বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সভাপতি কে ছিলেন? ওই কমিশনের রিপাের্টটি কত খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছে পেশ করা হয়? ওই কমিশন উচ্চশিক্ষার যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা আলােচনা করাে। অথবা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন 1948-49 খ্রিস্টাব্দে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে যে সুপারিশ করে, সেগুলি আলােচনা করাে। Class 12 | Education | 8 Marks
উত্তর:
কমিশনের সভাপতি
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশনের সভাপতি ছিলেন ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ।
কমিশনের রিপোর্ট
পেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন 1949 খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছে তাদের রিপাের্টটি পেশ করে।
উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে কমিশনের অভিমত
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেগুলি হল—
[1] বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় গড়ে তােলার দায়িত্বগ্রহণ : বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সমাজের নানান ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের উপযুক্ত ব্যক্তিদের গড়ে তােলার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। দেশকে অগ্রগতির পথে পরিচালিত করতে হলে প্রয়ােজন উপযুক্ত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের আলাের দিশারি এই সকল বুদ্ধিজীবীদের গড়ে তােলার দায়িত্ব নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।
[2] জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা : শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষার্থী জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির যােগ্য ধারক ও বাহক হয়ে উঠতে পারে!
[3] জগৎ ও মানবৰ্জীবন সম্পর্কে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তােলার শিক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে শিক্ষার্থীদের সামনে সমগ্র জগৎ এবং মানবজীবন সম্পর্কে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তােলার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মন থেকে অবিশ্বাস এবং উদ্দেশ্যহীনতা দূর করে তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
[4] গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপযােগী শিক্ষার ব্যবস্থা: গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য হল ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব। এই বিষয়গুলি মনে রেখে সকলে যাতে শিক্ষার সমান সুযােগ লাভ করে, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ হাতে বাধানভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং অনুন্নত শ্রেণির পক্ষাখাদের চাহিদা যাতে পূর্ণ হয়, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওপর সরকারি। কর্তৃত্ব ফলানাের প্রবণতা দূর হয়ে যাতে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়—সেবিষয়েও সচেষ্ট হতে হবে।
[5] মানবিক গুণাবলির বিকাশসাধনের শিক্ষা : উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন করা। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মানববিদ্যা চর্চার জন্য এমন ধরনের পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবােধের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।
[6] মানবসভ্যতা সম্পর্কে ধারণা গঠনের শিক্ষা : উচ্চশিক্ষার অপর কর্টি লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবসভ্যতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে তােলা। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এমন ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা মানবসভ্যতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।
[7] মানব চরিত্রের উন্নতিবিধানের শিক্ষা ; যে-কোনাে শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল চরিত্র গঠন | শিক্ষার্থীরা যাতে চারিত্রিক উন্নতির জন্য বিশ্বসাহিত্যে লিপিবদ্ধ মানব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযােগ পায়, তাদের মধ্যে যাতে নৈতিক মূল্যবােধ গড়ে ওঠে এবং তারা যাতে মনুষ্যত্ব ও ন্যায়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে
[8] জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিক বােধের শিক্ষা : উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য হবে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে, মহাবিদ্যালয়- বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঐক্যবােধ গড়ে তােলা প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে আবাসিক বিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে ছাত্রশিক্ষকের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে| এই সৌভ্রাতৃত্ববােধ জাতীয় সংহতি থেকে বিশ্বভ্রাতৃত্ববােধ আন্তর্জাতিকতা বােধের বিকাশ ঘটবে| এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
[9] বিজ্ঞান, কারিগরিবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার প্রসার ঘটানাের শিক্ষা : বিজ্ঞান, কারিগরিবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার প্রসার ঘটানাের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে উপযুক্ত পরিকাঠামাে গড়ে তুলতে হবে। বিজ্ঞান ও কারিগরিবিদ্যার কল্যাণে মানুষের জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন ঘটবে। গ্রামীণ উন্নতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কৃষিবিদ্যা চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য চিকিৎসাবিদ্যার প্রসার ঘটাতে হবে।
[10] প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবশক্তির প্রকৃত সদ্ব্যবহারের শিক্ষা : ভারত প্রাকৃতিক সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধিশালী দেশ এবং ভারতবাসীদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্দীপনা ও কর্মশক্তি রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এমনভাবে শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবশক্তির প্রকৃত সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।