তপশিলি জাতি (SC) এবং তপশিলি উপজাতি (ST)-র শিক্ষার উন্নয়নে কোঠারি কমিশন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র অভিমত কী ছিল? 4+4 Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
SC, ST র শিক্ষার উন্নয়নে কোঠারি কমিশনের বক্তব্য : স্বাধীন ভারতীয় সংবিধানে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতির শিক্ষা-সহ অন্যান্য সুযােগ ও অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতে এই সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ও এদের অন্যান্য সুযােগসুবিধা দানকে রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এদের উন্নতিকল্পে অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার চাপ ও দারিদ্র্যের কারণে এই সম্প্রদায়ের শিক্ষা-সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোঠারি কমিশন (1664-66) এবং জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে এদের শিক্ষা প্রসারের বিষয়ে গুরুত্বদানের কথা বলা হয়েছে | নীচে কোঠারি কমিশন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) র সুপারিশগুলি উল্লেখ করা হল—
[1] সুযােগবৃদ্ধি: SC, ST সম্প্রদায়ভুক্ত ছেলেমেয়েরা বর্তমানে যে ধরনের সুযােগসুবিধা ভােগ করছে তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
[2] যাযাবর ও অর্ধ যাযাবরদের শিক্ষা : কমিশনের মতে যাযাবর ও অর্ধ যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য শিক্ষার সুযােগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে ৷
[3] আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন: দেশের জনবিরল স্থান বা অঞ্চলগুলিতে অধিক সংখ্যায় আশ্রম বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে।
[4] উচ্চপ্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার : SC, ST সম্প্রদায়ভুক্ত ছেলেমেয়েদের জন্য উচ্চপ্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
[5] আবাসন ও কোচিংয়ের ব্যবস্থা : SC, ST সম্প্রদায়ভুক্ত ছেলেমেয়েদের জন্য হােস্টেল বা আবাসন এবং বিশেষ কোচিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে |
[6] উপজাতি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন : উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানাের উদ্দেশ্যে তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষোপকরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
[7] স্কলারশিপের ব্যবস্থা : উপজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ স্কলারশিপ হিসেবে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
[8] উপজাতি সংগঠন তৈরি : উপজাতি সম্প্রদায়ের সেবার উদ্দেশ্যে একটি সংগঠন তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। শুরুতে ওই সংগঠনে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, পরবর্তীকালে কেবল উপজাতি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সংগঠন চালানাের ব্যবস্থা করতে হবে।
SC, ST-র শিক্ষার উন্নয়নে জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP-1986)-র বক্তব্য : আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিপীড়িত SC, ST সম্প্রদায়ের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা না করলে একদিকে যেমন জাতীয় সংহতি বিপন্ন হবে, তেমনই অন্য দিকে দেশ সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়বে। এই বিষয়টি অনুধাবন করে, জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে SC এবং ST সম্প্রদায়ের জন্য কতকগুলি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। নীচে সেগুলি উল্লেখ করা হল—
তপশিলি জাতির শিক্ষাপ্রসঙ্গে :
[1] পরিবারকে উৎসাহদান: 14 বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত ছেলেমেয়ে যাতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়, তারজন্য পরিবারগুলিকে উৎসাহদানের ব্যবস্থা করা।
[2] বৃত্তিদানের ব্যবস্থা : সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণির ছেলেমেয়েদের পঠনপাঠনের জন্য বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা।
[3] বিদ্যালয়নির্মাণ : তপশিলি সম্প্রদায়ের সুবিধামতাে স্থানে বিদ্যালয়নির্মাণের ব্যবস্থা করা।
[4] শিক্ষার্থীদের জন্য হােস্টেলনিৰ্মাণ : তপশিলি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিকটে হােস্টেলনির্মাণের ব্যবস্থা করা।
[5] তপশিলি শিক্ষক নিয়ােগ : তপশিলি বিদ্যালয়ে তপশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষিত ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়ােগের ব্যবস্থা করা।
তপশিলি উপজাতিদের শিক্ষাপ্রসঙ্গে :
[1] অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিদ্যালয় স্থাপন: তপশিলি উপজাতিঅধ্যুষিত অঞ্চলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[2] উপজাতি ভাষায় শিক্ষাপকরণ তৈরি : প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ভাষায় শিক্ষাপকরণ তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাগ্রহণে যাতে অসুবিধা না হয়, তারজন্যও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। .
[3] উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষক নিয়ােগ : উপজাতি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষিত উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষকে শিক্ষক হিসেবে নিয়ােগ করতে হবে l তারা যাতে ওই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়, তারজন্য তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।
[4] আবাসিক ও আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন : উপযুক্ত সংখ্যক আবাসিক বিদ্যালয় ও আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[5] শিশু অঙ্গন, প্রথাবহির্ভুত শিক্ষাকেন্দ্র ও বয়স্ক শিক্ষা-কেন্দ্র স্থাপন : উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রসারের জন্য উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শিশু অঙ্গন, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাকেন্দ্র ও বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[6] পেশাগত শিক্ষায় বৃত্তিদান: তপশিলি সম্প্রদায়ের বিশেষ-প্রকার প্রয়ােজন ও জীবনচর্চার প্রতি নজর দিয়ে উচ্চতর পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।