ/বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে। কমিশন কেন বিদ্যালয়গুচ্ছ স্থাপনের সুপারিশ করে? 

কমিশন কী উদ্দেশ্যে সাধারণ বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে? এ ধরনের বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে। কমিশন কেন বিদ্যালয়গুচ্ছ স্থাপনের সুপারিশ করে? 

উত্তর:-

সাধারণ বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্য

জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সমাজের সকল অংশ যাতে শিক্ষায় সমসুযােগ পায়, তারই জন্য কমিশন সাধারণ বিদ্যালয়ের (common school) সুপারিশ করে। 

সাধারণ বিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্যাবলি 

এই বিদ্যালয়গুলির বৈশিষ্ট্য হল— 

[1] জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক মর্যাদা নির্বিশেষে সকলে বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার সুযােগ পাবে। 

[2] সাধারণ বিদ্যালয় ব্যবস্থায় উন্নত মানের শিক্ষা মেধাভিত্তিক হবে, অর্থ, ধর্ম বা সম্প্রদায় ভিত্তিক নয়। 

[3] শিক্ষার উপযুক্ত মান সাধারণ বিদ্যালয়ে রক্ষিত হবে এবং শিক্ষা হবে অবৈতনিক। 

[4] এই ধরনের বিদ্যালয়ে অধিকাংশ অভিভাবকের মতামতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। 

[5] সাধারণ বিদ্যালয়ের সুযােগসুবিধা এমন হওয়া প্রয়ােজন যাতে অভিভাবকগণ ব্যয়বহূল বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রেরণ করার প্রয়ােজন আছে বলে মনে করবেন না। 

বিদ্যালয়গুচ্ছ তৈরির উদ্দেশ্য কোঠারি কমিশনের সুপারিশে বিদ্যালয়গুচ্ছের কথা বলা হয়। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, কাছাকাছি তিন অথবা চারটি উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয় এবং 10-20টি নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয় একসঙ্গে করে স্কুল জোট বা বিদ্যালয়গুচ্ছ তৈরি করা হবে। 

বিদ্যালয় জোটের উদ্দেশ্য হল— 

[1] সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করা: বিদ্যালয়গুলির মধ্যে বিচ্ছিন্ন মনােভাব দূর করা এবং সহযােগিতার মনােভাব গড়ে তােলাই বিদ্যালয় জোটের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য।

[2] মূল্যায়নের সঠিক পদ্ধতি: আলােচনার মাধ্যমে মূল্যায়নের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং বিদ্যালয়গুলিতে তার প্রয়ােগ পদ্ধতি নিরুপণ করা। 

[3] শিক্ষকের মান: অপেক্ষাকৃত কম যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের উপযুক্ত যােগ্যতা অর্জনে সাহায্য করবে বিদ্যালয়গুচ্ছ। 

[4] বিদ্যালয়ের উন্নতিসাধন: প্রতিটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক শিক্ষা-সংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে জোট অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলির প্রধান শিক্ষকগণ আলােচনার মাধ্যমে করণীয়গুলি স্থির করবেন। তারা একত্রে বিদ্যালয়ের উন্নতিবিধানে চিন্তাভাবনা করবেন। 

[5] শিক্ষকের অভাবপুরণ: বিদ্যালয়গুচ্ছ তৈরি করে দু-একজন অতিরিক্ত (রিজার্ভ) শিক্ষকের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাঁরা প্রয়ােজনমতাে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অস্থায়ী অনুপস্থিতিতে সাহায্য করতে পারেন। 

[6] পাঠ্যপুস্তকের মূল্যায়ন: বিদ্যালয়গুচ্ছ নতুন পাঠ্যপুস্তকের মূল্যায়ন করবে এবং বিভিন্ন শিক্ষাসহায়ক ব্যবস্থা গড়ে তােলার জন্য পাঠক্রম পরিবর্তনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে প্রয়ােজনমতাে পরামর্শ দেবে। 

[7] বিদ্যালয় পরিদর্শন: উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহ-শিক্ষক প্রতি মাসে অন্তত একবার নিকটবর্তী বিদ্যালয়গুলি পরিদর্শন করবেন। একইভাবে উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন ও প্রয়ােজনীয় পরামর্শ দেবেন। 

[8] ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার: প্রতি গুচ্ছের শিক্ষকদের জন্য ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার থাকবে। মাঝে মাঝে গুচ্ছের শিক্ষকদের আলােচনা সভা ও শিক্ষকতাকালীন শিক্ষা দ্বারা শিক্ষামানের উন্নতি করা সম্ভব হবে।

বিদ্যালয় জোটের পরিকল্পনা 

কোঠারি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ এর মাধ্যমে নিকটবর্তী বিভিন্ন নিম্নপ্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় সহযােগিতার মনােভাব গড়ে তােলার উদ্দেশ্যে এবং শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই ধরনের সুপারিশ কার্যকর করলে নিঃসন্দেহে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসা সম্ভবপর হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment